Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

কাল পবিত্র ঈদুল আজহা

জুলাই ১৯, ২০২১, ০৬:২৫ পিএম


কাল পবিত্র ঈদুল আজহা
  • সড়ক-নৌপথে ঘরমুখো মানুষের ঠাসাঠাসি যাত্রা, কোথাও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন
  • স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে মাথাব্যথা নেই কারোই, চিন্তিত সচেতন মহল
  • ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর হিসাবে দুই দিনে ঢাকা ছেড়েছে ১৭ লাখ মানুষ
  • ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-চট্টগ্রাম, শিমুলিয়া ঘাটসহ সর্বত্রই যানজটে ভোগান্তি

কাল পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে গতকালও দেখা গেছে আতঙ্ককে সঙ্গী করেই নাড়ির টানে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। অন্যান্যবারের মতো এবারো তাদের সঙ্গী নানা ভোগান্তি। বাস-ট্রেনের টিকিটের হাহাকারের মধ্যে যোগ হয়েছে যানজট। দীর্ঘ সময় যানজটে আটকা পড়ে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ বাড়িফেরা মানুষজন। অন্যান্য বছরের মতো না হলেও ঈদের আগ মুহূর্তে বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে গতকাল। যারা টিকিট পাননি তারাও লোকাল বাসে যাচ্ছেন ভেঙে ভেঙে। আর এই সুযোগে লোকাল বাসের কাউন্টারগুলো নিচ্ছে বাড়তি ভাড়া। পাশাপাশি দুই সিটে একজন যাত্রী বসার কথা থাকলেও প্রতি সিটেই যাত্রী নেয়া হচ্ছে। ভাড়াও হাঁকাচ্ছে দ্বিগুণ। কিন্তু বাড়ি ফেরার এমন প্রক্রিয়ার মধ্যেই যে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি উপেক্ষিত হচ্ছে— এ নিয়ে যেনো কারোরই মাথাব্যথা নেই। সরকার করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর অবস্থানে থাকলেও ঈদকে সামনে রেখে কঠোর লকডাউন শিথিল করায় করোনা সংক্রমণ নিয়ে চিন্তিত সচেতন মহল।

সম্প্রতি ঈদযাত্রা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ শিথিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঈদ করতে লাখ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়ছে। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনে ঢাকা ছেড়েছে প্রায় ১৭ লাখ মানুষ। শুধু মোবাইল সিম ব্যবহারকারীর ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার পরিসংখ্যান এটি। 

গতকাল সোমবার সরেজমিন রাজধানীর বনানী হয়ে বিমানবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেসব গাড়ি টঙ্গী ও গাজীপুরে প্রবেশ করছে সেসব গাড়ির যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। এ সড়কে সকাল ৮টা থেকে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় গাড়িতে বসে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। অন্যদিকে বিমানবন্দরের এ যানজটের প্রভাব পড়েছে কুড়িল-বিশ্বরোড ও প্রগতি সরণির রাস্তায়ও। সকাল থেকে প্রগতি সরণি এলাকায় হালকা যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র যানজটে রূপ নেয়। সরেজমিন দেখা যায়, বনানী ফ্লাইওভার থেকে উত্তরা পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজটের কারণে সকাল থেকেই ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক বাস বনানী ফ্লাইওভার পার হয়ে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় আটকে আছে। অতিরিক্ত গাড়ির চাপে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে এ যানজট শুধু ঢাকা থেকে বের হওয়ার সড়কে দেখা গেছে। বিপরীত পাশের রাস্তায় যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। যানজটে আটকে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবার ঈদযাত্রায় তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। কিন্তু এবার করোনা মহামারির কারণে রাজধানীতে মানুষের যাতায়াত কম থাকায় তারা আশা করেছিলেন ভোগান্তি কম হবে। কিন্তু রাস্তায় অন্যান্যবারের মতোই যানজটে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের।

চালকরা বলছেন, ঈদযাত্রায় এমন যানজট প্রতি বছরই হয়। তবে এবার বিমানবন্দর এলাকায় উন্নয়নকাজের জন্য সড়কের বিভিন্ন অংশ ভাঙা। কিছু অংশে সড়ক সরু হয়ে গেছে। তাই স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এ কারণেই এ সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে। যা আশপাশের বিভিন্ন সড়কেও প্রভাব ফেলছে। ডিএমপি ট্রাফিকের উত্তরা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার (উত্তরা পশ্চিম জোন) সাইফুল মালিক জানান, ঈদযাত্রা শেষ পর্যায়ে আছে। মানুষজন এখন দলবেঁধে রাজধানী ছেড়ে গ্রামে ফিরছে। এ সময়ে সামান্য যানজট হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আজকে শুধু ঈদযাত্রার গাড়ির চাপে বিমানবন্দর থেকে উত্তরা পার হয়ে টঙ্গী এলাকা পর্যন্ত যানজট দেখা দিয়েছে।  কিন্তু রাস্তার অন্যপাশে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কারণ গত দুই দিনে প্রচুর গরুবোঝাই ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করেছে। এখন আর গরুবোঝাই ট্রাক ঢাকায় আসার সম্ভাবনা নেই। তাই ঢাকায় প্রবেশের সড়কে যানজট দেখা যাচ্ছে না। এদিকে ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও গাড়ির চাপ দেখা গেছে। গাবতলী অংশে গাড়ির কিছুটা ধীরগতি দেখা গেলেও অন্য অংশে স্বাভাবিকভাবেই চলছে গাড়ি। বাইপাল-আব্দুল্লাহপুর সড়কের জামগড়া, ইউনিক, নরসিংহপুর, জিরাবো ও আশুলিয়ায় গাড়ির চাপ রয়েছে। এ ছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল বাসস্ট্যান্ডে কচ্ছপ গতিতে চলছে পরিবহন। আবার যানজটও দেখা দিচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও একই অবস্থা। 

এদিকে ঈদযাত্রার শেষদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটেও। শিমুলিয়া লঞ্চঘাটে যাত্রীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। শৃঙ্খলা রক্ষায় ঘাটজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। এদিকে ফেরিঘাটেও রয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। সরেজমিন দেখা গেছে, অর্ধেক যাত্রী ধারণের কথা থাকলেও ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী নিয়েই অধিকাংশ লঞ্চ চলাচল করছে। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব। লৌহজং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসাইন বলেন, গার্মেন্ট বন্ধ দেয়ার কারণে আজ ঈদযাত্রীদের চাপ বেশি। আমাদের পক্ষ থেকে যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানতে ও লঞ্চে নির্ধারিত যাত্রী তোলার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ঘাটজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন স্তরের তিন শতাধিক সদস্য মোতায়েন রয়েছে। তবে কোনোরূপ স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে রাজধানী ঢাকার নদীবন্দর থেকে দক্ষিণাঞ্চলের সবকটি লঞ্চ ছেড়ে গেছে বলে জানা গেছে। অধিকাংশ লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। যাত্রীর তুলনায় ডেকের পরিমাণ কম হওয়ায় বাধ্য হয়েই এসব লঞ্চে করে বাড়ি ছুটতে হচ্ছে কর্মজীবী মানুষকে। এ নিয়ে নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে মাঝে মাঝে পল্টন এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে মাইকিং করতে দেখা গেলেও তা কোনো লঞ্চ কর্তৃপক্ষ মানছে না। গতকাল ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাটে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

আমারসংবাদ/জেআই