Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

সামনে আসছে ভয়ঙ্কর দিন!

আগস্ট ১, ২০২১, ০৬:২৫ পিএম


সামনে আসছে ভয়ঙ্কর দিন!
  • শ্রমিকদের শতভাগ টিকা নিশ্চিত ব্যতীত কাজে যোগদান নিয়ে বিতর্ক
  • পরীক্ষা ও আইসোলেশন ছাড়াই লাখ লাখ শ্রমিকের কাজে যোগদান
  • কলকারখানা খুলে দেয়ার ভয়ঙ্কর ফল অপেক্ষা করছে —দাবি স্বাস্থ্যবিদদের
  • প্রথম দিনেই ৯০ শতাংশ শ্রমিক কর্মস্থলে, আগস্টেই মহাবিপদ
  • গার্মেন্ট খোলায় সংক্রমণ আরও বৃদ্ধি পাবে —স্বাস্থ্যমন্ত্রী

লঞ্চ চলছে এখনো! দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। বিআইডব্লিউটিএ থেকে ঘোষণা এসেছে— যাত্রীর চাপ না কমায় আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত লঞ্চ চালাবেন তারা। গতকাল চলেছে দেশের সব জেলা থেকে গণপরিবহনও। শ্রমিকদের সাথে নানান প্রয়োজনে মানুষের ঢাকায় ফেরার জটলা ছিলো চোখে পড়ার মতো। স্বাস্থ্যবিধি ভেঙেচুরে একাকার। দেশের অভিজ্ঞ মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে— টিকা নিশ্চিত ছাড়া স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে না, সে ক্ষেত্রে শ্রমিকদের শতভাগ টিকা নিশ্চিত ব্যতীত কেন কলকারখানা চালু হচ্ছে। টিকা প্রদান খুবই সহজ বিষয়, সেই সহজ কাজটা না করে ঝুঁকির কাজটা কেন বেছে নেয়া হলো— এ নিয়ে বিতর্ক বিশেষ পাড়ায়। এ ছাড়া করোনা পরীক্ষা ও আইসোলেশন ছাড়াই লাখ লাখ শ্রমিকের কাজে যোগদান করোনা ছড়ানোর ভয়াল দিকের ইঙ্গিত দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

জানা গেছে, চলমান কঠোর বিধিনিষেধেরই সুফল মেলেনি। ঈদে আগে-পরে মানুষের স্রোতে বাড়ি ফেরা কঠিন সময়ের চিত্রই দিচ্ছে। কঠোর বিধিনিষেধ সত্ত্বেও সংক্রমণ ও মৃত্যুতে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। হাসপাতালগুলোতে ঠাঁই নেই। আর্তনাদ হাসপাতালের বারান্দায়। একটি আইসিইউ বেডের জন্য ৪০ জন গুরুতর করোনা রোগীকে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এরই মধ্যে শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ায় স্রোতের মতো মানুষ ঢুকছে ঢাকায়। যেখানে মাস্ক কিংবা সামাজিক দূরত্বের ছিটেফোঁটাও ছিলো না। ফলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এই আশঙ্কায় বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সামনের দিনগুলোতে মহাবিপদ অপেক্ষা করছে। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই অর্থনীতি সচল রাখতে কলকারখানা চালু করায় আগামীতে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে জ্যামিতিক হারে। শ্রমিকদের ঢলে করোনা সংক্রমণ অতীতের সব রেকর্ডকেই ছাড়িয়ে যাবে। আগস্ট মাসে করোনার ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে দেশের মানুষের সামনে। বিধিনিষেধের শিথিলতা ও কঠোর বিধিনিষেধ শেষ না হতেই কলকারখানা চালুতে ভয়াবহ আগস্ট আসছে বাংলাদেশে। বাস-ট্রেন-লঞ্চ বন্ধ থাকায় শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে ঢাকায় এসে কাজে যোগ দেয় শ্রমিকরা। হেঁটে, রিকশা-অটোরিকশায় পিকআপ ভ্যানের পেছনে দাঁড়িয়ে গাদাগাদি করেই ঢাকায় ঢুকলেও তাদের মধ্যে করোনা আছে কি-না কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই তাদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে।  পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও নিটওয়্যার মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ জানিয়েছে, কারখানাগুলোতে ৯০ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত হয়েছেন। বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘প্রথম দিন বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত পোশাক কারখানায় ৯০ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তারা কাজ শুরু করেছেন।’

গতকাল রোববার দুপুরে মহাখালীর বিসিপিএস অডিটোরিয়াম হলে প্রথম বর্ষ এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকরা কর্মস্থলে ফেরায় করোনা সংক্রমণ বাড়বে। তিনি বলেন, একদিনের ঘোষণায় শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফিরছেন, এটা আমাদের জন্য আরও ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি নিয়ে আসতে পারে। এর আগে গত ২৫ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কনভেনশন সেন্টারে ফিল্ড হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘যেভাবে রোগী বাড়ছে, হাসপাতালে বেড সঙ্কট দেখা দিতে পারে। দেশে ঈদুল আজহার ছুটিতে গ্রামে যাওয়া-আসার কারণে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় গুণ। এ ছাড়া শহরের হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীর ৭৫ শতাংশই গ্রাম থেকে আসা।’ এভাবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে হাসপাতালে রোগীদের শয্যা দেয়া যাবে না বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

এখন সব সময়ের চেয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঘটনা বেশি। এর মধ্যেই গতকাল পোশাক কারখানা খুলে দিলো সরকার। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভিড় এড়িয়ে চলার কথা বলছে, সেখানে সংক্রমণের ‘পিক টাইম’ কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। বিশেষ করে কোরবানিতে গরুর হাটে গাদাগাদিতে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এখন মৃত্যু ও সংক্রমণ বাড়ছে প্রতিদিনই। গত ১৪ জুলাইয়ে কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল ঘোষণার পরই কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বলছেন, এই শিথিলতার পক্ষে তারা ছিলেন না। তারা বলছেন, সরকারের শিথিল বিধিনিষেধের এ ঘোষণা তাদের পরামর্শের উল্টো চিত্র। কলকারখানা খুলে দেয়ার ভয়ঙ্কর ফলও সামনে পাওয়া যাবে।’

গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ‘আমলারা, ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীর কাঁধে বন্দুক ঠেকিয়ে দেশ শাসন করছে। সরকার আজ যেটা বলছে কাল সেটা মানছে না। সরকার লকডাউন করছে নিজেই লকডাউন মানছে না। লকডাউন মানার জন্য গরিব মানুষের ওপর অত্যাচার করছে। প্রতিদিন যত জরিমানা হয়েছে সব সাধারণ মানুষ, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, দোকানদারদের। কলকারখানা খোলার ব্যাপারে দ্বিমত নেই উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘কলকারখানা খোলার ব্যাপারে কতগুলো নিয়ম আছে। শ্রমিকদের টিকা দিতে হবে। টিকা দেয়া কঠিন কোনো কাজ না। গার্মেন্টস মালিকদেরও দায়িত্ব আছে।’

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আগস্ট মাসের মাঝামাঝি পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হবে। এখন যে ‘খারাপ পরিস্থিতিটা’ হচ্ছে তা দুই সপ্তাহ আগের পরিস্থিতি আর মৃত্যু যেটা হচ্ছে সেটা তিন সপ্তাহ আগের পরিস্থিতি উল্লেখ করে মহামারি বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘ঈদের আগে যে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল ছিল তার প্রভাব দেখা যাবে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রমিকদের ঢাকায় আসার প্রভাব অবশ্যই পড়বে। এর কিছু প্রভাব দেখতেই পাচ্ছি। সংক্রমণ বাড়ছে-মৃত্যুও হচ্ছেই। মানুষকে ঈদের ভেতরে ছেড়ে দেয়ার খেসারত দিতে হবে সামনে।’

সরকারের কোভিড-বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লা বলেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণের হার অতি উচ্চ। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে গতকাল থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে দেয়া করোনা ঝুঁকি আরও বাড়াবে।’