Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

ডিজিটাল বাংলাদেশের চূড়ান্ত রূপ

আগস্ট ১, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম


ডিজিটাল বাংলাদেশের চূড়ান্ত রূপ
  • এবারই প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ
  • মাঠ পর্যায়ে থাকছেন বিবিএসের সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তা, প্রায় চার লাখ তথ্য সংগ্রহকারী, ইউএনও, ডিসি ও এসপিসহ অন্যান্য দপ্তরের কর্মকর্তারাও
  • সরাসরি নয়, এবারো    সেকেন্ডারি সোর্স থেকেই নেয়া হবে প্রবাসীদের তথ্য
  • জনশুমারির সফল বাস্তবায়ন হবে দেশের জন্য বড় মাইলফলক —বলছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা
  • দূর হতে যাচ্ছে প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়ে বিতর্ক। নির্ভুল ও প্রকৃত সংখ্যা প্রকাশে আশাবাদী বিবিএস

১০ বছর পরপর দেশে অনুষ্ঠিত হয় আদমশুমারি ও গৃহগণনা। সে হিসাবে সর্বশেষ পঞ্চম আদমশুমারি হয়েছিল ২০১১ সালে। ২০১৩ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ‘পরিসংখ্যান আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী আদমশুমারি ও গৃহগণনার নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয় ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’। পূর্বের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে জনশুমারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির কারণে তা পেছানো হয়েছে। আগামী ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর জনশুমারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও চলমান করোনা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না ঘটায় শুমারি নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তার কথা বলছেন কেউ কেউ। তবে প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগসহ সার্বিক সাপোর্ট পেলে নির্ধারিত সময়েই (২৫-৩১ অক্টোবর) জনশুমারি ও গৃহগণনা করা সম্ভব হবে। নির্ধারিত সময়েই শুমারি সম্পন্নের লক্ষ্যে সার্বিক কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছে বিবিএস।

বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত পাঁচটি শুমারিই হয়েছিল ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে। এরপর ২০১১ সালে সংযুক্ত হয় আইসিআর প্রশ্নপত্র। যদিও আইসিআরও ছিলো ম্যানুয়াল পদ্ধতি। আগের এসব পদ্ধতিগুলোতে যে ভুল হতো, সেটা মেনে নিতেই হবে। কারণ ম্যানুয়াল হওয়ায় এগুলোতে মানুষের ভুল (হিউম্যান ইরর) হতো। এই ভুলগুলো হাতে পূরণ করার কারণেই হতো। এবার সেই ভুল নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে প্রথম দিকের প্রস্তাবনা অনুযায়ী মাল্টিমোড পদ্ধতিতেই শুমারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মাল্টিমোড পদ্ধতি নিয়েই ডিপিপি পাস করা হয়েছিল। আর ভেরিয়াস টাইপের প্রযুক্তি, পলিসি নিয়েই শুমারি সম্পন্ন করার লক্ষ্যে এগিয়েও যাচ্ছিল বিবিএস। এরই মধ্যে প্রকল্পের টিম পরিবর্তন হয়। এরপর বর্তমান টিম প্রকল্পের বাজেট ও সময় পর্যালোচনা এবং জনবলের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মাল্টিমোড না করে ইউনিমোডে করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ইউনিমোড অর্থাৎ বিদ্যমান বাজেটে সরাসরি ক্যাপি পদ্ধতিতে ডিজিটাল জনশুমারি করা সম্ভব দেখে নিজেদের সক্ষমতাও বিবেচনা করে বিবিএস। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে যে পরিমাণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ও মোবাইল ব্যবহারকারী রয়েছে, সে হিসাবে ইউনিমোডে যে সংখ্যক ব্যবহারকারীর প্রয়োজন ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্যাব ব্যবহারে সক্ষম এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা প্রশ্নপত্র নিয়ে মাঠপর্যায় থেকে তথ্য দিতে পারবে— এমন সব বিষয় পর্যালোচনা করেই ডিজিটাল জনশুমারি করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিবিএস। এর মাধ্যমে ডিপিপির বাজেট থেকে ১৭৬ কোটি টাকাও কম খরচ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, প্রকল্পে অর্থায়ন করার বিষয়ে ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের অনাগ্রহের কারণে নিজেদের জিওবি ফান্ডেই প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিবিএস। যে কারণে প্রকল্পের ব্যয় কমে আসছে। আর এটাই এবারের শুমারিতে বিবিএসের পদ্ধতিগত পরিবর্তন এবং সম্পূর্ণ ডিজিটাল সিস্টেমেই শুমারি সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে এবারই প্রথম এবং পুরো বিশ্বেই প্রথম পুরোপুরি ডিজিটাল জনশুমারি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নত বিশ্বে জনশুমারি করা হয় ই-সেনসাসে অর্থাৎ ই-মেইলের মাধ্যমে ডাটা সংগ্রহ করা। যা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। কারণ ওই পরিমাণ জনগণের সক্ষমতা বাংলাদেশে নেই। তবে ইরানে ডিজিটাল জনশুমারি করলেও তারাও পুরোপুরি কাভারেজের আওতায় নিয়ে আসতে পারেনি। কিছু কিছু এলাকায় ম্যানুয়ালি করতে হয়েছে তাদেরও। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারণেই এবার ডিজিটাল জনশুমারিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে জানিয়ে বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে যে আমরা পৌঁছেছি তারই চূডান্ত রূপ এবারের এই ডিজিটাল জনশুমারি। এবারের জনশুমারি যদি সফলভাবে সম্পন্ন করা যায় তাহলে এটা হবে দেশের জন্য বড় মাইলফলক। বিশ্বের কাছেও দেশের মর্যাদা আরও উন্নত অবস্থানে পৌঁছাবে।

এদিকে অতীতে সরাসরি প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়নি বলে বলছেন অনেকেই। তবে এবারের শুমারিতে প্রবাসীদেরও গণনার আওতায় আনা হবে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও ইতোমধ্যে প্রকাশ পেয়েছে। যদিও বিবিএসের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে বলছেন, এবারের জনশুমারিতেও প্রবাসীদের আনা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, কোনো দেশেই এটা করতে পারে না, এটা সম্ভবও হয় না। কারণ প্রবাসীদের সঠিক তথ্য কখনোই নেয়া সম্ভব হয় না। প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে কখনো কখনো দুবারও গণনা হয়ে যায়। সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা দুষ্কর বলেই কোথাও করা হয় না, কোনো দেশেই করা হয় না। যে কারণে প্রবাসীদের বিষয়টি এজেন্ডা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তবে একেবারেই যে বাদ পড়ছেন প্রবাসীরা তাও কিন্তু নয়। বিবিএস সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসীদের ডাটা নেয়া হবে সেকেন্ডারি সোর্স থেকে। পাসপোর্ট অধিদপ্তর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো সমন্বয় করে যে ডাটা দেবে সেটাই সংযুক্ত করে নেবে বিবিএস। মাঠপর্যায় থেকে আনা হবে না। 

বিভিন্ন গণমাধ্যমে চারটি ধাপে শুমারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হলেও বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, শুমারির ধাপ একটাই হয়ে থাকে। ২৫ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত যে সময় নির্ধারণ করা আছে এটা প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত। তিনি লিখিতভাবে অনুমোদন দিয়েছেন এবং শুমারির আগের রাতে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন।

এদিকে শুমারি সফলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে জেলাপর্যায়ের সকল দপ্তরের কর্মকর্তারাও জড়িত থাকবেন জানিয়ে বিবিএসের কর্মকর্তারা বলছেন, মাঠপর্যায়ে ইউনও-ডিসি-এসপি থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারাই জড়িত থাকবেন। বিবিএসের সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মকর্তা সম্পৃক্ত থাকবেন। মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহকারী থাকবেন প্রায় চার লাখ। যেহেতু ডিজিটাল জনশুমারি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেহেতু তথ্য সংগ্রাহকদের ই-ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে বিবিএস। ইতোমধ্যে উপজেলা ইউএনওদের প্রধান করে কমিটি গঠন করা হয়েছে, তাদের মাধ্যমে প্যানেল তৈরি করে তথ্য সংগ্রহকারীদের যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে যে, তথ্য সংগ্রহকারীরা অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহারে সক্ষম কি-না এবং ট্যাবলয়েড ব্যবহার করে ডিজিটাল জনশুমারিতে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন কি-না। যাচাই-বাছাই করে প্যানেল তৈরি করছেন তারা, অনেক জায়গায় ইতোমধ্যে প্যানেল হয়েও গেছে, আরও কিছু বাদ রয়েছে, তারাও করছেন। প্যানেল করার পরই তথ্য সংগ্রহকারীদের ই-ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে। ট্রেনিংয়ে যারা নির্দিষ্ট নম্বর পাবেন তাদেরই তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে চূড়ান্ত নিয়োজিত করবে বিবিএস।

জনসংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিদ্যমান বিতর্ক এড়াতেও কাজ করছে বিবিএস। বিবিএস বলছে, এর আগের পাঁচটি শুমারিতে বিবিএসের ভুল ছিলো না। যে ভুল হতো সেটা ছিলো সিস্টেমের ভুল। তথ্য সংগ্রহকারীরা তৎকালীন সময়ে হাতে পূরণ করায় ভুল হয়েছিল। এবার সেসব ভুল যাতে না হয় সেজন্য ট্যাবের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আরও আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। বিবিএস ইতোমধ্যে যে অ্যাপস তৈরি করেছে সে অ্যাপসও কোনো ভুল তথ্য নিতে দেবে না এবার। অ্যাপসই তথ্য সংগ্রহকারীকে নিয়ন্ত্রণ করবে। মাঠপর্যায় থেকে এবার যে ডাটা উঠে আসবে এবং সার্ভারে যে ডাটা জমা হবে সেটাই হবে প্রকৃত সংখ্যা এবং এ সংখ্যাই প্রকাশ করবে বিবিএস। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, প্রকৃত জনসংখ্যা নিয়ে যে বিতর্ক চাউর রয়েছে সেটা এবার দূর হবে। এবারের শুমারিতে নির্ভুল ফলাফল প্রকাশে আশাবাদী বিবিএস বলছে, আগের শুমারিতে ভুলভ্রান্তি থাকলেও জনসংখ্যার হিসাবে খুব বেশি একটা তারতম্য হবে না বরং কাছাকাছিই থাকবে।

আমারসংবাদ/জেআই