Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

পর্যটনকে বিশ্বমণ্ডলে নিতে তৎপর ট্যুরিজম বোর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ১৪, ২০২১, ০৭:১০ পিএম


পর্যটনকে বিশ্বমণ্ডলে নিতে তৎপর ট্যুরিজম বোর্ড

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অপরূপ বাংলাদেশ দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অতি প্রিয়। বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে পর্যটনশিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা অপরিসীম। পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ, তিন পার্বত্য জেলা, কুয়াকাটা ছাড়াও প্রতিটি জেলায় রয়েছে পর্যটন সম্ভাবনাময় এলাকা। প্রতিটি জেলায় প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ, মিনার, লেক, নদ-নদীর অববাহিকা, পাহাড়, অরণ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের মুগ্ধ করে। পর্যটন সম্ভাবনা এলাকাগুলো আকর্ষণীয় করে তুলতে বিশ্বপরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে ‘পর্যটন গন্তব্য’ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড (বিটিবি)।

বিটিবি সূত্র মতে, প্রযুক্তিময় বিশ্বে পর্যটনশিল্প একক বৃহত্তম অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। পাশাপাশি এই শিল্পটি তার বহুমাত্রিক বৈশিষ্ট্যতার কারণে বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সাথে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। অফুরন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বাংলাদেশে পর্যটনশিল্প খুবই সম্ভাবনাময়। পৃথিবীর যেকোনো পর্যটককে আকৃষ্ট করার মতো সকল পর্যটন আকর্ষণীয় উপাদান বাংলাদেশে বিদ্যমান। অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা গেলে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান পর্যটন গন্তব্য হিসেবে গড়ে উঠবে। সুপরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে বিশ্বমানের পর্যটন পণ্য ও সেবা নিশ্চিতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।  বিটিবি সূত্র আরও জানায়, পর্যটনশিল্পের বিকাশের ওপর বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নও জড়িত। পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটলে কর্মসংস্থান ঘটবে ও বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচন সফল হবে। এ শিল্পের বহুমাত্রিকতার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্ভাবনা তৈরি হয়। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। জেলাভিত্তিক পর্যটন এলাকা গড়ে তোলার পাশাপাশি ঐতিহ্যের প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এতে বেকারত্ব হ্রাস, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও বিশ্বময় বাংলাদেশের পর্যটন পরিচিতি পাবে। এসব সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে গোটা দেশের পর্যটন এলাকা ঢেলে সাজাতে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। পর্যটন মহাপরিকল্পনায় পাল্টে যাবে দেশের পর্যটনশিল্পের চিত্র। পর্যটন খাতের মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড।

গত বছর মার্চে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর থেকে অর্থনীতির প্রতিটি খাতেই স্থবিরতা দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো পর্যটন খাত। করোনা ভাইরাসের কারণে পর্যটন খাতে ধস নেমে এসেছিল। ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে পর্যটনশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসা ও কর্মসংস্থান। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের শুরুতে খুলে দেয়া হয় পর্যটন খাত। করোনার প্রভাব কাটাতে পর্যটন কেন্দ্রগুলো আকর্ষণীয়, নিরাপত্তা জোরদার, শিল্পের বিকাশ, উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে ট্যুরিজম বোর্ড। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার। আসন্ন ঈদুল আজহা ঘিরে পর্যটন এলাকাগুলো লোকে লোকারণ্য হয়ে যেতো। কিন্তু করোনা বেড়ে যাওয়ায় ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্রে গমন ও জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান (যেমন- বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক এবং রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান) পরিহার করার নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

বিটিবি সূত্র জানায়, পর্যটনশিল্পের সবটুকু সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে মডেল হতে পারে। করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনীতিতে পর্যটন খাত বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য পর্যটন খাতের সব ধরনের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে জেলাভিত্তিক পর্যটন এলাকাগুলোকে আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ এবং বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছে ট্যুরিজম বোর্ড। পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধি, পর্যটন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যটকদের সারা দেশে মানসম্মত পর্যটন সুবিধাদি সৃষ্টি, দেশের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় স্থানে পর্যটন সুবিধাদি সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ উৎসাহিত করার উদ্যোগ নেয়া হবে। পর্যটন এলাকগুলোতে কিভাবে স্থানীয় শিল্পের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গড়ে তোলা যায়, সে প্রচেষ্টা নেয়া হচ্ছে। যার ফলে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ঘটবে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করার নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। নির্মাণাধীন সেতুটি ঘিরে জাতীয় অর্থনীতিতে হাতছানি দিচ্ছে নতুন সূচক। এর অন্যতম উপাদান হতে যাচ্ছে পর্যটন। পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুরে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখা দিয়েছে পর্যটন খাত। যা এ অঞ্চলের ও দেশীয় সামগ্রিক অর্থনীতিতে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে কাজ করছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। শুধু পদ্মা সেতু নয়, নদী এবং হাওর, বড় আকারের বিল বা জলমহাল ঘিরেও কিভাবে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলা যায়, তা নিয়েও কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব উদ্যোগ এবং বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করছে ট্যুরিজম বোর্ড। বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোকাম্মেল হোসেন ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদের নেতৃত্বে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বাংলাদেশের পর্যটন এলাকা বিশ্বপরিমণ্ডলে তুলে ধরতে নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রয়েছে নিজস্ব আইকনিক ল্যান্ডমার্ক। যেমন ফ্রান্সের আইফিল টাওয়ার, অস্ট্রেলিয়ার অপেরা হাউজ। বাংলাদেশকেও নিজস্ব কোনো ল্যান্ডমার্ক দিয়ে স্বতন্ত্রভাবে বিশ্বে পরিচিত করা যায় কি-না, এমন নামের প্রস্তাব আহ্বান করেছে ট্যুরিজম বোর্ড। পর্যটনের সম্ভাবনা তুলে ধরতে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড নেম হিসেবে বিশ্বময় প্রচারণা চালাচ্ছে বোর্ড। নামটি দীর্ঘদিন ব্যবহূত হওয়ায় পর্যটনশিল্পকে নতুনভাবে বিশ্বজুড়ে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের জন্য নতুন ব্যান্ড নেম আহ্বান করেছে ট্যুরিজম বোর্ড। প্রস্তাবিত নামের সংক্ষিপ্ত যৌক্তিকতা তুলে ধরতে বলা হয়েছে। নির্বাচিত ব্র্যান্ড নেম প্রস্তাবকারী পাবেন আকর্ষণীয় পুরস্কার।

আমারসংবাদ/জেআই