Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

সরকার সহযোগিতা করলে ঘুরে দাঁড়াবে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা

জুলাই ১২, ২০২১, ০৭:৪০ পিএম


সরকার সহযোগিতা করলে ঘুরে দাঁড়াবে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা
  • করোনাকালে কেমন চলছে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা? করোনা নিয়ন্ত্রণে না এলে ব্যবসার কী অবস্থা হবে? বিনিয়োগ-কর্মসংস্থান পরিস্থিতি কী হবে আগামী দিনে— এসব বিষয় নিয়ে আমার সংবাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রথম যুগ্ম মহাসচিব মো. ফিরোজ আলম সুমন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এম এ আহাদ শাহীন

আমার সংবাদ : করোনাকালে কেমন চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য?

মো. ফিরোজ আলম সুমন : প্রথমত শোকরিয়া জ্ঞাপন করবো আল্লাহর কাছে এখনো সুস্থ আছি, বেঁচে আছি। আর ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা হলো  মাঝখানে আমাদের দোকানপাট খোলা ছিলো। রাস্তা ঘাটে লোকজন ছিলো। খাবারের চাহিদা ছিলো। ক্রেতারা খাবার কিনে নিতো। স্পেশাল লকডাউনে রাস্তায় কোনো কিছু খোলা নেই। মানুষ অনলাইনের মধ্যে খাবার কিনছে। সশরীরে কেউ আসছে না। এতে আমাদের সাপোর্ট হচ্ছে ৩ থেকে ৫ শতাংশ। রেস্টুরেন্টে যদি আমরা ৩ থেকে ৫ শতাংশ বিক্রি ধরি তাও ঢাকার সব রেস্টুরেন্ট না। আর মফস্বলে তো নাই। অলরেডি কক্সবাজার, চাঁদপুর, নড়াইল, কুড়িগ্রাম এসব এলাকার রেস্টুরেন্ট মালিকরা সব বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ ওনাদের ডিভাইস নাই। সব ঢাকাকেন্দ্রিক। আর ঢাকাকে দিয়ে সারা বাংলাদেশকে বিশ্লেষণ করা যাবে না। আরেকটা বিষয় হচ্ছে রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের আমাদের থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হয়। খাওয়ার ব্যবস্থাও আমরা করি। এখন ধরেন আমরা ২০ শতাংশ বা ৩০ শতাংশ স্টাফ দিয়ে অপারেশন চালাচ্ছি। স্টাফ বিদায় করলে স্টাফ পাওয়া যায় না। এখন আমাদের স্টাফগুলো আমাদের কাছে রয়ে গেছে। এদের দৈনিক তিন থেকে চার বেলা খাওয়াতে হয়। আমার যদি ৫০ জন স্টাফ থাকে তাদের মধ্যে যদি ২০০ টাকা করেও খাবার খরচ ধরি তাও আমাকে প্রতিদিন ৭৫ হাজার টাকা খাবার খরচ গুনতে হয়। এদের তো খাওয়াইয়া বাঁচাইয়া রাখতে হবে। কি করবো বুঝতেছি না। নেই কোনো ব্যবসায়িক লোন। নেই কোনো প্রণোদনা। নেই কোনো স্টাফদের জন্য সুযোগ-সুবিধা। আমাদের খুব দুর্বিষহ অবস্থা।

আমার সংবাদ : আপনারা সরকারের কাছে কোনো ধরনের সহযোগিতা চাচ্ছেন কি-না?

মো. ফিরোজ আলম সুমন : হ্যাঁ, আমরা সহযোগিতা চেয়েছি। আমরা সরকারের কাছে লিস্টও পাঠিয়েছি। এখনো পর্যন্ত পাইনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সরকারি কোষাগারে ছয় হাজার কোটি টাকা চলে গেছে। সেখান থেকে আমরা একটি টাকাও প্রণোদনা পাইনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটা নোট আছে সেটা হলো পচনশীল দ্রব্যে লোন পাওয়া যায় না। আমরা দাবি করছি এটি উঠিয়ে দেয়া হোক। সহজ শর্তে লোন দেয়া হোক। আমাদের প্রণোদনা দেয়া হোক। আমরা সহজ শর্তে লোন চাই। আমরা অন্যায্য কিছু চাই না। আমরা আগামীর প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ খাবারের ইন্ডাস্ট্রি রেখে যেতে চাই। আমাদের বাচ্চাদের জন্য।

আমার সংবাদ : বর্তমানে রেস্টুরেন্ট তো খোলা আছে না-কি?

মো. ফিরোজ আলম সুমন : আমাদের ঢাকা শহরের অলমোস্ট রেস্টুরেন্ট খোলা আছে। আমাদের ১০০ পার্সেন্ট রেস্টুরেরন্টর মধ্যে অলমোস্ট ২০ থেকে ৩০ শতাংশ রেস্টুরেন্ট খোলা আছে এবং কাস্টমার শূন্যতার কারণে অধিকাংশ রেস্টুরেন্টই নাকি বন্ধ করে দিচ্ছে। আমি যা বলেছি স্টাফদের খাওয়াইতে হয়। খাবারের বাজার লাগে। আর মফস্বল এলাকায় তো সবাই বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের কাছে ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস নেই। বিকল্প কোনো ডিভাইসও নেই খাবার বিক্রির জন্য।

আমার সংবাদ : করোনা নিয়ন্ত্রণে না এলে ব্যবসার কী অবস্থা হবে?

মো. ফিরোজ আলম সুমন : অলরেডি আমাদের ৩০ শতাংশ রেস্টুরেন্ট চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। ৫০ শতাংশ রেস্টুরেন্টের মালিকানা বদল হয়েছে। এই অবস্থায় আমরা কতটুকু টিকে থাকতে পারবো সেটা আমরা এখনো জানি না। বাকিটা আল্লাহ ভালো জানে। আমরা ঘুরে দাঁড়াতে চাই। গার্মেন্টশিল্পের পর আমাদের বর্তমান অবস্থান। আমরা ৩০ লাখ শ্রমিক নিয়ে কাজ করি। এখানে দুই কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। কৃষিপণ্য যা আছে সেটা সম্পূর্ণ আমাদের ওপর।

আমার সংবাদ : সামনে বিনিয়োগের পরিস্থিতি কেমন দেখতে পাচ্ছেন?

মো. ফিরোজ আলম সুমন : সামনের পরিস্থিতি সর্ম্পূণ ঘোলা দেখতে পাচ্ছি। অন্ধকার। এখন সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে আমরা আশা করছি আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

আমার সংবাদ : বাজেটকে আপনারা কিভাবে মূল্যায়ন করছেন?

মো. ফিরোজ আলম সুমন : বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একজন ব্যবসা-বান্ধব মানুষ। ব্যবসায়ীদের কথা সব সময় চিন্তা করেন। আমার এই সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা আছে। তিনি ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করেন বলেই আমরা একটা দাবি করেছিলাম ভ্যাট নিয়ে। প্রস্তাবিত বাজেটের পরও সংস্কার করে আমাদের দাবি পূরণ করেছেন। তিনি ব্যবসায়ীদের কথা চিন্তা করেন। মানুষের কথা চিন্তা করেন।

আমরা একটা অথরিটির মধ্যে আসতে চাই। আমাদের একটা অথরিটি থাকবে। যারা আমাদের মনিটরিং করবে। অথরিটির যত নিয়ম কানুন থাকবে আমরা সকল নিয়মকানুন মেনে কাজ করবো। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই।

আমার সংবাদ : আগামী দিনে কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?

মো. ফিরোজ আলম সুমন : আগামী দিনে চ্যালেঞ্জ হলো আমরা এখনো পুঁজি হারাচ্ছি। অনেকে হারিয়ে ফেলেছে। আমাদের ব্যাকআপ নেই। শ্রমিকরা এই সেক্টরে কাজ না পেয়ে অন্য সেক্টরে চলে যাবে। আর আমাদের আর্থিক ব্যাকআপটা না থাকার কারণে এই ব্যবসা মুখথুবড়ে পড়বে। আর মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলে মানুষ ক্রয় ক্ষমতা হারাবে।

আমারসংবাদ/জেআই