Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

টার্গেট সংসদ নির্বাচন

রফিকুল ইসলাম

জুন ২১, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম


টার্গেট সংসদ নির্বাচন
  • বৃদ্ধি পেয়েছে জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক তৎপরতা
  • তৃণমূলে দ্বন্দ্ব নিরসনে হার্ড লাইনে দায়িত্বপ্রাপ্তরা
  • নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে কেন্দ্রমুখী সংসদ সদস্যরা
  • এমপিদের নীতিবাক্য শুনতে নারাজ কেন্দ্র
  • আ.লীগ একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল —লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, প্রেসিডিয়াম সদস্য, আ.লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনের অংশ হিসাবে তৃণমূলের কমিটি গঠন, ত্যাগীদের মূল্যায়ন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে মনোযোগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। স্থানীয় কিংবা জাতীয় নির্বাচন ঘিরেই এই দলের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এ জন্য চলমান পরিস্থিতির মধ্যেও সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে তৃণমূলে কোন্দল ও বলয়ভিত্তিক রাজনীতিসহ সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনের এখনই উপযুক্ত সময়। সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলটি।

তথ্যমতে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার প্রায় একযুগের বেশি সময় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। ক্ষমতার দীর্ঘদিনেও নিষ্পত্তি হয়নি দলটির তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব, বয়লভিত্তিক রাজনীতি, হামলা-মামলা ও খুনোখুনি। দূরত্ব বেড়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা-উপজেলার শীর্ষ পদধারী নেতাদের মাঝে। তারা নিজ নিজ বলয়ভিত্তিক রাজনীতি ও আধিপত্য ধরে রাখতে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলাসহ প্রতিটি ইউনিটির কমিটিতে নিজ বলয়ের ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়ে আসতে জোর তদবির-লবিং করছেন। এমপি ও দলীয় নেতাদের মুখোমুখি অবস্থানে দিন দিন আরও কোণঠাসা হয়ে পড়ার পাশাপাশি পদবঞ্চিত হচ্ছেন দুর্দিনের ত্যাগী, মেধাবী ও পরীক্ষিতরা। আর এই সুযোগে দলের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে হাইব্রিড, বিতর্কিত, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, সামপ্রদায়িক, মাদক ব্যবসায়ী ও বিএনপি-জামায়াতপন্থিরা। এই সকল সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে বারবার উদ্যোগ নিয়েও সফল হননি আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা। স্থানীয় সরকার নির্বাচন, শূন্য হওয়া সংসদীয় আসনে উপনির্বাচন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দিবসভিত্তিক কর্মসূচির কারণে বারবার সাংগঠনিক কার্যক্রম থমকে দাঁড়িয়েছে।  

আ.লীগ সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সর্বশেষ দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডসভায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের জন্য নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, সারা দেশে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন ও দলকে সু-সংগঠিত করতে হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারীরা কথা না শুনলে কমিটি ভেঙে দিয়ে নতুন কমিটি গঠন করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যার এমন নির্দেশনার পর নড়েচড়ে বসেছেন বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা। সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ কোন্দল মীমাংস ও সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে স্থানীয় এমপি ও জেলা-উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাথে ঢাকায় বসছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এমপি ও তৃণমূল আওয়ামী লীগে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিচ্ছেন তারা। একই সাথে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা কমিটির সম্মেলনের মধ্যদিয়ে ত্যাগী ও দলের জন্য নিবেদিতদের তুলে আনতে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের এমন কঠোর অবস্থানেও বসে নেই সংসদ সদস্যরা। তারা নির্বাচনি এলাকায় দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজ বলয়ের নেতাকে বসাতে কেন্দ্রীয় নেতাদের বাসা-বাড়ি ও পার্টি অফিসে ধরনা দিচ্ছেন। 

খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্যের বাসায় আসেন পাবনার সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু, আহমেদ ফিরোজ কবির, মকবুল হোসেন, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স  ও সংরক্ষিত আসনের এমপি নাদিরা ইয়াসমিন জলি। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, আগত এমপিরা নিজ নিজ সমস্যা তুলে ধরেন এবং নিজ নিজ পছন্দের নেতাদের দলে দায়িত্বশীল পদে আনতে জোর তদবির করেন। কিন্তু ওই কেন্দ্রীয় নেতা সাফ জানিয়ে দেন, ব্যক্তিবলয় দিয়ে কমিটি গঠন ও আধিপত্য ধরে রাখতে নিজেদের লোক দিয়ে কমিটি গঠন করা চলবে না। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা কঠোর অবস্থানে রয়েছেন।

দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, একদিকে করোনা আতঙ্ক, অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের বাকি মাত্র আড়াই বছর। এর মাঝে শুরু হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এমন অবস্থায় তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ এখনই বাস্তবায়ন করতে হবে। নিজ দলীয় নেতা ও এমপিদের মাঝে চলমান সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমাধান টানতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের আর বেশি দেরি  নেই। দলকে দ্বন্দ্ব-কোন্দলমুক্ত করে সামনের নির্বাচনে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। দলের মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য ফিরিয়ে আনতে হবে। পার্টিকে শক্তিশালী করতে হলে প্রয়োজন ইস্পাত-কঠিন ঐক্য। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা থেকে সম্মেলন করে নতুন কমিটি দিতে হবে। প্রয়োজনে ঘরোয়াভাবে সম্মলন করে কমিটি দিতে হবে। নিজের অবস্থান শক্ত করার জন্য পকেট কমিটি করা যাবে না। চিহ্নিত সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, সামপ্রদায়িক, মাদক ব্যবসায়ী এদেরকে দলে ও কমিটিতে নেয়া যাবে না। দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। এদিকে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন শেষ হওয়া কমিটি ঘোষণা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। তৃণমূলের নেতারা সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় গত শুক্রবার পাবনার ফরিদপুর ও চাটমোহর উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই সদস্য কমিটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। সম্মেলনের দেড় বছর পর গত ১৭ জুন ঘোষণা করা হয়েছে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ঘোষিত কমিটিতে ৭৪টি পদে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। সর্বশেষ গত রোববার নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে বিশেষ বর্ধিতসভা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান আমার সংবাদকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। স্থানীয় কিংবা জাতীয় নির্বাচন ঘিরেই এই দলের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সাংগঠনিক কার্যক্রমের মধ্যে দিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। করোনায় নতুন নেতৃত্ব তৈরি কিছুটা পিছিয়ে গেছে উল্লেখ্য করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, করোনার কারণে তৃণমূলে নতুন নেতৃত্ব তৈরিতে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। এই অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে বিভাগীয় টিম কাজ শুরু করেছে। প্রতিটি টিম তৃণমূলের সাথে ভার্চুয়ালি কাজ করছে, বর্ধিতসভা করছে, নির্দেশনা দিচ্ছে।’

আমারসংবাদ/জেআই