Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

গড়ে উঠছে সর্বজনীন শিক্ষা কাঠামো

আসাদুজ্জামান আজম

জুন ২০, ২০২১, ০৬:৪৫ পিএম


গড়ে উঠছে সর্বজনীন শিক্ষা কাঠামো
  • দারিদ্র্যবিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ট্রাস্ট
  • স্নাতক পর্যায়ের অর্থ সহায়তা পেয়েছেন  ১৪ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী
  • ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত ৪২,৮৪,৯২৮ শিক্ষার্থীর মাঝে উপবৃত্তি চলমান

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত উন্নত। অদম্য এগিয়ে চলা বাংলাদেশে শিক্ষিতের হার বেড়েছে বহুলাংশে। করোনা সংকটেও শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রাখতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। বাংলাদেশে শিক্ষার প্রসার, রূপকল্প-২০৪১ এবং ২০৩৫ সালে বিশ্বের ২৫তম অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দেশ গঠনে সর্বজনীন শিক্ষা কাঠামো গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট কাজ করছে।

২০১২ সালে যাত্রার পর থেকেই শিক্ষিত জাতি ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট। শিক্ষার মানোন্নয়নে টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন এবং শিক্ষার্থী ঝরেপড়ার হার শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট।  অর্থের অভাবে শিক্ষার সুযোগ-বঞ্চিত দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিতে ট্রাস্ট সারা দেশে ভূমিকা রাখছে। ট্রাস্টের মাধ্যমে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যন্ত স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, আর্থিক সহায়তা, অনুদান ও উচ্চশিক্ষায় ফেলোশিপ প্রদান করা হচ্ছে। এতে করে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি পর্যন্ত বিনা বেতনে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের হাতে সরাসরি স্বল্প সময়ে, ঝামেলাহীনভাবে উপবৃত্তির অর্থ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ই-স্টাইপেন্ড সিস্টেম বাস্তবায়ন করছে। নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজ নিজ ব্যাংক হিসাবে উপবৃত্তির অর্থ গ্রহণ করছেন। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি, ঝরেপড়া রোধ, শিক্ষার প্রসার, বাল্যবিয়ে রোধ, নারীর ক্ষমতায়ন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ দারিদ্র্যবিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ট্রাস্ট। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট সূত্র মতে, ২০১৩ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের দরিদ্র ও মেধাবী ১৪ লাখ এক হাজার ৮৩০ জন শিক্ষার্থীকে ৭৫৮ কোটি ১৫ লাখ ৬৪ হাজার ৬৮০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের (ষষ্ঠ-১২শ) ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ৯২৮ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৮৮২ কোটি ৯৩ হাজার ৬০০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে উপবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের আওতায় এক লাখ ৬৪ হাজার ৯ জন দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীর মধ্যে উপবৃত্তি, টিউশন ফি, ভর্তি সহায়তা ও চিকিৎসা অনুদান বিতরণ করা হয়েছে। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের এই উপবৃত্তি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

উপবৃত্তি বিতরণের পাশাপাশি দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির আর্থিক সহায়তা বাবদ শিক্ষার্থীপ্রতি মাধ্যমিকপর্যায়ে পাঁচ হাজার টাকা, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে আট হাজার এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ে ১০ হাজার টাকা হারে এক হাজার ৩৫৫ জন ছাত্রছাত্রীকে ৬৫ লাখ ২৬ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর পর্যন্ত দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন আর্থিক অনুদান বাবদ মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ৩৭ জন ছাত্রছাত্রীকে ১০ লাখ ১৫ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে এমফিল কোর্সে মাসিক ১০ হাজার টাকা এবং পিএইচডি কোর্সে মাসিক ১৫ হাজার টাকা করে ফেলোশিপ ও বৃত্তি প্রদান হচ্ছে। এমফিল-পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হওয়া যেকোনো গবেষক গবেষণাকর্ম সম্পাদনে ওই ফেলোশিপ ও বৃত্তি পেতে পারেন। এ পর্যন্ত ১৫ জন এমফিল গবেষককে ২০ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং ১৪ জন পিএইচডি গবেষককে ১৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ফেলোশিপ ও বৃত্তি বাবদ প্রদান করা হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে অনন্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি ও উৎসাহ প্রদানের জন্য দেশের মধ্যে সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলার’ নির্বাচন ও বৃত্তি প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ট্রাস্ট সূত্র মতে, স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান, নারী শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষার্থী ঝরেপড়া রোধকল্পে করণীয় বিষয়ে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মশালা আয়োজন, দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে আর্থিক সহায়তা প্রদান, দুর্ঘটনার কারণে গুরুতর আহত দরিদ্র মেধাবী ছাত্রছাত্রীর এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল ও পিএইচডি কোর্সে নিবন্ধিত বা গবেষণায় নিয়োজিত গবেষককে ফেলোশিপ ও বৃত্তি প্রদান করা হয়।

ট্রাস্টের কাঠামো : প্র্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী ১০টি বিশেষ উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোগ ‘শিক্ষা সহায়তা’ ট্রাস্ট। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছানুযায়ী ২০১২ সালে ‘প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট’ গঠন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি। ২৬ সদস্যবিশিষ্ট ‘ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি শিক্ষামন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে সিডমানি হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের স্থায়ী তহবিলে এক হাজার কোটি টাকা প্রদান করা হয়। এ অর্থ বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর হিসাবে জমা রাখা হয় এবং এ থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশ দিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের উপবৃত্তি, আর্থিক সহায়তা, অনুদান ও উচ্চশিক্ষায় ফেলোশিপ প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনুদানেও ট্রাস্টের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।  উপবৃত্তি প্রাপ্তির জন্য শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি বা ফাজিল পর্যায়ে অধ্যয়নরত নিয়মিত শিক্ষার্থী হতে হবে। শিক্ষার্থীকে হিসেবে শ্রেণিকক্ষে (ক্লাস) কমপক্ষে ৭৫ শতাংশ উপস্থিত থাকতে হবে। উপবৃত্তি প্রাপ্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীর অভিভাবকের বার্ষিক আয় এক লাখ টাকার কম, জমির পরিমাণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বসবাসকারী ০.০৫ (পাঁচ) শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকায় ০.৭৫ (পঁচাত্তর) শতাংশের কম জমি থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) নাসরীন আফরোজ বলেন, সমৃদ্ধ দেশ গঠনে শিক্ষার বিকল্প নেই। অর্থের অভাবে পিছিয়ে পড়া সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট কাজ করে থাকে। একটি মেধাবী সন্তানও যাতে সুযোগের অভাবে ঝরে না পড়ে, সেটা বাস্তবায়ন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।

আমারসংবাদ/জেআই