Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

ভোটেই লণ্ডভণ্ডের জয়ধ্বনি!

জুন ২০, ২০২১, ০৬:৪৫ পিএম


ভোটেই লণ্ডভণ্ডের জয়ধ্বনি!
  • ভারতের মতো ভুলপথে বাংলাদেশ 
  • ভোট কেন অনলাইনে নয়— প্রশ্ন
  • নির্বাচনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী দাবি
  • জনগণের ক্ষতি ও মৃত্যুর দায়ভার নির্বাচন কমিশনের
  • আজ ২০৪ ইউপিতে নির্বাচন
  • দায়িত্বশীল আচরণ বহির্ভূত কাজ করছে কমিশন —বদিউল আলম মজুমদার সুজন সম্পাদক
  • ভোটে বাংলাদেশে গণসংক্রমণ হতে পারে ভারত স্টাইলে —ডা. মুশতাক হোসেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা

সীমান্তে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়ছে জ্বর! দেশজুড়ে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ঘরে। বেড়েছে মৃত্যুও। বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ। হবে না সমাপনী পরীক্ষা। ক্যাম্পাস বন্ধে আটকে আছে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর জীবন। দেশের চলমান পরিস্থিতিতে চিন্তিত স্বাস্থ্যবিদরা। এ দৃশ্যপটে আবারো দেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভোট। আজ সারা দেশে ২০৪টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ  হবে। একই সাথে দুই সংসদীয় আসনেও উপনির্বাচন। দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের বিপর্যয় সময়ে নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্তকে আত্মঘাতী বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও দেশের সচেতন নাগরিকরা।

তারা বলছেন, যারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন তারা মানুষের জীবন নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণ বহির্ভূত কাজ করছেন। ভোটের কারণে জনগণের ক্ষতি ও মৃত্যুর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে বলেও দাবি তোলা হচ্ছে। এবার ভোটে সংক্রমণ বাড়বে বহুগুণে। ভারতীয় স্টাইলে বাংলাদেশে গণসংক্রমণ হতে পারে। ভারতে যখন করোনায় সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে ঠিক তখন নির্বাচন চলে। ভারত সরকার তখন স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানেনি। কোনো পরামর্শও গ্রহণ করেনি। যার কারণে ভারতকে এখনো খেসারত দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশও এখন ভারতের মতো ভুল করছে। দেশে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের কোনো মতামত গ্রহণ করছে না,  হয়তো আমাদেরও ভুলের খেসারত দিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যখন সবকিছু অনলাইনে হচ্ছে, ভোটও অনলাইনে হতে পারতো। দেশ এখন ডিজিটাল। মানুষ প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতন। ভোটের কারণে এভাবে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া উচিত হচ্ছে না। এর আগেও দেশে দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রভাব ফেলেছে ভোটের কারণে। এবারো যদি ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে গণমুখী সংক্রমণ আসে তার একমাত্র কারণই হবে ভোট।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (?সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার আমার সংবাদকে বলেন, ‘ভোট কেন এটিই তো আশ্চর্যের বিষয়। যেখানে মানুষ এখন বাঁচার লড়াই করছে। ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ভয়ঙ্করভাবে বাড়ছে সেখানে ভোট হলে মানুষের অবশ্যই জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। যারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করছেন তারা মানুষের জীবন নিয়ে দায়িত্বশীল আচরণের বহির্ভূত কাজ করছেন। একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে এভাবে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কোনো অধিকার নেই।’ ভোটের কারণে জনগণের ক্ষতি ও মৃত্যুর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে বলেও মনে করছেন বদিউল আলম।

তিনি আরো বলেন, ‘আর এ দেশে মানুষ এখন ভোটও দিতে পারছে না। নেই ভোটের অধিকার। ভোটডাকাতির স্পষ্ট প্রমাণ থাকার পরও তা বাতিল হয় না। গ্রহণযোগ্যতা পায় এটি একটি রাষ্ট্রের জন্য বড়ই হুমকির। সেই পরিস্থিতিতে ভোটে গণজমায়েতের সমাবেশের আয়োজন করছে নির্বাচন কমিশন। এর কারণে একদিকে যেমন মানুষ ক্ষতির মুখে পড়ছে, অন্যদিকে দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে সারা বিশ্বে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন আমার সংবাদকে  বালেন, ‘এবার ভোটে সংক্রমণ বাড়বে বহুগুণে। ভারতীয় স্টাইলে বাংলাদেশে গণসংক্রমণ হতে পারে। আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, শুরু থেকেই সংক্রমণটা বেশি ছড়িয়েছে ভোটের মাধ্যমে। বাংলাদেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণই হলো ভোট। দেশে যখন দ্বিতীয় ঢেউ চলছিলো তখন জনস্বাস্থ্যকে উপেক্ষা করে নির্বাচন হয়েছে। গণজমায়েত হয়েছে। যার জন্য মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণ ছড়িয়ে গেছে। এবারো ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমণ যখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে, ঠিক তখনি ইউপি নির্বাচন হচ্ছে। যাতে আমাদের জনস্বাস্থ্য অত্যন্ত ঝুঁকিতে পড়বে।’ ডা. মুশতাক হোসেন আরো বলেন, ‘ভারতে যখন করোনায় সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন ভারতে নির্বাচন চলে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানেনি কেউ। যার কারণে ভারতকে এখনো খেসারত দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশও এখন ভারতের মতো ভুল করছে। হয়তো আমাদেরও ভুলের খেসারত দিতে হবে। কারণ এই ভ্যারিয়েন্ট আগেও ভোটের মাধ্যমে ছড়িয়েছে, এবারো ভোটের মাধ্যমে দেশ চরম ঝুঁকিতে পড়তে পারে।’

আজ প্রথম ধাপে ২০৪ ইউপিতে নির্বাচন

আজ প্রথম ধাপে ২০৪টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এসব ইউনিয়নের মধ্যে ১৮৪টি ইউপিতে ব্যালটের মাধ্যমে এবং ২০টি ইউপিতে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সারা দেশের ১৩ জেলার ৪১টি উপজেলার ২০৪টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ হলেও প্রথম ধাপের ১৭৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ভোট নেয়া হচ্ছে। কারণ ২৮টি ইউপিতে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৮ জন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। গতকাল রোববার নির্বাচন কমিশনের যুগ্মসচিব এসএম আসাদুজ্জামান আরজু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ইসি সূত্র জানায়, প্রথম ধাপের ২০৪টি ইউপি নির্বাচনে ৮৫৯ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়াও ২০৪টি ইউপির মধ্যে ২৮টি ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে ২৮ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এসব ইউনিয়নে সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে দুই হাজার ১৫৪ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ছয় হাজার ৯৬০ জন প্রার্থী চূড়ান্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। প্রথম ধাপের ইউপি নির্বাচনে এক হাজার ৮৩৬টি ভোটকেন্দ্রের ১০ হাজার ২৬০টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রতিটি ইউপিতে একটি মোবাইল পুলিশ টিম, ৭৪টি স্ট্রাইকিং পুলিশ টিম, র্যাবের ১২৪টি টিম, ১২৩ প্লাটুন বিজিবি, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ৩৯৩ জন এবং ৪১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও নির্বাচনে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার হিসাবে ১২ হাজার ২০৭ জন এবং পোলিং অফিসার পদে ২০ হাজার ৫২০ দায়িত্ব পালন করবেন। যে ১৩ জেলার ৪১ উপজেলায় ইউপি নির্বাচন : পটুয়াখালী জেলার দুমকি, বাউফল, দশমিনা ও গলাচিপা উপজেলার মোট ১৯টি ইউনিয়ন। রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার কল্যাণি ইউনিয়ন, বগুড়া জেলার দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া ইউনিয়ন, বরিশাল জেলার বরিশাল সদর, বাকেরগঞ্জ, উজিরপুর, মুলাদী, মেহেদীগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, গৌরনদী, হিজলা, বানারীপাড়া এই ৯টি উপজেলার ৫০টি ইউপি, বরগুনা জেলার বরগুনা সদর, আমতলী, বেতাগী, বামনা, পাথরঘাটা এই পছাচ উপজেলার ২৯টি ইউপি, পিরোজপুর জেলার পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানী, ভাণ্ডারিয়া, নেছারাবাদ, কাউখালী, নাজিরপুর এই ছয়টি উপজেলার ৩২টি ইউপি, ঝালকাঠি জেলার ঝালকাঠি সদর উপজেলা, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়া এই চার উপজেলার ৩১টি ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।এছাড়াও ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন, তজমুদ্দিন, মনপুড়া, চরফ্যাশন এই চার উপজেলার ১৩টি ইউপি, নরসিংদী জেলার পলাশপুর উপজেলার দুটি, গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন, মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার ১৩টি, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার দুটি এবং লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলার তিনটি ও কমলনগর উপজেলার তিনটি ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

আমারসংবাদ/জেআই