Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

গ্রাহকদের জন্য প্রযুক্তিগত সুবিধা বাড়াচ্ছে আরইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ২৯, ২০২১, ০৭:৫০ পিএম


গ্রাহকদের জন্য প্রযুক্তিগত সুবিধা বাড়াচ্ছে আরইবি

সারা দেশে শতভাগ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কাজ করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। চলতি ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরকে আলোকিত করার লক্ষ্য নিয়ে সংস্থাটির কার্যক্রম চলছে দেশজুড়ে। দুর্গম চরাঞ্চল, পাহাড়েও পৌঁছে দেয়া হয়েছে বিদ্যুতের সুবিধা। যার ফলে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোও শহুরে সেবাপ্রাপ্তির কাতারে আসতে পারছে। ইতোমধ্যে দেশের ৪৬১ উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন হয়েছে। বাকি ৩৫ উপজেলায় চলতি বছরের মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে কাজ করছে আরইবি।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মঈন উদ্দিনের দক্ষ নেতৃত্বে লক্ষ্যপূরণে প্রতিটি সদস্য নিরলস কাজ করে চলেছেন। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই আরইবির কাজে নতুন গতি আসে। সারা দেশে আরইবি বিশাল কর্মযজ্ঞ স্বচ্ছতার মাধ্যমে বাস্তবায়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তিনি। তার দক্ষ নেতৃত্ব এবং পরিকল্পনায় বিদ্যুৎ খাতের সাফল্যের শীর্ষে রয়েছে আরইবি। প্রতিদিন নতুন সংযোগ নেয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংখ্যা বাড়ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে সবার জন্য নির্ভরযোগ্য মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ প্রাপ্তি নিশ্চিত করাই সংস্থাটির মূল লক্ষ্য। শতভাগ বিদ্যুতায়নের পাশাপাশি গ্রাহকদের প্রযুক্তিগত সুবিধাও বাড়ানো হচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে পারছেন গ্রাহকরা।

ছয়টি বিতরণ সংস্থা ২০২৩ সালের মধ্যে তিন কোটি ৮৬ লাখ ২৮ হাজার ৮৫১ জন বিদ্যুৎগ্রাহককে স্মার্ট প্রিপেমেন্ট মিটারিং সিস্টেমের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। সব গ্রাহককে স্মার্ট প্রিপেমেন্ট মিটারিং সিস্টেমের আওতায় বিদ্যুৎ বিলিংয়ের প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের অনিয়ম হবে না। এর মধ্যে ২০২২ সালের মধ্যে ৮৮ লাখ প্রিপেমেন্ট মিটার স্থাপন করা হবে। ডিজিটালাইজেশন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গ্রাহকদের ঝামেলামুক্ত পরিষেবা নিশ্চিত করতে স্মার্ট প্রিপেমেন্ট মিটার স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। পরিসংখ্যান অনুসারে, বিতরণ সংস্থাগুলো চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় ৩৮ লাখ ৭১ হাজার ১২৪ সিঙ্গেল ফেজ এবং থ্রি ফেজ স্মার্ট প্রিপেমেন্ট মিটার স্থাপন করেছে, যার মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ১৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৫০ স্মার্ট প্রিপেমেন্ট মিটার স্থাপন করেছে। এর মধ্যে ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৯২০ সিঙ্গেল ফেজ এবং ২৯ হাজার ৪৩০ থ্রি ফেজ। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) ১১ লাখ ১০ হাজার ৫৬৮টি সিঙ্গেল ফেজ এবং ১৩ হাজার ৬০০ থ্রি ফেজ স্মার্ট প্রিপেমেন্ট স্থাপন করেছে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের গত সাড়ে ১২ বছরে সর্বোচ্চ সাফল্য এসেছে বিদ্যুৎ খাতে। খাতটির অভাবনীয় সাফল্যে ইতোমধ্যে ৯৯ শতাংশ জনগোষ্ঠী বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। বিদ্যুৎ খাতের সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারিগর বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে গোটা দেশে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। আরইবির তৎপরতায় বিদ্যুতের সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ও গ্রাহকের সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি কমছে বিদ্যুতের সিস্টেম লসের হারও।

গত এক দশক আগেও বিদ্যুতের জন্য হাহাকার করতে হতো মানুষকে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহে বিশাল ঘাটতি থাকার কারণেই এমন হয়েছিল। কিন্তু এক দশক পর ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ স্লোগানে উজ্জীবিত হয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা বিদ্যুৎ খাতের দৃশ্যপট আমূল বদলে দিয়েছে। এখন শুধু শহরাঞ্চলেই নয়, বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে গ্রামীণ জনপদও। বিদ্যুতের জাদুর ছোঁয়ায় চাঙ্গা হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।

‘পল্লী বিদ্যুতায়ন সম্প্রসারণের মাধ্যমে ২৫ লাখ গ্রাহক সংযোগ’ প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগের ফলে পল্লী এলাকার জনসাধারণ বিপুল উপকৃত হচ্ছে। পল্লী এলাকার অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বর্তমান সরকার দেশের দ্রুততম অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ২০২১ সালের মধ্যে সারা দেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার রক্ষায় প্রকল্প বাস্তবায়নেও অবদান রেখে চলেছে পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)।

গত ১৩ এপ্রিল বিদ্যুৎ বিভাগের ওয়েব সাইটে ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতের অর্জনের একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়। সেখানে গত ১২ বছরের বিদ্যুৎ খাতের ঈর্ষণীয় সাফল্য উঠে আসে। প্রকাশিত তথ্য মতে, আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ছিলো ২৭টি। বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৪৭টি, ১২ বছরের নতুন স্থাপিত হয়েছে ১২০টি। ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো চার হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ১৭১ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়ণযোগ্য জ্বালানিসহ), অর্থাৎ ২০ হাজার ২২৯ মেগাওয়াট বৃদ্ধি পেয়েছে।

গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন সমপ্রসারণে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণের ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীর হার মাত্র ৩৬ শতাংশ থেকে ৯৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০০৯ সালে গ্রাহক সংখ্যা এক কোটি আট লাখ ছিলো। বর্তমানে রয়েছে তিন কোটি ৯৮ লাখ, অর্থাৎ ১২ বছরে বেড়েছে দুই কোটি ৯০ লাখ।

মোট সঞ্চালন লাইন ২০০৯ সালে ছিলো আট হাজার সা.কি.মি., বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৭৩২, অর্থাৎ বেড়েছে চার হাজার ৭৩২ সা.কি.মি.। বিতরণ লাইন ছিলো দুই লাখ ৬০ হাজার, বর্তমানে হয়েছে ছয় লাখ ৬০ হাজার, বেড়েছে তিন লাখ ৭৪ হাজার। বিদ্যুৎ সুবিধাভোগীদের হার ছিলো ৪৭ শতাংশ, বর্তমানে হয়েছে ৯৯ শতাংশ।

গত ১২ বছরে বিতরণ সিস্টেম লস কমেছে ৫.৬০ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সিস্টেম লস ছিলো ১৪.৩৩, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সিস্টেম লস হয়েছে ৮.৭৩। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৫১২ কিলোওয়াট ঘণ্টা। ২০০৯ সালে ছিলো ২২০  কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ বেড়েছে ২৯২ কিলোওয়াট।

মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি বাড়ি আলোকিত করার টার্গেট নিয়ে কাজ চলমান রয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ ২৪ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৩০ সাল নাগাদ ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ৪১ সাল নাগাদ ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চলতি বছরের বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে, বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার ১৭১ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভ ও নবায়ণযোগ্য জ্বালানিসহ)।

২০৩০ সালের মধ্যে সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, আধুনিক এবং টেকসই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়ন করে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার দৃপ্ত শপথ নিয়ে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) তার ৮০টি পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে সারা দেশে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নিঝুম ও কুতুবদিয়া দ্বীপ, সন্দ্বীপ, শরীয়তপুর, চাঁদপুরের চরাঞ্চলসহ দুর্গম এলাকায় ইতোমধ্যে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানো হয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই