Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

ঈদ রাজনীতি ম্লান

আবদুর রহিম ও রফিকুল ইসলাম

জুলাই ১৬, ২০২১, ০৭:৪০ পিএম


ঈদ রাজনীতি ম্লান
  • এবারো এমপি-মন্ত্রীদের বড় অংশ ঢাকায় অবস্থান করছেন
  • ঈদ উৎসবে গণভবনেও থাকছে না আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি
  • করোনার কারণে রাজনীতিতে ইতোমধ্যেই বড় প্রভাব পড়েছে
  • অনেক নেতা আক্রান্ত, মারাও গেছেন, অনেকে মৃত্যুশয্যায়
  • প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন ফোন ও ভিডিও কনফারেন্সে
  • কর্মীদের কাছে না পেলেও উপহার পাঠিয়ে দিচ্ছেন শীর্ষ নেতারা

সময় এখন ভয়ের। করোনায় মৃত্যু সময়ের অগ্নি স্লোগান। প্রতিদিনই দুই শতাধিক ছাড়াচ্ছে মৃত্যুসংখ্যা। শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের ওপরে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ঘরে ঘরে অসুস্থ মানুষ। দেয়া হয়েছে আরো ভয়াল পরিস্থিতির ইঙ্গিত। এ পরিস্থিতে এবারো রাজনীতির ঈদ আনন্দ অম্লান হবে বলে মনে করা হচ্ছে! এর আগে জনগণ থেকে সংসদ সদস্যসহ তিনটি ঈদ থেকে দূরে ছিলেন শীর্ষ নেতারাও। রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাকর্মী ও এমপিরা আক্রান্ত হয়েছেন, মারাও গেছেন কেউ কেউ। এখনো বেশ কজন মৃত্যুশয্যায়। সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও আক্রান্ত হয়েছেন। কোভিডমুক্ত হলেও এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এখনো জর্জরিত তিনি। বিপর্যস্ত  হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। ঘর থেকে অনলাইন ব্রিফিংয়ে পরিচালিত হচ্ছে কর্মসূচি। করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় এমপি-মন্ত্রীদের বড় একটি অংশ ঢাকায় অবস্থান করছেন। বাসার বাইরে বের হচ্ছেন না। এবারো ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন না তারা। দেড় বছর হয়ে গেছে তৃণমূলের কর্মীরা তাদের রাজনৈতিক  নেতাদের কাছে পাননি। এবারও ঈদ উৎসবে গণভবনে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি থাকছে না। প্রধানমন্ত্রী ফোনে ও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। ফলে রাজনীতিতে ঈদ উৎসবে চতুর্থবারের মতো ভাটা পড়ছে।      

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দলের বড় নেতারা এবারো ঢাকায় থাকছেন। তবে তারা তাদের লোকজনকে দিয়ে ঈদের আগেই যার যার এলাকায় গরিব মানুষের মধ্যে ঈদের উপহার হিসেবে নানা পণ্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন বলে দাবি করেন। তবে ঈদের আনন্দকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যেও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হতো, এবারো সেটি অনুপস্থিত থাকবে। এ জন্য অনেক নেতারই মন খারাপ।  ঈদকে কেন্দ্র করে শীর্ষ নেতারা যেভাবে আপামর মানুষের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন, গড়ে উঠতো মেলবন্ধন; এবারো  সেটি থাকছে না। বিষয়টিকে খুব অনুভব করেন তারা। মানুষের মাঝে থাকতে না পারায় স্বাভাবিক হূৎস্পন্দন অনুভব হচ্ছে। ঈদের আনন্দ ফ্যাকাসে লাগে তাদেরও। তারা বলছেন, রাজনীতিবিদ হিসেবে মানুষের সান্নিধ্য আমরা খুব মিস করি। কারণ, মানুষের জন্য কাজ করা এবং তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকাই আমাদের কাজ। তবে করোনায় এই ঈদে স্বাভাবিক সময়ের মতো তাদের কাছে যেতে না পারলেও অসহায় সংকটপীড়িত মানুষের পাশে আছি। তাদের কাছে ঈদ উপহার পাঠিয়ে দিচ্ছি। পরিস্থিতি কেটে গেলে অবশ্যই ছুটে যাবো। কিছুটা রাজনৈতিক প্রভাব পড়লেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ঠিক হয়ে যাবে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না আমার সংবাদকে বলেন, ‘করোনার কারণে নেতাকর্মীদের সাথে কেন্দ্রীয় নেতাদের দূরত্ব হচ্ছে না। কারণ, কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি নেতাকর্মীর সাথে নিয়মিত ভার্চুয়ালি যোগাযোগ করা হচ্ছে এবং খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে। ফলে রাজনীতিতে তাদের সাথে দূরত্ব তৈরি হওয়ার সুযোগ নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক ঈদেই নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা গণসংযোগ করতেন, মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ করতেন। কিন্তু করোনার কারণে এসব কার্যক্রম করা সম্ভব হচ্ছে না।’

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আমার সংবাদকে বলেন, ‘বর্তমান রাজনীতি এমপি-মন্ত্রী হওয়ার রাজনীতি। ঘরে বসে ক্ষমতা পাওয়ার রাজনীতি। নেতারা ঢাকায় বসে এমপি-মন্ত্রী হবেন- এ প্রবণতাই বেশি। কারণ, দেশে রাজনীতির পরিবেশ নেই, গণতন্ত্র নেই, নিজ দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার দায়বদ্ধতাও নেই। এই প্রবণতা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ কোরবানির ঈদ সামনে রেখে নিজে এলাকায় অবস্থান করছেন উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ঈদ সামনে রেখে আমি নিজেই এখন এলাকায় অবস্থান করছি। সবার উচিত নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে থাকা; তাদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা।’

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, ‘দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের চাওয়া কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের খোঁজ-খবর রাখবে, সুখ-দুঃখের কথা শুনবে। কর্মীরা শুধু নেতাকে একবার কাছ থেকে সালাম দেবে, কথা বলবে। কিন্তু করোনার কারণে অনেক নেতাকে তারা কাছে পাচ্ছে না। করোনার কারণে রাজনীতিতে ইতোমধ্যে এমন প্রভাব পড়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনা সংকটে অনেকে অসহায় হয়ে গেছে। আর সেসব অসহায়ের পাশে দাঁড়াতে যেসব নেতা ব্যর্থ হয়েছেন, অবশ্যই তাদের জন্য রাজনীতি কঠিন হয়ে যাবে।’

আমারসংবাদ/জেআই