Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

জীবন বদলে দিচ্ছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগস্ট ১, ২০২১, ০৬:২৫ পিএম


জীবন বদলে দিচ্ছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর

বেকার যুবকদের জীবন বদলে দিতে নিঃশব্দে কাজ করে যাচ্ছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রশিক্ষণের পর আর্থিক সহযোগিতা দেয়া, যুবকদের ঐক্যবদ্ধ করে যুব ক্লাব গঠন, ক্লাবের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম গ্রহণসহ সার্বিকভাবে যুবকদের মাধ্যমে স্বনির্ভর দেশ গড়াই এই সরকারি প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য। ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জনসংখ্যার প্রতিশ্রুতিশীল, উৎপাদনমুখী ও কর্মপ্রত্যাশী যুবগোষ্ঠীকেই সুসংগঠিত, সুশৃঙ্খল এবং দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়াধীন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার সার্বিক দিক-নির্দেশনা তথা যুব উন্নয়নের নেপথ্যে অসামান্য অবদান রেখে যাচ্ছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজহারুল ইসলাম খান।

জাতীয় উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্ভাবনাময়ী যুবগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করে গঠনমূলক মানসিকতা ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত করা এবং সুশৃঙ্খল কর্মীবাহিনী হিসেবে দেশের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করার অনুকূল ক্ষেত্র তৈরির উদ্দেশ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর শুরু থেকেই বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। যার সুফল ইতোমধ্যেই জাতীয় কর্মকাণ্ডে প্রতিফলিত হচ্ছে। অনুৎপাদনশীল যুবসমাজকে সুসংগঠিত উৎপাদনমুখী শক্তিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে সরকার ১৯৭৮ সালে যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করে যা পরবর্তীতে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় হিসেবে পুনঃনামকরণ করা হয়। মাঠপর্যায়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্যই ১৯৮১ সালে গঠন করা হয় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের বেকার যুবকদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে এই অধিদপ্তর।

এদিকে সরকার দেশের বেকার যুবসমাজকে অনলাইন প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে যাচ্ছে। অনলাইন প্ল্যাটফরমে যাতে ঘরে বসেই বিভিন্ন কাজে দক্ষতা অর্জন করতে পারে, সে উদ্যোগ একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ প্রশিক্ষণ গ্রহণে সংশ্লিষ্ট ফোন কোম্পানিগুলো একেবারে স্বল্পমূল্যের বিশেষ ডেটা প্যাকেজও চালু করবে। যাতে যে কারো পক্ষে অনলাইনে এ ধরনের প্রশিক্ষণ নেয়া খুব সহজ হয়। এ সুবিধা দিতে এগিয়ে এসেছে দুটি মুঠোফোন কোম্পানি। প্রশিক্ষণ শেষে অনলাইনে আন্তর্জাতিক মানের সনদপত্রও মিলবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশে ৭১টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে ৮৪টি ট্রেডে বেকার যুবক ও যুবনারীদের আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এখন এসব কেন্দ্র থেকে অনলাইন প্ল্যাটফরমেও প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। সেজন্য সফটওয়্যার ও হোস্টিং ম্যানেজমেন্টের যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। আগ্রহী প্রক্ষিণার্থীরা নামমাত্র রেজিস্ট্রেশন ফি জমা দিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। তবে রেজিস্ট্রেশন করার পর অনলাইনে প্রশিক্ষণ নিতে তাকে বেশি টাকা খরচ করতে হবে না। নামমাত্র মূল্য দিয়ে শুধু এই প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ ডেটা প্যাকেজ কিনে প্রশিক্ষণ নেয়া যাবে। এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ সময়কালের জন্য গ্রামীণফোন ও টেলিটক প্রশিক্ষণার্থীদের এ সুবিধা দেবে। এজন্য ইতোমধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা স্মারক চুক্তিও সম্পাদিত হয়েছে। তিন বছর মেয়াদি প্রথম ধাপের চুক্তি বাস্তবায়নে হোস্টিং চার্জ ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ দাঁড়াবে প্রায় ১০ কোটি টাকা। যার বড় একটি অংশের জোগান দেবে ফোন কোম্পানি।

এছাড়া যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ সনদ থাকলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ঋণ পাওয়া যায় কর্মসংস্থান ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকেও। কৃষি বিষয় ছাড়াও কম্পিউটার সায়েন্স, সেলাই, ব্লক-বুটিক, হাউজ ওয়ারিং, টিভি-ফ্রিজ-রেফ্রিজারেটর ও মোবাইলবিষয়ক প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে। তাই শুধু চাকরির ওপর নির্ভর না করে যেকোনো  যুবকই যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তৈরি করতে পারে নিজের আয়ের পথটি। শুধু তাই নয়, যুবকদের জন্য আশার খবর দিচ্ছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত ও সরকারের একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। মাধ্যমিক এবং তদূর্ধ্ব পর্যায়ের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন যুব ও যুবমহিলাদের জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে অস্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরিই প্রকল্পটির উদ্দেশ্য।

সারা দেশে সফল যুবকদের পুরস্কৃত করা, যুব ক্লাবকে অনুদান প্রদান, যৌতুকবিরোধী অভিযান, মাদকের কুফল সম্পর্কে যুবকদের অবহিতকরণ এবং ক্লাবভিত্তিক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পরিচালনা করছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে যেসব খাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— কম্পিউটার বেসিক অ্যান্ড আইসিটি অ্যাপ্লিকেশন, প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, মডার্ন অফিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড হাউজওয়্যারিং, ইলেকট্রনিক্স, রেফ্রিজারেশন অ্যান্ড এয়ারকন্ডিশন, পোশাক তৈরি, ব্লক, বাটিক ও স্ক্রিন প্রিন্টিং, মৎস্য চাষ, মোবাইল ফোন সার্ভিসিং অ্যান্ড রিপেয়ারিং, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন এবং এর প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য চাষ ও কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ, দুগ্ধজাত দ্রব্যাদি উৎপাদন, বিপণন ও বাজারজাতকরণ, মুরগি পালন ব্যবস্থাপনা ও মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণন, ছাগল, ভেড়া, মহিষ পালন এবং গবাদিপশুর প্রাথমিক চিকিৎসা, চিংড়ি ও কাঁকড়া চাষ এবং বিপণন, মৎস্য সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ, অর্নামেন্টাল প্ল্যান্ট উৎপাদন, কৃষি ও হর্টিকালচারবিষয়ক, ফুলচাষ, নার্সারি ও ফলচাষ, মাশরুম ও মৌচাষ, কৃষি যন্ত্রপাতি মেরামত, ফ্যাশন ডিজাইন, ওভেন সুয়িং মেশিন অপারেটিং, ব্লক প্রিন্টিং, টুরিস্ট গাইড, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন এবং বিউটিফিকেশন অ্যান্ড হেয়ারিং প্রভৃতি।

প্রসঙ্গত, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো থেকে প্রতিবছর গড়ে সাড়ে তিন লাখ যুব ও যুবনারী প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকে। ১৮-৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত যুবগোষ্ঠী ধরা হয়। এ হিসাবে প্রতিবছর নতুন করে যুবসমাজে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ২০-২২ লাখ। বর্তমানে দেশে পাঁচ কোটি ৩০ লাখ যুব ও যুবনারী রয়েছেন।

আমারসংবাদ/জেআই