Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

মহামারিতে সক্রিয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

মাহমুদুল হাসান

জুন ২১, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম


মহামারিতে সক্রিয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

প্রায় দেড় বছর ধরে চলছে করোনা মহামারি। লম্বা সময় ধরে অলস সময় পার করছে মানুষ। অন্যদিকে বিনোদনের অনুষঙ্গও বন্ধ। খোলা নেই পর্যটনকেন্দ্র। অনেকে কর্মহীন হয়ে গৃহবন্দি। ফলে করোনাকালে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ, বাল্যবিয়ে রোধ, নিরাপদ গর্ভধারণ, সন্তান জন্মদানসহ বেশকিছু সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। এদিকে ১৬ কোটির বেশি জনসংখ্যার দেশে মাত্র ৫২ হাজার পরিবার পরিকল্পনা কর্মীর জন্য করোনাকালে প্রত্যেকের দোরগোড়ায় এসব সেবা পৌঁছে দেয়া শুরু থেকেই বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিলো। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ৫২ হাজারের বেশি কর্মী সরকারকে নিরাশ করেনি। সুন্দর কর্মকৌশল আর সাহসিকতায় এখন প্রতিটি পরিবারের কাছে পৌঁছে গেছে পরিবার পরিকল্পনার সেবা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক থেকে মাঠকর্মী প্রত্যেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন নিরলসভাবে। দেশের প্রতিটি নাগরিকের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীর অর্পিত দায়িত্ব স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নির্দেশনায়, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ সচিব মো. আলী নূর ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানুর তত্ত্বাবধায়নে পালন করে যাচ্ছেন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. হেমায়েৎ হুসেন ও আরেক পরিচালক (উপকরণ ও সরবরাহ) এবং লাইন ডাইরেক্টর (পিএসএসএম) রত্না তালুকদার।

অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তাদের প্রচেষ্টা ও প্রশাসনিক দক্ষতায় শহর থেকে প্রান্তিকে পরিবার পরিকল্পনার সেবা পৌঁছে দিতে বেগ পেতে হয়নি। নির্দিষ্ট সময়ে উপকরণ সরবরাহ ও প্রশাসনিক তৎপরতায় সেবার মানও বেড়েছে অতীতের চেয়ে আরও বেশি। প্রতিষ্ঠানটির একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনা মহামারিকালে দেশের প্রতিটি পরিবারে বিশেষ করে প্রান্তিক জনপদে সেবা পৌঁছে দেয়া ছিলো বড় চ্যালেঞ্জের। তবুও চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সাহসিকতা জুগিয়েছেন এই দুই কর্মকর্তা। ৫২ হাজার কর্মী প্রতিনিয়ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের চাহিদার আলোকে প্রাথমিক ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান এবং জন্মনিয়ন্ত্রণ বিষয়ক নানা উপকরণ পৌঁছে দিয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, করোনা ভাইরাস সংকটকালে দেশের প্রায় ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও হাসপাতালে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ে ৫২ হাজার কর্মী নিরলস কাজ করেছেন। এখনো তারা প্রতিটি স্তরে কাজ করে যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নির্দেশনায় এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ সচিব মো. আলী নূরের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধায়নে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর তাদের মাঠকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে গর্ভবতী মা, কিশোরীদের পরিবার পরিকল্পনার সেবা প্রদান করেছে। ফলে স্বাভাবিক সময়ের মতোই প্রাতিষ্ঠানিক সন্তান জন্মদান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়াও বাড়িতে সন্তান জন্ম নিলেও সেখানে দক্ষ স্বাস্থ্যসেবা কর্মীর মাধ্যমে বাচ্চা প্রসবের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এসব বিষয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে সার্বক্ষণিকভাবে। মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মীদের ভার্চুয়ালি প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এসব কাজ চলমান রয়েছে। ফলে মহামারিকালে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা কিংবা পরিবার পরিকল্পনাবিষয়ক কর্মকাণ্ডে কোনো প্রভাব পড়েনি। এসব কাজ ত্বরান্বিত করতে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে সচেতনতাবোধ তৈরি হচ্ছে। অপূর্ণ চাহিদা মোকাবিলায়ও নিরলসভাবে কাজ করছে কর্মীবাহিনী। সম্প্রতি এক বৈঠকে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাহান আরা বানু বলেন, সারা দেশে বর্তমানে ৯০৩টি কৈশোরবান্ধব কেন্দ্র আছে। এসব কেন্দ্র থেকে তরুণদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে। পুরো দেশে এমন কেন্দ্রের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের জন্য সেবা কার্যক্রম চালাতে সরকারের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু উদ্যোগের পাশাপাশি সচেতনতাও জরুরি। তরুণদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে এবং করোনাকালে এই সেবা পৌঁছে দিতে ১৬৭৬৭ কল সেন্টার চালু করা হয়েছে। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে এই সেবা দেয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের মধ্যে প্রতি উপজেলায় দুটি কেন্দ্র স্থাপন করার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। শিল্প এলাকায় তরুণ-তরুণীদের জন্য স্যাটেলাইট ক্লিনিকের কার্যক্রম চলছে। এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।

আমারসংবাদ/জেআই