Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

বাড়ছে আদা-রসুনের দাম

এম এ আহাদ শাহীন

জুলাই ১৬, ২০২১, ০৭:৪০ পিএম


বাড়ছে আদা-রসুনের দাম
  • স্বাভাবিক সময়ে গরম মসলা যে পরিমাণ বিক্রি হয়, কোরবানির ঈদের আগের এক মাস তার থেকে ২০-৩০ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়। তবে এবার ঈদকেন্দ্রিক কোনো বিক্রি নেই

আর মাত্র কয়েকদিন পরই পালিত হবে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। ঈদ সামনে রেখে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আদা ও রসুনের দাম। তবে ঈদ দোরগোড়ায় চলে এলেও গরম মসলার দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের কারণে মসলার বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। ফলে এবারের ঈদের আগে গরম মসলার বাজার বেশ ‘ঠাণ্ডা’। ঈদের আগে গরম মসলার দাম না বেড়ে উল্টো কমেছে।

পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে গরম মসলা যে পরিমাণ বিক্রি হয়, কোরবানির ঈদের আগের এক মাস তার থেকে ২০-৩০ শতাংশ বেশি বিক্রি হয়। তবে এবার ঈদ কেন্দ্রিক কোনো বিক্রি নেই। এমনকি স্বাভাবিক সময়ে যে মসলা বিক্রি হয়, এখন বিক্রি তার ২০-৩০ শতাংশ মতো আছে। অর্থাৎ স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বিক্রি ৭০ শতাংশের মতো কমে গেছে। বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, এখন করোনার প্রকোপ গ্রাম অঞ্চলে বড় আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যে কারণে দোকান খুব বেশি সময় খোলা রাখা যাচ্ছে না। আবার ঢাকার বাহিরের ক্রেতারা ঢাকায় আসতে পারছেন না। সবমিলিয়ে বিক্রি কমে গেছে। আর বিক্রি কমার কারণে দামও কমেছে। গরম মসলার দাম কমলেও আদা ও রসুনের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে।

সপ্তাহের ব্যবধানে চীনা আদার দাম কেজিতে ৬০ টাকা এবং রসুনের দাম ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে চীনা আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। আর চীনা রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে এই রসুনের দাম ছিল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। চীনা আদা ও রসুনের দাম বাড়ার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী আলী নূর বলেন, এখন চীনা আদা ও রসুনের আমদানি কম। দেশি আদা-রসুন বাজারে কম রয়েছে। আবার সামনে ঈদ হওয়ার কারণে সমপ্রতি কিছু ক্রেতা আদা-রসুন বাড়তি পরিমাণে কিনেছেন। এ সবকিছু মিলেই আদা ও রসুনের দাম বেড়েছে। ঈদের আগে আদা-রসুনের দাম কমার সম্ভাবনা কম। বরং পরিস্থিতি যা তাতে মনে হচ্ছে সামনে দাম আরও বাড়তে পারে। এদিকে মসলার বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে শুকনা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা। হলুদের কেজি বক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৮০ টাকায়। এ দুটি পণ্যের দাম সমপ্রতি বাড়া বা কমার ঘটনা ঘটেনি। তবে সপ্তাহখানেক আগে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া ভারতীয় জিরার দাম কমে ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। দারুচিনির কেজি বক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকার মধ্যে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৫০ থেকে ৪৭০ টাকা। দাম কমার এ তালিকায় রয়েছে এলাচ এবং লবঙ্গ। এক সপ্তাহ আগে ৩০০০  থেকে ৩২০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া এলাচের দাম কমে ২৬০০ থেকে ২৮০০ টাকায় নেমে এসেছে। আর লবঙ্গের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকার মধ্যে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা।

খিলগাঁও তালতলার ব্যবসায়ী মো. মামুন বলেন, এবার ঈদ কেন্দ্রিক গরম মসলার দাম বাড়েনি। আমাদের ধারণা ঈদের আগে আর বাড়বে না। এবার গরম মসলার বিক্রি বেশ কম। তবে আদা ও রসুনের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। মালিবাগের ব্যবসায়ী মিরাজ বলেন, এবার গরম মসলার বাজারে বেশ মন্দা চলছে। লকডাউনের কারণে কয়েকদিন আগে মাল কম থাকায় দাম একটু বেড়েছিল। কিন্তু এখন আবার কমে গেছে। পাইকারিতে তুলনামূলক কম দামে গরম মসলা কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। যে কারণে আমরাও কম দামে বিক্রি করতে পারছি।

খুচরা বাজারের মতো পাইকারি বাজারেও গরম মসলার দাম কমেছে। পাইকারিতে ভারতীয় জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। চারুচিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩১০ থেকে ৩৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা। এলাচের কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭৫০ থেকে দুই হাজার ৪৫০ টাকার মধ্যে, যা আগে ছিল ২২০০ থেকে ২৭০০ টাকা। আর লবঙ্গের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ৯৪০ টাকা, যা আগে ছিল ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা।

মৌলভীবাজারের মসলার ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, আমাদের ব্যবসায় এবার বেশ মন্দা চলছে। স্বাভাবিক সময়ে যে বিক্রি হয়, এখন তার ২০-৩০ শতাংশের মতো বিক্রি হচ্ছে। অথচ এই ঈদের আগে আমাদের বিক্রি ২০-৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। কিন্তু লকডাউনের কারণে ব্যবসায়ীরা দোকান খুব একটা খুলতে পারছেন না। মফস্বল থেকে ক্রেতারা আসতে পারছে না। বিক্রি না থাকার কারণে সব ধরনের মসলার দাম কমে গেছে। কোনো কোনো মসলার দাম ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।’ তিনি বলেন, ‘দাম কমার কারণে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। তারপরও লোকসানে অনেক ব্যবসায়ী মাল বিক্রি করে দিচ্ছেন। কারণ অনেকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করছেন। ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, সাধারণত কোরবানির ঈদের আগে আমাদের বিক্রি ২০-৩০ শতাংশ বেশি হয়। কিন্তু এবার আমাদের কোনো বিক্রি নেই। বরং স্বাভাবিক সময়ে যে বিক্রি হয়, তার থেকেও এখন অনেক কম বিক্রি হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে আমরা যে বিক্রি করি, এখন তার ৩০ শতাংশের মতো বিক্রি হচ্ছে। এতে মসলার দাম কমে যাচ্ছে। ফলে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসায়ী লোকসানের মধ্যে পড়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনার সংক্রমণ বেড়ে যওয়ায় সরকার কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে। এ কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুব বেশি সময় খোলা রাখা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতি কতদিন থাকবে তা কেউ বলতে পারে না। সরকার সবকিছু স্বাভাবিক সময়ের মতো খুলে দিলেও আমাদের বিক্রি বাড়বে এ কথা বলা যাচ্ছে না। তারপরও দেখা যাক, সামনে কী হয়। তবে ঈদের আগে এবার গরম মসলার দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

আমারসংবাদ/জেআই