Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

সরকারের সিদ্ধান্তে খুশি মানুষ

জুলাই ১২, ২০২১, ০৭:৪০ পিএম


সরকারের সিদ্ধান্তে খুশি মানুষ
  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত সুন্দর হয়েছে
  • এখন প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা
  • সব হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ ও টিকা প্রদান নিশ্চিত করা
  • অধিক যানবাহন থাকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতায়াতে ঝুঁকি কমবে
  • আয় না থাকলে মানুষের জীবন চলবে না, সেদিকে নজর দেয়া দরকার
  • লকডাউনের বিকল্প খোঁজা দরকার  আইন না মানলে গ্রেপ্তার

সব মহলেই সরকারের প্রশংসা— কঠোর বিধিনিষেধ আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শিথিল করার ঘোষণায়। গত ১ জুলাই থেকে দুই দফায় কঠোর  বিধিনিষেধে মানুষ বড় বিপর্যয়ে পড়েছে। দীর্ঘ সময় করোনায় ৯০ শতাংশ লোক রুটি-রোজগারের সমস্যায় পড়েছে। অস্বাভাবিক জীবন যাপন শুরু হয় ঘরে ঘরে।  ঈদুল আজহা উপলক্ষে আগামী ১৫ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত শিথিলের ইঙ্গিতের পর প্রশংসায় ভাসছে সরকার। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু খুলে দেয়া— এ সিদ্ধান্ত সুন্দর হয়েছে। এখন  প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত,  প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা, যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে টিকা দেয়া। মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষভাবে দায়িত্ব দেয়া। মানুষ রাস্তায় বের হলে গ্রেপ্তারের পরিবর্তে মুখে মাস্ক না পরলে গ্রেপ্তার ও জরিমানার আইন করা দরকার। এছাড়া বহু শিক্ষার্থী গত ঈদেও মা-বাবার কাছে যেতে পারেনি। অনেক কৃষক কোরবানির জন্য গরু লালন পালন করেছেন। গরু বাজারে না তুলতে পারলে লোকসানে পড়বেন। দুঃসময়ে রয়েছে সকল সেক্টরের মানুষ। এছাড়া সমপ্রতি বেশ কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে, লকডাউনে মানুষ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৮০ শতাংশ লোক ব্যবসার পুঁজি ভেঙে খাওয়া শুরু করেছে। ৬০ শতাংশ লোক সঞ্চয় ভেঙে ফেলেছে। ৮৬ লাখ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর দুঃসময় চলছে। কর্মসংস্থান হারিয়েছে ২৬ লাখের বেশি মানুষ। দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। দরিদ্র হয়েছেন দুই কোটি ৪৫ লাখ মানুষ।

আফসার উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগতম। লকডাউন, শাটডাউনের বিকল্প ভাবা উচিত। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে এটি উত্তম পদ্ধতি নয়। কেউ শখ করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গাড়িতে চলা কিংবা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজে যায় না। ইনকাম না হলে জীবন চলে না এ ধরনের মানুষের সংখ্যাই বেশি। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু খুলে দেয়া— এ সিদ্ধান্ত সুন্দর হয়েছে বলে মনে করছি।’ শামসুর রহমান সূর্য বলেন, ‘যেহেতু লকডাউন কার্যকর করা কঠিন এবং এ পদ্ধতির মাধ্যমে তেমন কোনো ফল বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে না, তাই প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত,  প্রতিটি হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা, যাতে কোনো রোগী অক্সিজেনের অভাবে মারা না যায়। তৃতীয়ত, যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে টিকা দেয়া। এ বিষয়গুলো সরকার গুরুত্ব সহকারে কার্যকর করলেই একমাত্র করোনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।’

সাখাওয়াত মিশু বলেন, ‘না চালু করে উপায় আছে? মানুষ তো ঈদ করতে যাবেই। গাড়ি চালু থাকলে সংক্রমণ বরং কম হতে পারে। স্বাস্থ্যবিধিটা কার্যকর করুন।’ ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘আমার মনে হয় করোনা নিয়ন্ত্রণে লকডাউন না দিয়ে সবার মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে। যেহেতু এখন সংক্রমণ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে তাই মানুষের যাতায়াতে বাধা না দিয়ে আইন করে মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি সবাইকে দ্রুত ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তাহলে সংক্রমণ কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।’ মাহমুদুল আলম সোহেব বলেন, ‘আমাদের লকডাউনের বিকল্প খোঁজা দরকার। রাস্তায় বের হলে গ্রেপ্তারের পরিবর্তে মুখে মাস্ক না পরলে গ্রেপ্তার ও জরিমানার আইন করা দরকার।’

এবাদুল ইসলাম বাদল বলেন, ‘একদম সঠিক সিদ্ধান্ত। একজন কৃষক নিজের জমানো পুঁজি দিয়ে গরু কিনে লালন পালন করেন একটু লাভে কোরবানিতে বিক্রির জন্য। অনেকেই আবার লোন করে গরু পালেন। এরা বিক্রি করতে না পারলে চরম ভোগান্তিতে পড়বেন। বহু শিক্ষার্থী আছে গত ঈদে লকডাউনে বাবা-মায়ের কাছে যেতে পারেনি, কোরবানিতেও যেতে না পারলে মা-বাবার সাথে তার ঈদও মাটি হবে। বাসায় যেতে না পারলে শহরে থেকে যে খাওয়া দাওয়া করবে তারও ব্যবস্থা নেই। কারণ হোটেল মোটেল সব বন্ধ। লকডাউনের দোহাই দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম তো হু হু করেই বেড়ে গেছে। এখন যদি একটু কমে। বাঙালি সবাই ঈদে বাড়ি যাবে না, এমন কিন্তু নয়। অনেকে পথ ঠিকই খুঁজে বের করতো। সে ক্ষেত্রে একজনের কোলে অন্যজন বসে গ্রামে যাওয়া লাগতো। এখন অন্তত স্বাস্থ্যবিধি মেনে দুই সিটে একজন করে যেতে পারবে এবং সেই রকমই করা উচিত। সুতরাং প্রত্যেক ঈদের আগে লকডাউন লকডাউন না খেলে এমন সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সেটা কম্পারেটিভলি সবার জন্যই ভালো।’

জাহিদ নুরানি বলেন, ‘প্রথমত এত ঘনবসতির দেশে লকডাউন কার্যকর করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই আমাদের একমাত্র সমাধান হলো টিকা প্রদান এবং হার্ড ইমিউনিটি গঠন। তাই আর লকডাউন না দিয়ে ব্যবসায়ী এবং গরিবদের অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’ ব্যবসায়ী আলভীক বলেন, ‘লকডাউন একমাত্র কার্যকর সিদ্ধান্ত নয়, রাস্তায় ঠিকই মানুষ। বরং সরকারের বর্তমান সিদ্ধান্ত সঠিক হবে, গাদাগাদি করে না গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাওয়াটা সঠিক হবে।’ চৌধুরী সোহাগ বলেন, ‘গণপরিবহন স্বাস্থ্যবিধি মেনে আরও আগে খোলা উচিত ছিলো! তাহলে মানুষের এতো হয়রানি এবং  টাকার অপচয়টা হতো না। গণপরিবহন বন্ধ থাকলে তো যানবাহনে চাপ স্বাভাবিকভাবে বাড়বে, এতে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়বে।’ আকলিমা জান্নাত শিলা বলেন, ‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত এখন বর্তমানে বাস্তবমুখী। লকডাউন বা শাটডাউনের বিকল্প খোঁজার সময় এসেছে।  এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। দুটি বছর শেষ হয়ে গেলো জীবন থেকে।’ জামেনুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিদিন গড়ে সহস্রাধিক লোক মারা যায়। করোনায় ২৩০ জনের মৃত্যু হলে অন্য রোগে কতজন মারা যায়? সবগুলোর তথ্য প্রকাশ করেন না কেন? করোনাকে বেশি প্রধান্য দিতে গিয়ে অন্য রোগের মৃতুহার অনেকগুণ বেশি বেড়ে গেছে, এ ব্যাপারে কোনো খেয়াল নেই।’

আমারসংবাদ/জেআই