Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

রঙিন পর্দার নায়িকা

রকিব হোসেন

জুলাই ৭, ২০২১, ০৬:৩৫ পিএম


রঙিন পর্দার নায়িকা

শুরুতে চলচ্চিত্রের প্রতি তেমন কোনো আগ্রহই ছিল না চিত্রনায়িকা শিরীন শিলার। নাটকেই কাজ করতেন তিনি। গুণী অভিনেত্রী রাশেদা চৌধুরী একটি নাটকের সেটে তাকে দেখে, তার নায়িকাসূলভ আচরণ দর্শন করে শিলাকে বলেছিলেন, তুমি চলচ্চিত্রে কাজ করলে ভালো করবে। তোমার মধ্যে নায়িকা নায়িকা একটা ব্যাপার আছে। কিন্তু শিলা তখন রাশেদা চৌধুরীকে সবিনয়ে জানিয়েছিলেন এই মাধ্যমে কাজের প্রতি তার কোনো আগ্রহই নেই। এরপরও রাশেদা চৌধুরী তাকে নিজের মোবাইল নাম্বারটা দিয়ে বলেন, যদি কখনো তোমার সিদ্ধান্তের পরিবর্তন হয়, তবে তুমি আমাকে কল করো।

এভাবে দিন যায় মাস আসে। ওই সময় বেশকিছু ভালো ভালো চলচ্চিত্র মুক্তি পায় এ দেশে। মাহিয়া মাহি ও বাপ্পী চৌধুরীর ‘ভালোবাসার রং’ ছবিটিও এই মিছিলে ছিল। ফলে শিরীন শিলা ঠিক করেন এখন চলচ্চিত্রে কাজ করা যায়। ছোটবেলা থেকেই নায়িকাদের মতো গেটআপ নিয়ে চলা শিলাকে চলচ্চিত্র হাতছানি দিয়ে ডাকতে শুরু করে। সময় করে একদিন রাশেদা চৌধুরীর সঙ্গে চলচ্চিত্রপাড়ায় যাওয়া হয় শিরীন শিলার। প্রাচী কথাচিত্রের আকবর নতুন এই মুখকে পরিচয় করিয়ে দেন পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমনের সাথে। নতুন মুখের মাঝে নতুন মায়া, নতুন চোখে নতুন জাদু খুঁজে পান পরিচালক।

শিরীন শিলা বলেন, ‘এই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের হিটম্যান ছবিতে আমাকে শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের সঙ্গে প্যারালাল নায়িকা হওয়ার প্রস্তাব দেন পরিচালক ও প্রযোজক। কিন্তু প্রথম ছবিতেই আমি এ ধরনের চরিত্রে কাজ করতে চাইনি। কিন্তু তারা আমাকে বোঝালেন তুমি এটাকে স্ক্রিন টেস্ট হিসেবে নিতে পারো। ছবিটি বড় বাজেটের। 

[quote author="" layout="right"]স্মৃতিগুলো মনে পড়লে দারুণ ভালো-লাগা কাজ করে আমার ভেতর। ভাবি, আমি এক কিংবদন্তির সান্নিধ্য পেয়েছি। আবেগে চোখে জলও এসে পড়ে।[/quote]

দেখ না দর্শক তোমাকে কীভাবে গ্রহণ করে। সবকিছু ভেবে আমি ছবিটি করতে রাজি হই। এরপর ছবিটি মুক্তি পেলে দর্শক আমাকে দারুণভাবে গ্রহণ  করেন। এই ছবিতে আমার লিপে একটি গান ছিল  ‘দেখ না ও রশিয়া’ শিরোনামের। এটি বেশ দর্শকপ্রিয়তা পায়। ছবিতে আমার চরিত্রের পরিধি বড় ছিল না। কিন্তু অল্প উপস্থিতিতেও আমার নাচ, গান ও অভিনয় নির্মাতামহলে সাড়া জাগায়।’

শিরীন শিলার অভিনীত মুক্তি পাওয়া অন্য ছবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে— কাশেম মণ্ডলের ‘ক্ষণিকের ভালোবাসা’ ও মুশফিকুর রহমান গুলজারের ‘মন জানে না মনের ঠিকানা’ ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘মন জানে না মনের ঠিকানা’ ছবিতে নায়করাজ রাজ্জাকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা শিরীন শিলার স্মৃতির মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে আজীবন।

শিলা বলেন ‘এটা ছিল নায়করাজ রাজ্জাক আঙ্কেলের শেষ ছবি। এই ছবিতে কাজ করতে গিয়ে তার অনেক আদর ও স্নেহ পেয়েছি। ছবিতে আমি ও পরীমনি জমজ বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছি। দারুণ একটি গল্পের ছবি এটি। শুটিংয়ে রাজ্জাক আঙ্কেল ও আমাদের মেকআপ রুম পাশাপাশি ছিল। আমি একদিন তার মেকআপ রুমে ঢোকার পর দেখি কয়েকজন লোক সেখানে। আঙ্কেল তাদের বের হয়ে যেতে বললেন। তাদের সঙ্গে আমাকে বেরিয়ে যেতে দেখে তিনি বলে উঠলেন, তোকে না বাবু, আমি ওদের বলেছি। এরপর আমার সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বললেন। আমাদের সেটে তখন প্রচণ্ড গরম। তিনি আমাকে ডেকে তার পাশে ফ্যানের নিচে বসাতেন। এই স্মৃতিগুলো মনে পড়লে দারুণ ভালোলাগা কাজ করে আমার ভেতর। ভাবি, আমি এক কিংবদন্তির সান্নিধ্য পেয়েছি। আবেগে চোখে জলও এসে পড়ে।’

শিরীন শিলা এরই মধ্যে বেশকিছু ছবিতে কাজ করেছেন। আর তা হলো- ‘মিয়াবিবি রাজি’, ‘এক কোটি টাকা’, ‘এক মিনিট’, ‘সাহসী যোদ্ধা’, ‘আমার সিদ্ধান্ত’, ‘বিলের জলে শাপলা ভাসে’ ও ‘দরদ’। নায়িকা সম্প্রতি ‘ঘর ভাঙা সংসার’ শিরোনামের একটি ছবির কাজ শেষ করেছেন। এতে মনোয়ার হোসেন ডিপজলের সঙ্গে জুটি হিসেবে দেখা যাবে তাকে। ছবিটি পরিচালনা করেছেন মনতাজুর রহমান আকবর।

শিরীন শিলা বলেন, ‘আমি একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী হতে চাই। শাবনূর (চিত্রনায়িকা) আপু দর্শকদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছেন তার কাজের মাধ্যমে। আমি তার মতো হয়তো পাবো না। কারণ দেশীয় চলচ্চিত্রের সেই সোনালি যুগ আর নেই। তবে যদি কিছুটা পাই তাতেই আমি নিজেকে ধন্য বলে মনে করবো।’

আমারসংবাদ/জেআই