নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ১৫, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম
স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে গতকাল রাজধানীতে ছিলো লাখো মানুষের ঢল। টানা ২১ দিন পর কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল থাকায় দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ চলাচল শুরু করেছে সব ধরনের গণপরিবহন। ঈদকে সামনে রেখে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেই আগেভাগে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। সব ধরনের গণপরিবহন চালু হওয়ায় রাজধানীর সড়কগুলোতে দেখা গেছে দীর্ঘ যানজট। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে কঠোর কড়াকড়ি থাকলেও রাস্তাঘাটে অনেকের মুখে মাস্ক ছিলো না। অনেকে আবার মাস্ক ঝুলিয়ে রেখেছেন থুতনিতে। বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ায় দোকানপাট, মার্কেট— সবই খুলে গেছে। দীর্ঘদিন পর মার্কেটগুলো খুললেও সেভাবে কোনো ক্রেতার দেখা মেলেনি। যদিও গতকাল ফুটপাথ ছিলো হকারদের দখলে।
জানা যায়, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ দুই সপ্তাহ পর শিথিল করেছে সরকার। ঈদকে বিবেচনায় রেখে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় চালু হয়েছে বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন। খোলা হয়েছে সব ধরনের মার্কেট। দীর্ঘদিন পর খুলেছে ফুটপাথের দোকানপাট। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে ঘরমুখী মানুষের ঢল দেখা গেছে। কঠোর লকডাউন শিথিল ও ঈদে নাড়ির টানে গ্রামের দিকে হুমড়ি খেয়ে ছুটছে তারা। তবে সব স্থানে ঘরমুখো মানুষকে দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। দীর্ঘ লাইনের যানজট দেখা গেছে রাজধানীর প্রতিটি মহাসড়কে। রাজধানীতে চলাচল করা বেশির ভাগ গণপরিবহনেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখার কথা থাকলেও দাঁড় করিয়ে যাত্রী পরিবহন করছে বেশির ভাগ গণপরিবহন। দাঁড়িয়ে লোক নেয়া হলেও বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। চালকদের অভিযোগ, যাত্রীর তুলনায় গাড়ি কম থাকায় সবসময় সরকারি নির্দেশনা মানতে পারছেন না তারা। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, দীর্ঘ সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করেছেন যাত্রীরা। যেসব বাস আসছে তাতে ছিলো না তিল ধারণের ঠাঁই। টানা ২১ দিনের কঠোর বিধিনিষেধের পর লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় ভোর রাত থেকেই মানুষের ভিড় ছিলো সদরঘাটে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা একাধিক লঞ্চ সকালবেলা ভিড়েছে সদরঘাট পন্টুনে। বিধিনিষেধ শিথিলের প্রথম দিনেই লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে লঞ্চঘাটে এসে জড়ো হয়েছে হাজারো মানুষ। এদের কেউ চাঁদপুর, কেউ বরিশাল, কেউ পটুয়াখালী, কেউ হাতিয়া, কেউবা ভোলার উদ্দেশে রওনা হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে তৎপর রয়েছে নৌ-পুলিশ। মধ্যরাত থেকেই সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অতিরিক্ত নৌ-পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। লঞ্চে অর্ধেক যাত্রী নিশ্চিত করা এবং যাত্রীদের মাস্ক পরার বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করছে তারা। মাস্ক ছাড়া কোনো যাত্রী টার্মিনালে প্রবেশ করতে পারছে না।
ঈদকে বিবেচনায় রেখে ‘কঠোর লকডাউন’ কয়েক দিনের জন্য শিথিল করায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলেছে মার্কেট ও অন্যান্য বিপণিবিতান। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় সব দোকান খোলা। তবে হাতেগোনা কয়েকটি দোকান বন্ধ ছিলো। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ দোকানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে বেচাকেনা। তবে অধিকাংশ স্থানে কম ছিলো ক্রেতার উপস্থিতি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর দোকান গোছাতেই সময় গেছে ব্যবসায়ী ও কর্মীদের। এ প্রসঙ্গে আজিজ সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে দোকানের ভেতরে ধুলো জমেছে। দোকান খুলে সকাল থেকে সেগুলো ঝাড়া-মোছা করলাম। এখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতার দেখা মেলেনি। তবে শুক্রবার ক্রেতারা আসবে বলে আশা করছি। হাতিরপুলের ইস্টার্ন প্লাজার ব্যবসায়ী মাহমুদ আলম বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে যে ক্ষতিটা হয়েছে তা আসলে পুষিয়ে ওঠা সম্ভব না। তারপরও যে কয়েকটা দিন আছে সে কয়দিনে যেটুকু বিক্রি হবে তার ওপরেই ভরসা করছে ঈদ উদযাপন।
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী রাহাত মৃধা বলেন, আজকে প্রথম দিন হওয়ায় ক্রেতা খুবই কম। তারপরও কিছু মানুষ আসছে, দেখছে। আমরাও চেষ্টা করছি খুব বেশি বাঁধাধরা না রেখে পণ্য বিক্রি করে ফেলার। কেননা, অনেক দিন পড়ে থাকলে পোশাকও নষ্ট হয়ে যায়। আর সবসময় চেষ্টা করছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম পরিচালনার। এদিকে দুপুরের পর থেকে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় কিছুটা ভিড় লক্ষ করা গেছে। তবে শুক্রবার বিকেলে আরও বেশি ক্রেতা হবে বলেই প্রত্যাশা করছেন সব ব্যবসায়ী। এছাড়া শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটেও দেখা গেছে একই চিত্র। সেখানেও সেভাবে কোনো ক্রেতার দেখা মেলেনি।
কঠোর লকডাউনের সময় রাজধানীর ফুটপাথ ছিলো একেবারেই ফাঁকা। তবে দীর্ঘদিন পর গতকাল ফুটপাথ ছিলো হকারদের দখলে। তবে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, রাস্তায় থাকা ছোট ছোট দোকানে ভিড় করছেন ক্রেতারা। অনেক স্থানেই মানা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। কারো কারো কাছে মাস্ক আছে তো মুখে নেই, কারো আবার মুখে মাস্ক থাকলেও একে অন্যার উপর দিয়ে ক্রয় করছেন।
আমারসংবাদ/জেআই