Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

সব বাবা থাকুক পরম যত্নে

ইমরান হুসাইন

জুন ১৯, ২০২১, ০৬:২৫ পিএম


সব বাবা থাকুক পরম যত্নে

বটবৃক্ষের ছায়ার মতো জন্ম থেকে অবিরাম ধারায় পরম যত্নে যিনি লালন-পালন করে থাকেন, তিনি বাবা। একটা সন্তানের ভরসা, ছায়া এবং নির্ভরশীলতার প্রতীক তার বাবা। একজন বাবা তার সন্তানের ভালোর জন্য জীবনের প্রায় সবকিছুই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করতে সদা প্রস্তুত থাকে। অন্যদিকে একজন সন্তানের আদর-শাসন আর বিশ্বস্ততার জায়গা হলো তার বাবা। বাবার মাধ্যমেই সন্তানের জীবনের শুরু। একজন সন্তান তার বাবার ঋণ কখনো শোধ তো দূরের কথা পরিমাপও করতে পারে না। আর তাই সেই মহান বাবার প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা জানাতে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব বাবা দিবস।

সব জায়গাতে ভালোবাসার প্রথম স্থান দখল করে আছেন মমতাময়ী মা। আর মায়ের পরবর্তী স্থান বাবার। কিন্তু বাবাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা, বাবার ভালোবাসা পাওয়ার ইচ্ছা সব সময়ই প্রতিটা সন্তানের একটু বেশিই। কেননা মাকে আমরা সব সময়ই কাছে পাই কিন্তু বাবা ব্যস্ততার কারণে সারাক্ষণ বাইরেই থাকে পরিবারকে হাসিখুশি রাখতে, পরিবারকে সুখে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে।

সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে শক্ত তালু ও চোপশানো চোয়ালে বাসায় ফেরে সন্তানের জন্য এক চিলতে হাসিমুখ নিয়ে। প্রতিটি সন্তানের কাছে বাবার এই হাসিটা ও বাবার মুখে খোকা-খুকী ডাকটা অতি প্রিয়। সকল দুঃখ-কষ্ট, সকল প্রকার বিষাদ নিমিষেই দূর হয়ে যায়। সকল সন্তানই তার বাবার ভালোবাসা-স্নেহ প্রত্যাশা করে। বাবা গরিব হোক বা ধনী সন্তান তার বাবাকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। আর তার বাবার থেকে ভালোবাসা চাই।

আজ বিশ্ব বাবা দিবস। জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বের প্রায় ৮৭টি দেশে বাবা দিবস পালিত হয়। জুন মাসের তৃতীয় রোববার হিসেবে এ বছর  ২০ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব বাবা দিবস। সন্তানের কাছে বাবা তো প্রতিদিনই সমান, তবুও কেন এই দিবস। উত্তরে বলা যায়, লম্বা ইতিহাস। কিন্তু সহজভাবে বললে, মা দিবসের মতো এখন পৃথিবীর মানুষ বছরের একটা দিন বাবার জন্য রেখে দিতে চায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত শতকের প্রথম দশক থেকেই শুরু হয় বাবা দিবসের প্রচলন। ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, ১৯১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সনোরা স্মার্ট ডোড নামের এক তরুণীর মাথায় আসে বাবা দিবসের বিষয়টি। ১৯১৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পিতা দিবসে সরকারি ছুটি ঘোষণার বিল উত্থাপন করা হয়। ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেন।

বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ৮৭টি দেশ বাবা দিবস পালন করে। তারমধ্যে জুন মাসের তৃতীয় রোববারে দিবসটি পালিত হয় ৫২টি দেশে। এর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, অ্যান্টিগুয়া, বাহামা, বুলগেরিয়া, পাকিস্তান, কানাডা, চিলি, চেক প্রজাতন্ত্র, ফ্রান্স, জাপান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলংকা, সুইজারল্যান্ড, তুরস্ক, ইংল্যান্ড, আমেরিকা, ভেনেজুয়েলা ও জিম্বাবুয়ে অন্যতম। এছাড়া ইরানে বাবা দিবস পালিত হয় ১৪ মার্চ। লিবিয়া, ইতালি, হন্ডুরাস, পর্তুগাল ও স্পেনে ১৯ মার্চ, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৮ মে, ডেনমার্কে ৫ জুন, নিকারাগুয়া, পোল্যান্ড ও উগান্ডা ২৩ জুন এবং জুন মাসের প্রথম রোববার লিথুনিয়ায় বাবা দিবস পালিত হয়।

কিন্তু বাবাদের জন্য ভালোবাসা প্রকাশ করার এই নির্দিষ্ট দিন ছাড়া কি অন্যদিন গুলোতেও বাবারা ভালোবাসা পাচ্ছেন? বাবারা কি তাদের সন্তানদের থেকে আদর যত্ন পাচ্ছেন, না তারা অবহেলিত? এমন প্রশ্ন থেকেই যায়। সব থেকে বেদনাদায়ক বিষয় হলো, বিশ্ব বাবা দিবস ঘোষণার ১০০ বছর পরও আজকে বাবারা অবহেলিত, নির্যাতিত ও  নিপীড়নের শিকার। যেই বাবার থাকার কথা পরম যত্নে, সন্তান ও নাতি-পুতিদের সাথে হাসিখুশির সাথে কিন্তু সেই বাবার স্থান আজ রাস্তার ফুটপাতে কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে। আমাদের সমাজে এমন অনেক বাবা আছেন যারা বৃদ্ধ বয়েসে এসে নির্যাতনের শিকার। মনের মাঝে প্রশ্ন থেকেই যায় যে, আজ বাবারা যদি পরম যত্নে থাকতো তাহলে বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে কেন এত চাপ। কেন দিনের পর দিন দেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে? উত্তরে একটা কথায় আসে বাবার প্রতি সন্তানের অবহেলা।

একটা কথা সকল সন্তানকেই মনের ভেতর থেকে অনুভব করতে হবে আর সেটা হলো আমরা এখন যে মুখে বা যে ভাষায় বাবাকে বকা দিই বা তাদের সাথে খারাপ আচারণ করি এই ভাষা ওই বাবারই সৃষ্টি, বাবার থেকেই শেখা। আধো আধো করে কথা বলা শেখা ওই বাবার থেকেই।নিজে হাতে যখন খেতে পারতাম না ওই বাবাই তার নিজ হাতে পরম যত্নে খাওয়ায়ে দিতো তাহলে আজ কেন আমরা তাদের সেই অবদান ভুলে যাই। আজ কেন তাদের রাস্তার ফুটপাতে কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হয়?

জন্ম থেকে শুরু করে স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত যেই পিতা আমাদের সকল কিছুর জোগান দিয়ে থাকে, সকল বাধা বিপত্তিসহ নানা রকম ত্যাগ স্বীকার করে আমাদের বড় করে তোলে আর বড় হয়ে আমরা কেন সেই বাবাকে ভুলে যাই? পিতার প্রতি সকল সন্তানকে হতে হবে সহানুভূতিশীল ও কর্তব্যপরায়ণ। একজন পিতার প্রতি তার সন্তানের দায়িত্বের কোনো শেষ নেই। আর তাই প্রতিটা ধর্মেই বাবাকে শ্রদ্ধা করার কথা, বাবাকে ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে। কারণ তিনিই জন্মদাতা, তিনি সকল কিছুর উর্ধ্বে। পবিত্র কুরআন শরিফে বলা হয়েছে! ‘তুমি এমন কোনো আচার-আচরণ করো না যাতে পিতা-মাতা কষ্ট পেয়ে উহ্ শব্দটুকু করে। অন্যদিকে পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহী পরমং তপঃ, পিতারী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা’- সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই মন্ত্র জপে বাবাকে স্বর্গজ্ঞান করে শ্রদ্ধা করেন। আর তাই আজ বিশ্ব বাবা দিবসে সকল সন্তানের একটাই চাওয়া সুখে থাক পৃথিবীর সকল বাবা। বিশ্বের প্রতিটি সন্তান হয়ে উঠুক তার বাবার প্রতি দায়িত্বশীল। বাবারা থাকুক পরম যত্নে।

লেখক : শিক্ষার্থী বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আমারসংবাদ/জেআই