Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

তালিকায় নেই সাত কলেজ

মাহমুদুল হাসান ও ওবাইদুর সাঈদ

জুন ৩০, ২০২১, ০৭:৪৫ পিএম


তালিকায় নেই সাত কলেজ
  • শিক্ষার্থীদের টিকার দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ
  • ইউজিসির তালিকায় নেই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা
  • তালিকার বাইরে টিকা দেবে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
  • সাত কলেজের আবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় ৩০ হাজার
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কী সাত কলেজ খুলবে না
  • টিকা নিশ্চিত না হলে দীর্ঘ হতে পারে সেশনজট

করোনার প্রকোপে স্থবির শিক্ষাব্যবস্থা। গেলো বছর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষা। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ঘোষণা এলেও বাস্তবায়ন নেই। ৫ শতাংশের নিচে সংক্রমণ শনাক্তের হার নেমে এলে খোলা হবে বলেই কেটে গেছে গত দেড় বছর। অটোপাস মিলেছে এইচএসসিতে। তবে টিকাদানের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার দুয়ার খুলতে নানা উপায় খোঁজা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের টিকাদান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন। গত মঙ্গলবার সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, ‘স্কুল থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষায় যারা আছে সবাই যেনো ভ্যাকসিন পায় এবং দ্রুত যেনো আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারি, সেই ব্যবস্থা নেবো।’ এর আগে উচ্চ শিক্ষার ক্ষতি কমিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) শিক্ষার্থীদের টিকাদানের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ জন্য শুরুতে আবাসিক শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল তারা। সেই তালিকার ভিক্তিতে আজ বৃহস্পতিবার থেকে উচ্চ শিক্ষার শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৩৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক লাখ তিন হাজার ১৫২ জন আবাসিক শিক্ষার্থীর তালিকা দিয়েছে ইউজিসি। গতকাল বুধবার থেকে সুরক্ষা ডিজিটাল প্লাটফর্মে তাদের নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রায় ৩০ হাজারেও বেশি আবাসিক শিক্ষার্থী থাকার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা টিকা পাচ্ছেন না। কবে নাগাদ তারা টিকা পাবেন এ বিষয়েও কেউ সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য দিতে পারেনি।

এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেছেন, ‘ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবাসিক শিক্ষার্থীদের তালিকা চেয়েছে। আমরা আমাদের আবাসিক শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠিয়েছি। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। এ বিষয়ে সাত কলেজ অধ্যক্ষ ও শিক্ষকরা ভালো বলতে পারবেন।’ অন্যদিকে সাত কলেজ প্রশাসন দায়সারাভাবে বলছে, শিক্ষার্থীদের টিকাদান কর্মসূচি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত। এক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। ইউজিসি সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ২২০টি আবাসিক হল রয়েছে। এগুলোতে আবাসিক শিক্ষার্থী প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এক লাখ তিন হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক  ডা. মো. শামসুল হক বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তালিকার আলোকে অগ্রাধিকার ভিক্তিতে শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়া হবে।’ মহামারিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের প্রায় আড়াই লাখ শিক্ষার্থী লম্বা সেশনজটে রয়েছেন। তার মধ্যে টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে নিয়ন্ত্রক প্রশাসনের এমন উদাসীনতায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এক্ষেত্রে তারা উচ্চ শিক্ষায় বৈষম্যের চিত্র দেখতে পাচ্ছেন। দুই শিক্ষার্থীর কথায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী হুমায়রা সিমু বলেন, ‘সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা যেহেতু বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত তাই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টিকা তাদেরই দেখভাল করতে হবে। ইউজিসিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের তালিকা না পাঠানোয় আমি হতাশ ও বিরক্ত। আমাদের এমনিতেই অনেক সেশনজট এট মধ্যে আবার করোনায় আরো সেশনজটের হিড়িক পড়ছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি অনতিবিলম্বে নতুন করে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের তালিকা ঢাবি প্রশাসন ইউজিসিতে পাঠাবে এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের টিকা নিশ্চিত করতে হবে।’ ঢাকা কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুস শাহাদাত সাকিব বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টিকা পাবে আর সাত কলেজ পাবে না, তাহলে আমাদের ভবিষ্যত কী হবে? আমরা কি টিকা পাবো না, ক্যাম্পাসে ফিরবো না। আমরা কি সেশনজটে পড়ে থাকবো এভাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত তাদের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নাম ইউজিসির কাছে পাঠানো এবং আমাদের অনতিবিলম্বে টিকা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যবস্থা করা।’ সাত কলেজ সূত্রমতে, ঢাবি অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি তিতুমীর কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজে আবাসিক হল রয়েছে। এসব কলেজে প্রায় ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছেন।

সাত কলেজের সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, ‘আমরা যোগাযোগ করছি যাতে আমাদের শিক্ষার্থীরা টিকা পায়। করোনার টিকা যেহেতু উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয় সেহেতু তাদের উপর ডিপেন্ড করবে কবে তারা টিকা দেবেন। টিকা এভেইলেবল হলে সেক্ষেত্রে আমরা ও টিকার জন্য কথা বলবো।’

আমারসংবাদ/জেআই