Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ছাত্রীনিবাস নির্মাণে অনিয়ম!

জুন ১৯, ২০২১, ০৬:২৫ পিএম


ছাত্রীনিবাস নির্মাণে অনিয়ম!
  • নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
  • পরিস্থিতি জানেন না ঠিকাদার খোঁজ নেই প্রকৌশলীর
  • শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ সরকারের হস্তক্ষেপ দাবি

নান্দনিক ১০ তলা ভবনের দিকে তাকালে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে। সাজানো-গোছানোভাবেই চলছে নির্মাণকাজ। কিন্তু ভেতরে দৃশ্যপট ভিন্ন। একটু কাছে গিয়ে প্রতিবেদক যখন প্রায় নির্মাণকাজ শেষ হওয়া ভবনের টাইলসে হাত বোলালেন, অমনি ধপাস করে ফ্লোরে পড়ে গেলো চকচকে টাইলস। এমন চিত্র আরও আছে। রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের মেয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে নির্মিত হচ্ছে ১০ তলাবিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই ভবনের বেশির ভাগ কাজই শেষ পর্যায়ে। তবে ভবন নির্মাণে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সরেজমিন অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।

নির্মাণাধীন ভবন ঘুরে দেখা যায়, ১০ তলা ভবনের চার ও পাঁচতলায় দেয়ালে সজ্জিত টাইলস খসে পড়ে যাচ্ছে মেঝেতে। ফাটল ধরা শুরু করেছে দেয়ালের আস্তরণে। অনেক জায়গায় আস্তরণও পড়ে যাচ্ছে। টাইলসগুলো খুবই নিম্নমানের। ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে পড়ে আস্তরণ থেকে খসে মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে টাইলস। প্রায় ডজনখানেক কক্ষের দরজায় ফাটল দেখা দিয়েছে। নিম্নমানের কাঠের দরজা লাগানোর ফলে কয়েক মাসের মাথায় চিড় ধরা পড়ছে। এছাড়া ময়লা ও পানি নিষ্কাশনের পাইপ ভেঙে ভবনের ঠিক নিচেই দেয়ালের সঙ্গে ঝুলে আছে। কাজ চলছে কচ্ছপ গতিতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সবশেষ ভবনের পাঁচ তলা থেকে ১০ তলার নির্মাণে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দে কাজটি পেয়েছে রিফাত এন্টারপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের মিজানুর রহমান ঠিকাদারির দায়িত্বে আছেন। তিনি দৈনিক আমার সংবাদকে জানান, ভবনের সব শেষ কাজ চলছে ভার্টিকালি। টাইলস খসে পড়ার বিষয়টি তিনি জানেন না বলে দাবি করেন। তবে কর্মচারী দিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে এ প্রতিবেদককে আশ্বাস দিয়ে ঠিকাদার আরও বলেন, নির্মাণকাজ শেষে হওয়ার পর যদি এমন কোনো কিছু হয়ে থাকে, সেটার দায়ভার আমার। এখন যেহেতু পুরো কাজ শেষ হয়নি, তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।

ছাত্রীনিবাস তৈরিতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অবহেলায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, নতুন ছাত্রীনিবাস উদ্বোধনের আগেই এমন অসঙ্গতির দৃশ্য হতাশা ও দুঃখজনক। জানতে চাইলে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী হাসানুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, নতুন ছাত্রীনিবাস তৈরি শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তা বর্তমান সরকার পূর্ণতা দিয়েছেন। কিন্তু ভবন তৈরিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বহুল প্রত্যাশিত ছাত্রীনিবাস অল্পকিছু দিনের মধ্যেই মুখথুবড়ে পড়বে। তাই এই সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারের  এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললে শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদ করবে বলে জানান তিনি। নির্মাণাধীন ভবনের এমন অসঙ্গতি সর্ম্পকে তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আশরাফ হোসেন দৈনিক আমার সংবাদকে বলেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছি। এখনো ছাত্রীনিবাসের ভবন আমাদের হাতে বুঝে পাইনি। কাজও শেষ হয়নি। আমাদের হাতে বুঝিয়ে দেয়ার পর যদি কোনো সমস্যা পাই, নিশ্চয়ই বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবহিত করবো। তিনি বলেন, টাইলস খসে পড়ে যাওয়া, ভবনে ফাটলের বিষয়টি নিয়ে আমরা ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে আলোচনা করবো। তবে এই সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে দায়িত্বরত প্রকৌশলী আকতার জামানের সঙ্গে দুদিন চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। উল্লেখ্য, বছর দেড়েক আগেও তিতুমীর কলেজের নির্মাণাধীন একাডেমিক ভবনের দুই তলায় ফাটল ধরা পড়ে।

আমারসংবাদ/জেআই