Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

বহুমুখী উদ্যোগে বাংলাদেশ বিমান

জুলাই ১৭, ২০২১, ০৬:১০ পিএম


বহুমুখী উদ্যোগে বাংলাদেশ বিমান
  • নিজস্ব উড়োজাহাজের পাশাপাশি বিদেশি এয়ারলাইন্সকেও Disinfection সেবা প্রদান করে বৈদশিক মুদ্রা অর্জন, কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমেও রাজস্ব বৃদ্ধির ব্যবস্থা, নিজস্ব তত্ত্বাবধানে জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মামগামী যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইন ও হোটেল বুকিং, বিমান পরিচালনার ব্যয় নির্বাহের জন্য যৌক্তিকপর্যায়ে ভাড়া বৃদ্ধি ও অধিকহারে চার্টার ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে কর্তৃপক্ষ

নভেল করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। করোনা মহামারির শুরু থেকেই একের পর এক ফ্লাইট বন্ধ হওয়ায় আয়ও কমে যায় প্রতিষ্ঠানটির। বিপুল পরিমাণ পরিচালন ব্যয় সামলাতে হিমশিমও খেতে হচ্ছে সংস্থাটিকে। এমতাবস্থায় চলমান প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলায় বহুমুখী উদ্যোগও গ্রহণ করে সংস্থাটি। ধস নামা ব্যবসায়িক পরিস্থিতির উন্নতিসহ সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়েই জানতে চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার সংবাদ।

করোনাকালে সেবা প্রদানসহ বাণিজ্যিকভাবে সম্মুখীন হওয়া প্রতিবন্ধকতা এবং সেগুলো মোকাবিলা করে লাভজনক ব্যবসা পরিচালনার বিষয়ে আমার সংবাদকে তিনি বলেন, গত বছর করোনা মহামারির শুরু থেকেই বিমানের ফ্লাইট সংখ্যা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হতে থাকে এবং একসময় প্রায় সব ফ্লাইটই বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক সে সময় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের কারিগরি নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যাকটিভ প্রিজারভেশনের (বিশেষ ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ) মাধ্যমে প্রতিটি উড়োজাহাজকে সার্বক্ষণিক উড্ডয়ন উপযোগী করে রাখা হয়েছিল। তবে করোনাকালীন ওই সময়েই জাতিসংঘ মিশনের কিছু ফ্লাইটসহ কয়েকটি বিশেষ ফ্লাইট এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কার্গোফ্লাইট সফলভাবে পরিচালনা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ফ্লাইট চলাচল শুরু হলে পুনরায় স্বাভাবিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে প্রতিটি উড়োজাহাজকে উড্ডয়নযোগ্য করে রাখা হয়। এছাড়াও বিশেষ কার্যক্রম হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী উড়োজাহাজের ক্যাবিন এবং ককপিট Disinfection কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। নিজস্ব উড়োজাহাজের পাশাপাশি বিদেশি এয়ারলাইন্সকেও Disinfection সেবা প্রদান করে বৈদশিক মুদ্রা অর্জন করে আসছে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। 

তিনি বলেন, চলমান করোনাকালীন সময়ে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের আরোপিত বিধিনিষেধ ও বাংলাদেশ সরকারের আরোপিত বিধিনিষেধের কারণে বিমানকে মোট আসন সংখ্যার চেয়েও অনেক কম সংখ্যক যাত্রী পরিবহন করতে হচ্ছে। এছাড়াও বিমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একমুখী যাত্রীও পরিবহন করছে। ফলে উভয় পথে কাঙ্ক্ষিত যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব না হওয়ায় বিমান পরিচালনার ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পরিস্থিতি বিবেচনায় লাভজনক ব্যবসা পরিচালনার জন্য বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। তার মধ্যে বিমান পরিচালনার ব্যয় নির্বাহ করার জন্য বিমানভাড়া যৌক্তিকপর্যায়ে কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়। যা  সমগ্র বিশ্বেও যৌক্তিক কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তদুপরি, বিমান ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটেও ভাড়া হ্রাস করেছে। এছাড়া গত বছরের আগস্ট থেকে হংকং রুটে এবং চীনের গুয়াংজু রুটে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। অক্টোবরেও সিলেট-লন্ডন রুটে সরাসরি ফ্লাইট চালু করা হয়েছে। অধিক হারে চার্টার ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটসমূহে যাত্রী বহনের ওপর প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ স্টেশনসমূহের মাঝেও আন্তঃযোগাযোগের বিষয়ে বাজার পর্যালোচনা করে নতুন নতুন রুট চালু করছে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিমানের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস কার্গো হ্যান্ডলিং। কার্গো হ্যান্ডলিং ব্যবস্থার উন্নতির মাধ্যমেও রাজস্ব বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের সুবিধার্থে জেদ্দা, রিয়াদ ও দাম্মামগামীদের কোয়ারেন্টাইন ও হোটেল বুকিং নিজস্ব  তত্ত্বাবধানেই করছে বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল জানান, চলমান করোনাকালীন সময়ে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করাই বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। এই প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলার জন্যও বেশকিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে যাত্রী সাধারণের সুরক্ষার জন্য পিপিই মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ফেস শিল্ড সরবরাহসহ এয়ারক্রাফটের ব্যবস্থা, বেবিচকের গাইডলাইন অনুসরণ, ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দ্বারা বাধ্যতামূলক যাত্রীদের তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা, যাত্রীদের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃক ইস্যুকৃত বাধ্যতামূলক Health Declaration Form বিতরণ ও পূরণ, সচেতনতামূলক নির্দেশনা উল্লেখপূর্বক ব্যানারসহ ফেস্টুন তৈরি করে টার্মিনালের বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থাও করেছে কর্তৃপক্ষ। যাত্রীসেবা প্রদানকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সুরক্ষায়ও ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে তাপমাত্রা পরিমাপ করে সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অফিসে প্রবেশ করানো হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতা ও প্রশিক্ষণ প্রদান এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ, স্যানিটাইজার ও ব্লিচিং পাউডার দিয়ে অফিস, কাউন্টারসমূহ ও ব্যবহার্য্য আসবাবপত্র জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। নিয়মিতভাবে বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী অসুস্থ হলে তাকে দ্রুত আইসোলেশন-কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর ব্যবস্থা, কেবিন ক্রুদের মাঝে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বল্প সংখ্যক কেবিন ক্রু দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা, কেবিন ক্রুদের রিয়াদ ও লন্ডন ব্যতীত বিদেশে সকল স্টেশনে অবস্থান স্থগিত, প্রতি ফ্লাইটের পর কেবিন ক্রুদের আইসোলেশনে থাকার জন্যও সর্বোচ্চ বিশ্রামে রাখাসহ বেশকিছু কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।  

তিনি বলেন, বিগত ১০ বছরে বিমানের বিভিন্ন ট্রেডের জনবল সংকট পূরণে স্থায়ী ও ক্যাজুয়াল ভিত্তিতে যথাক্রমে ইতোমধ্যে এক হাজার ৪৬ এবং এক হাজার ৯৮৩ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। বিমানের কারিগরি ও অ-কারিগরি জনবলের দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারের (বিএটিসি) মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সও আয়োজন করছে। প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহের মাধ্যমে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং যা চলমান রয়েছে। এছাড়া বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিএটিসি ব্যতীত সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণকেন্দ্রে প্রশিক্ষণে প্রেরণ করা হচ্ছে। অ-কারিগরি জনবলের ক্ষেত্রে বাৎসরিক ৬০ ঘণ্টা প্রশিক্ষণ আবশ্যিক করা হয়েছে। অধিকন্তু, বিদ্যমান প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহের পাঠ্যক্রম নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর যুগোপযোগী করা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক গ্রাহক চাহিদা পূরণ, আন্তর্জাতিক মানের সেবা তৈরি ও প্রদানের ক্ষেত্রে পরিকল্পনার বিষয়ে বিমানের সিইও বলেন, সেবাপ্রদান ও যাত্রীবান্ধব আধুনিক বিশ্বমানের পিএসএস এবং ই-কমার্স বাস্তবায়নের কাজ চলছে। এছাড়া আরও কিছু গৃহীত পদক্ষেপ রয়েছে, এর মধ্যে মোবাইল প্লাটফর্ম চালু করা হয়েছে। যার ফলে যাত্রীরা অ্যাপ ব্যবহার করে ঘরে বসেই টিকিট ক্রয় এবং যাত্রার পূর্বে আসন সংরক্ষণ করার সুবিধা ভোগ করছে। বুকিংয়ের সময় যাত্রীর বিশেষ কোনো চাহিদা থাকলে তা প্রদান করার চেষ্টা করা হয়। যেমন— বিশেষ সিট, বিশেষ খাবার ইত্যাদি। এ প্রেক্ষিতে আরও কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যাত্রী সেলফ চেকিং কাউন্টার স্থাপন, যাত্রী আলাদা ব্যাগেজ ড্রপ কাউন্টার, ভিআইপি-বিজনেস ক্লাস যাত্রীদের জন্যও ফার্স্ট ট্র্যাক কাউন্টার করা হয়েছে।

টরন্টো ও নারিতায় বিমানের ফ্লাইট চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের টরন্টো ফ্লাইট পরিচালনার অত্যাবশ্যকীয় শর্ত উড্ডয়ন-অবতরণের জন্য অনুমতি ও ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ট্রান্সপোর্ট কানাডার কাছ থেকে এফএওসি (ফরেন এয়ার অপারেটর সার্টিফিকেট) নিতে হয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, ট্রান্সপোর্ট কানাডা বিমানের আবেদন গ্রহণপূর্বক ডেস্কটপ নিরীক্ষাও সম্পন্ন হয়েছে এবং বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ‘স্লট’ প্রদান করেছে। এক্ষেত্রে চূড়ান্ত অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি কানাডীয় এয়ার ট্রান্সপোর্ট সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত সদস্যদের বাংলাদেশের বিমানবন্দর এবং সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তা কার্যক্রমের সফল onsight নিরীক্ষার ওপর নির্ভর করছে। অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কার্যক্রম যেমন Dnata-এর সাথে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, এয়ার কানাডার সাথে ট্যাকনিক্যাল হ্যান্ডলিং এবং Gate-Gournet এর সাথে ক্যাটারিং চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে। যদিও জিএসএ নিয়োগ এখনও সম্পন্ন হয়নি তবে এফওসি প্রাপ্তির পর বিমান চাইলে নিজেরাই বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবে। এছাড়াও নারিতা, জাপান ফ্লাইট পরিচালনা করার জন্যও বিমান ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, ট্যাকনিক্যাল হ্যান্ডলিং, ক্যাটারিং চুক্তি এবং জিএসএ নিয়োগ সম্পন্ন করেছে। ল্যান্ডিং পারমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট বিমানের জিএসের মাধ্যমে জাপান সিভিল এভিয়েশন ব্যুরোতে জমা দিয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বর্তমান অগ্রগতির প্রেক্ষিতে নারিতাতে ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব বলে বলে আশা করছেন বিমান বাংলাদেশের এমডি। এছাড়াও সমপ্রতি নতুন উড়োজাহাজ কেনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কার্গোর কথাও ভাবছে কর্তৃপক্ষ।

আমারসংবাদ/জেআই