Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্থলবন্দরের ভূমিকা: ভবিষ্যৎ-সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

মো. আলমগীর

জুন ২২, ২০২১, ০৭:০৫ পিএম


অর্থনৈতিক উন্নয়নে স্থলবন্দরের ভূমিকা: ভবিষ্যৎ-সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের স্থল সীমান্তের মোট দৈর্ঘ্য ৪৩৬৬ কি.মি। এর মধ্যে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৪০৯৬ কি.মি এবং মিয়ানমারের সাথে আরও ২৭০ কি.মি। বাংলাদেশের এই দীর্ঘ স্থলসীমান্ত বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে অপরিসীম ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশের স্থল বাণিজ্যের বেশির ভাগই সম্পন্ন হয়ে থাকে ভারতের সাথে, কারণ ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর পঞ্চম দীঘর্?তম সীমান্ত এলাকা। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ লাখ লোক প্রতি বছর ভারতে পর্যটন, শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা নিতে যায়। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের।

তবে ভুটান এবং নেপাল ভারতীয় স্থলভাগ ব্যবহার করে বাংলাদেশের সাথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু করেছে। এতে অংশগ্রহণকারী সকল দেশই স্থলপথে বিদ্যমান বাণিজ্য সুবিধা গ্রহণ করে লাভবান হয়ে থাকে। তাই, স্থলপথে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে আমদানি-রপ্তানি সুগম, সহজ ও অধিকতর উন্নত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০০১ সালে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, ২০০১ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে। একজন চেয়ারম্যান, তিনজন সদস্য এবং ৪৯০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্বারা এর জনবল গঠিত। সরকার কর্তৃক গঠিত একটি বোর্ডের সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা ও দিক-নির্দেশনা প্রদান করে। তাছাড়া, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাপতিত্বে আরেকটি উপদেষ্টা কমিটি রয়েছে। কমিটি চালুকৃত স্থলবন্দরসমূহের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন ও সার্বিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা প্রদান করে থাকে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। স্থলবন্দর কর্তৃক ব্যবহার উপযোগী, অবকাঠামো উন্নয়ন, পণ্য লোডিং-আনলোডিং, পণ্য সংরক্ষণ, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ঘোষিত ১৮১টি শুল্ক স্টেশনের মধ্যে ২৪টি স্থল শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করে- যার মধ্যে ১২টি চালু রয়েছে এবং বাকি ১২টি চালুর অপেক্ষায় রয়েছে। ১২টি চালু বন্দরের মধ্যে বেনাপোল, বুড়িমারী, আখাউরা, ভোমরা, নাকুগাঁও, তামাবিল এবং সোনাহাটসহ এ সাতটি বন্দর সরাসরি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। বাকি পাঁচটি যথাক্রমে সোনামসজিদ, হিলি, বাংলাবান্ধা, টেকনাফ এবং বিবির বাজার বেসরকারি অপারেটরের মাধ্যমে বিওটি ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। আরও ১২টি নতুন স্থলবন্দর নির্মাণাধীন রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে যথাক্রমে— বিরল, দর্শনা, বিলোনিয়া, গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী, ধানুয়া-কামালপুর, রামগড়, তেগামুখ, চিলাহাটি, দৌলতগঞ্জ, শেওলা, বাল্লা,  ভোলাগঞ্জ বাংলাদেশের স্থলবন্দরসমূহের মধ্যে শুধু মিয়ানমারের সাথে একটি এবং বাকিগুলোর মাধ্যমে ভারতের সাথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য পরিচালিত হয়। বর্তমানে এর সদর দপ্তর কারওয়ান বাজারের টিসিবি ভবনে ভাড়া করা একটি ফ্লোরে অবস্থিত। তবে অচিরেই স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রশাসনিক ভবন আগারগাঁও প্রশাসনিক জোনে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হবে।

বাংলাদেশের স্থলবন্দরসমূহের মধ্যে বেনাপোল স্থলবন্দর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের স্থলপথে সম্পাদিত মোট আমাদনি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯০ ভাগই বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এ স্থলবন্দরের ওপর চাপ কমাতে এবং ভারত, ভুটান এবং নেপালের সাথে স্থলপথে মালামাল আমদানি-রপ্তানির সুবিধার্থে সরকার ১৯৮৮ সালে বুড়িমারী স্থলবন্দরটি চালু করে।

ভৌগোলিক অবস্থার কারণে ট্রান্সপোর্ট ও ট্রান্সশিপমেন্ট কেন্দ্র হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। বাংলাদেশের সাথে  ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত সংযোগ রয়েছে। এছাড়া, নেপাল, ভুটান এবং চীনের কুনমিং সীমান্তের কাছাকাছি থাকায় স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি সুযোগ বিদ্যমান। এই বিষয়টি সদ্য স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের জাতির জনক আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। তাই, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে নৌপরিবহন ও বাণিজ্য ব্যবস্থা জোরদার করতে বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭২ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম আন্তঃদেশীয় নৌপরিবহন ও বাণিজ্য প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়, যা স্বাধীন দেশের বাণিজ্য ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচিত করে। বস্তুতপক্ষে তিনিই ছিলেন বাংলাদেশের সাথে বহির্বিশ্বের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তারে প্রথম যোগসূত্র স্থাপনকারী। তিনি ১৯৫৬ সালে তদানীন্তন পাকিস্তানের কোয়ালিশন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সাথে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করলে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান বর্তমানে বাংলাদেশে প্রথম আমদানি-রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করেন। উল্লেখ্য, দেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালে তিনিই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বেনাপোল শুল্ক চেকপোস্ট পরিদর্শন করেন। ২০০১ সালে বাংলাদেশে ১৩টি শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হলেও চালু ছিলো মাত্র দুটি। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ১১টি শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করে ২৪টি স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, সমপ্রসারণ ও আধুনিকায়নের নির্দেশনা প্রদান করে।

বিমসটেক (ইওগঝঞঊঈ) এবং বিআইবিএন (ইওইঘ) আঞ্চলিক জোটের বিভিন্ন বাধ্যবাধকতা আর প্রয়োজন, স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়ন, সেবা সহজীকরণ ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাণিজ্যের বিকাশসহ কর্মসৃজনে বাংলাদেশে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বিগত ২০ বছর যাবত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বেনাপোল স্থলবন্দরে একটি আধুনিক আর্ন্তজাতিক মানের প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল তৈরি করা হয়েছে। বেনাপোলসহ অন্যান্য স্থলবন্দর ব্যবহার করে এ পর্যন্ত প্রায় ৩১ লাখ যাত্রী ভারতে গমন এবং ভারত থেকে বাংলাদেশে আগমন করেছে। এর ফলে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষসহ অনান্য রাজস্ব আদায়কারী সংস্থার আয় বিগত বছরসমূহের তুলনায় অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, আধুনিক, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, আধুনিক উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের বর্তমান সরকারের অভিষ্ট লক্ষ্য। সেজন্য বর্তমান সরকার অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, ডিজিটাল বাংলাদেশে, ভিশন-২০২১, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০, ভিশন-২০৪১,  ডেল্টা প্ল্যান- ২১০০ গ্রহণ করেছে। এসব পরিকল্পনা, রূপকল্প, লক্ষ্য ও অভিলক্ষ্যের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণের জন্য কাজের সুযোগ সৃষ্টি, খাদ্য ও বাসস্থানের সংস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সরকারের এ মহতী উদ্যোগের সাথে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। আর এ সুবিধাভোগী হচ্ছে—

ক) বেনাপোল,  সোনামসজিদ,  ভোমরা, হিলি, টেকনাফ, তামাবিল, বুড়িমারি এবং সোনাহাট স্থলবন্দরে বেসরকারিভাবে নিয়োজিত ঠিকাদার কোম্পানির মাধ্যমে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক পণ্য উঠানামার কাজে নিয়োজিত আছেন। এর মাধ্যমে এলাকার হতদরিদ্র এবং দরিদ্র এক বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে তাদের জীবনমানের অনেক উন্নতি হয়েছে এবং এলাকায় তা ক্ষুদ্র ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা বিস্তারে সহায়তা করছে।

খ) বেনাপোল, আখাউড়া, বুড়িমারি, ভোমরা, তামাবিল ও সোনাহাট স্থলবন্দরের পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে বেসরকারি ঠিকাদারের মাধ্যমে এলাকার অনেক দরিদ্র বেকার ছেলে-মেয়ের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে তাদের আয় রোজগার বেড়েছে, জীবনমান সামান্য হলেও উন্নতি হয়েছে।

গ) দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থলবন্দরসমূহ স্থাপিত হওয়ায় এসব দূরবর্তী এলাকায় আগে যেখানে কোনো জনবসতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ ছিলো না, এখন সেখানে অনেক দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস, আবাসিক হোটেল, মোটেল ও কম্পিউটার কম্পোজের, ছবি তোলার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। মালামাল খালাস, ড্রাইভার, হেলপার, সিএন্ডএফ এজেন্ট, ব্যাংক, বিমা ছাড়াও অনেক ক্ষুদ্রশিল্পের বিকাশ ঘটেছে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ এসব বন্দরের আশপাশে বিরাট কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

তাছাড়া,  পণ্য উঠানো-নামানো, সংরক্ষণ, ট্রান্সশিপমেন্ট ও অন্যান্য সেবা প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ বিগত বছরসমূহে রাজস্ব বাবদ ১২০০ কোটি টাকার অধিক আয় করেছে এবং প্রায় ২০০ কোটি টাকা ভ্যাট প্রদান করেছে।

এত কিছুর পরও একথা বলতে দ্বিধা নেই যে, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সামনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিশেষ করে যে হারে স্থলবন্দরের সেবাপ্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে, সে হারে বা গতিতে সেবা অবকাঠামো গড়ে উঠছে না। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বর্তমান সরকারের সময়ে মানুষের জীবনমানের অভাবনীয় উন্নতি হওয়ায় সেবাগ্রহীতাদের প্রত্যাশ্যা এখন অনেক বেশি। বিশ্বব্যাংক এবং সরকারি অর্থ মিলিয়ে এখন মোট ১২০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ বিভিন্ন স্থলবন্দরে চলমান রয়েছে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ ও সেবা সুবিধা সমপ্রসারণ।

সমপ্রতি বুড়িমারী স্থলবন্দরে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে যে ই-পোর্ট ম্যানেজম্যান্ট কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে, তা সফল হলে স্থলবন্দরের সকল কাজ ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসা হবে এবং এর ফলে সেবা গ্রহণকারীদের অনেক কম সময়ে, অনায়াসে দক্ষতার সাথে সেবা প্রদান করা যাবে। এ কার্যক্রমটি স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ পরবর্তীতে অন্যান্য স্থলবন্দরসমূহে চালু করবে। স্থলবন্দরে প্রায় ১৫টি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদান করে থাকে। সংস্থাসমূহ তাদের নিজস্ব নিয়ম-নীতি মেনে কাজ করে থাকে। অনেক সময় কোনো কোনো কর্মকর্তা সংস্থার অর্ন্তগত সংস্কৃতির কারণে একসাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তারা অনেকটা আলাদা সাইলোর (ঝরষড়) মতো কাজ করতে পছন্দ করেন। এর ফলে এক ছাদের নিচে ওয়ান স্টপ সার্ভিস প্রদানের মহৎ উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। মনোগত এই সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। তাছাড়া, অনেক সুবিধাভোগীদের কারণে স্থলবন্দরের এই অটোমেশন ভালোভাবে কার্যকর হচ্ছে না। কিন্তু আস্তে, আস্তে তারা এর সুবিধা বুঝতে পারলে অটোমেশনকেই গ্রহণ করবেন।

স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে সীমান্তে কাজ করতে হয়। এজন্য তাদের অনেক জমি অধিগ্রহণ এবং অবকাঠামো নির্মাণকাজ হাতে নিতে হয়। জমি অধিগ্রহণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয় এবং এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তাছাড়া, সীমান্তের ১৫০ গজের ভেতর এসব নির্মাণকাজ করতে গেলে প্রায়ই ভারতীয় বর্ডার ফোর্সের (বিএসএফ) বাধার মুখে পড়তে হয়। এসব বিষয় সমাধানের জন্য উভয় দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থা জড়িত থাকে। এর ফলে অনেক দীর্ঘসূত্রতা সৃষ্টি হয় এবং প্রকল্প যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা যায় না। পরিণতিতে বার্ষিক উন্নয়ন অগ্রগতি মন্থর হয়ে যায়- যা সামগ্রিক মূল্যায়নে প্রভাব ফেলে। তাছাড়া ত্রিদেশীয় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক সময় অন্য দেশের ভূ-রাজনৈতিক বিষয়াদি বন্দরের কার্যক্রমেও প্রভাব সৃষ্টি করে। অনেক সময় বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ পুরোপুরি প্রস্তুত থাকলেও অন্য দেশ যদি তার স্থলবন্দরের ভালোভাবে উন্নতি না করে তাহলে বাংলাদেশে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এর পুরো সুফল ঘরে তুলতে পারে না। এজন্য প্রয়োজন একটি সমন্বিত কার্যকর ব্যবস্থা, যা উভয় পক্ষ বা সকল পক্ষের জন্য রিহ-রিহ পরিবেশের সৃষ্টি করে। তবে আশার কথা হচ্ছে যে, বর্তমান সরকারের সময়কালে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এক অন্য উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছেছে। বর্তমানে দুদেশের মধ্যে বাস ছাড়াও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। তাছাড়া, স্থলবন্দরের যেকোনো সমস্যা সমাধান এবং বাংলাদেশ ও ভারতের স্থলবন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্যে দুই দেশের স্থলবন্দরের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ঝঁন-ৎেড়ঁঢ় ড়হ ওহভৎধংঃৎঁপঃঁৎব ড়ভ ওঈচং/খঈঝং বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অংশে বেনাপোল স্থলবন্দর ও ভোমরা স্থলবন্দরে কমিটির প্রথম সভা এবং ভারত অংশের শিলিগুঁড়িতে কমিটির দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভার মাধ্যমে অনেক অনিষ্পন্ন বিষয়াদি সহজে ও দ্রুতগতিতে নিষ্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালনায় এ পর্যন্ত মাত্র ১২টি স্থলবন্দরের কার্যক্রম চালু রয়েছে। চালুর অপেক্ষায় রয়েছে আরও ১২টি স্থলবন্দর। ভবিষ্যতে পরিচালনার জন্য বিবেচনাধীন আছে আরও তিনটি। সবগুলো বন্দর চালু করা গেলে বাংলাদেশ স্থলবন্দরের কার্যক্রম পূর্ণতা পাবে এবং আশা করা যায়, আমদানি-রপ্তানি বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সরকারের রাজস্ব অনেক বৃদ্ধি পাবে এবং অনেক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আশা করা যায়, বাংলাদেশ স্থলবন্দরসমূহ আগামী দিনে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যবসা-বাণিজ্য আর আর্ন্তজাতিক যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষে মানুষে সৎভাব, সংস্কৃতির আদান-প্রদান ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা পালন করবে— সেই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করছি।

লেখক : অতিরিক্ত সচিব ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।

আমারসংবাদ/জেআই