Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

কমবে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ

জুন ২০, ২০২১, ০৬:৪৫ পিএম


কমবে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ
  • করোনার বিধিনিষেধ মানছেন না বিচারপ্রার্থীরা
  • আদালত প্রাঙ্গণে চাপ বেড়েছে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের
  • ৪৬ দিনে ভার্চুয়ালি জামিন ৬৯ হাজার ৬৫৫ জনের

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সংক্রমণ রোধে জরুরি লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। পরিস্থিতি নিম্নমুখী না হওয়ায় কয়েক দফা বাড়ানো হয় চলমান বিধিনিষেধ। সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো থমকে যায় বিচার বিভাগও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে ভার্চুয়াল আদালত চালু করা হয়। ভার্চুয়াল আদালতে গত ৪৬ কার্যদিবসে সারা দেশে নিম্ন আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে ৬৯ হাজার ৬৫৫ জন আসামি জামিন পেয়েছেন। জামিন হয়েছে এক হাজার ১৬০ শিশুর। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকল আদালত খুলে দেয়ার দাবিতে সারা দেশে আইনজীবীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন করেন। তাই আইনজীবীদের গণদাবি মাথায় নিয়ে ও বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে দীর্ঘদিন পর গতকাল থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে নিম্ন আদালতের বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ফলে স্বস্তি ফিরেছে মামলার চাপে আটকেপড়া বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের।

দীর্ঘদিন পর নিয়মিত আদালত চালু হওয়ায় ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের চাপ বেড়েছে। চাপ বেড়েছে বিচারক, পেশকার, সেরেস্তাদাদেরও। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আদালতে আসছেন আইনজীবীরা। কিন্তু বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে তেমন করোনার বিধিনিষেধ মানার প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়নি। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে হকারদের আনাগোনা দেখা গেছে। আদালতে আগতরা জটলা পাকিয়ে আছে ভ্রাম্যমাণ চা দোকানের সামনেও। তবে বেশ কড়াকড়ি লক্ষ্য করা গেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে। আইনজীবীদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে দেখা গেছে। আরোপ করা হয়েছে বাড়তি কড়াকড়িও। এদিকে বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতি কম থাকলেও আইনজীবীরা বসছেন নিজ নিজ চেম্বারে। হাইকোর্ট বিভাগের সকল বেঞ্চ ভার্চুয়ালি খুলে দেয়ায় আইনজীবীদের কেউ কেউ আবার বাসায় থেকে যুক্ত হচ্ছেন বিচারকাজে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল আমার সংবাদকে বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই আমরা আদালত খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। সময় নিলেও যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্বাভাবিক আদালত খুলে দিয়েছে তাই সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ বর্তমান অবস্থায়ও মোটামুটি সুরক্ষা নিয়ে যাতে আদালতের কার্যক্রম চালু রাখা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। পেশাগত কাজে যে আইনজীবীরা আদালতে যান তাদের করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে বলেও মত দেন এ আইনজীবী।

এদিকে পুরান ঢাকার নিম্ন আদালত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভার্চুয়াল আদালতের চেয়ে স্বাভাবিক আদালতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের চাপ বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই উপস্থিত হচ্ছেন। তবে স্বাভাবিক আদালতের প্রথম দিন হওয়ায় হাজিরা ও সাক্ষীর বিষয় দেখা যায়নি। এ বিষয়ে আইনজীবী খালেদ হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ভার্চুয়াল আদালত চলার পর আজ স্বাভাবিক আদালতের প্রথম দিন। আজ স্বাভাবিক আদালত হওয়ায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের চাপ বেড়েছে।’ বিচারপ্রার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আদালত বন্ধ থাকায় আমি চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। আদালত স্বাভাবিক হওয়ায় মামলার খবর নিতে আদালতে এসেছি। মামলার বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয়েছে। পরবর্তী দিনে হাজিরা দিতে আসবো।’

গত শনিবার (১৯ জুন) রাতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন শারীরিক উপস্থিতিতে নিম্ন আদালত পরিচালনার জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন কোনো জেলা সদর, মহানগরে করোনা ভাইরাসজনিত রোগের বিস্তার রোধকল্পে সার্বিক, কার্যাবলি চলাচলে বিধিনিষেধ জারি করলে সংশ্লিষ্ট জেলার, মহানগরের দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালসমূহে শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জামিন ও জরুরি দরখাস্ত শুনানি করা যাবে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় যে ক্ষেত্রে আদালতে পক্ষগণের উপস্থিতির আবশ্যকতা নেই, সেক্ষেত্রে পক্ষগণের পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী আদালতে হাজিরা দাখিল করবেন। জামিন শুনানি এবং আমলি আদালতে ধার্য তারিখে হাজিরার জন্য কারাগারে থাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যান বা অন্য কোনোভাবে আদালত প্রাঙ্গণে বা এজলাস কক্ষে হাজির করার আবশ্যকতা নেই। এতে আরও বলা হয়, আদালতের বিচারিক কর্মঘণ্টার প্রথম ভাগে (সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর সোয়া ১টা) সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক, আপিল রিভিশন, রিভিউ শুনানি এবং দ্বিতীয় ভাগে (দুপুর ২ থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা) জামিন-সংক্রান্ত বিবিধ মামলা, জামিনের দরখাস্ত ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দরখাস্তসহ অন্যান্য দরখাস্ত শুনানির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। অধঃস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালসমূহের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে আদালত প্রাঙ্গণ এবং এজলাস কক্ষে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত গত বছরের ৩০ জুলাই হাইকোর্ট বিভাগের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বর্ণিত নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই