Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

কুমিল্লায় কমেছে সংক্রমণ

নুর মোহাম্মদ মিঠু ও জহিরুল হক রাসেল, কুমিল্লা

আগস্ট ৫, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম


কুমিল্লায় কমেছে সংক্রমণ
  • সিটিসহ উপজেলায়ও এখন টিকা দেয়া হচ্ছে, কাল থেকে গণটিকা প্রদানে প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা প্রশাসন —মোহাম্মদ কামরুল হাসান, জেলা প্রশাসক, কুমিল্লা
  • জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে জেলা পুলিশ —ফারুক আহমেদ, পুলিশ সুপার, কুমিল্লা
  • ৪৮ থেকে ৫০ শতাংশে থাকা সংক্রমণ হার গতকাল পর্যন্ত কমে ৩০ শতাংশে নেমেছে, পার্শ্ববর্তী জেলার রোগীও কুমিল্লায় চিকিৎসা নিচ্ছেন —ডা. মীর মোবারক হোসাইন, সিভিল সার্জন, কুমিল্লা

প্রায় ৫৯ লাখ মানুষের বসবাস ১৮টি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলা কুমিল্লায়। কয়েকদিন আগেও এ জেলায় চলমান করোনা পরিস্থিতি ছিলো উদ্বেগজনক। সংক্রমণের হার বেড়ে গিয়েছিল প্রায় ৫০ শতাংশেরও বেশি। ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল মৃত্যুর সংখ্যাও। যদিও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, আক্রান্ত কিংবা মৃত্যুর এ হারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পার্শ্ববর্তী চাঁদপুর, নোয়াখালীসহ আরও একাধিক জেলার রোগীও। পার্শ্ববর্তী জেলার অনেকেই এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছে কুমিল্লাতে। তবে রোগীর ঠিকানা নিয়ে নয়, বরং শুরু থেকেই কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের তৎপরতা ছিলো সার্বিকভাবে জেলার উদ্বেগজনক করোনা পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ এবং এ পরিস্থিতিতে সংকটে পড়া বিভিন্ন সম্প্রদায়ের খেটেখাওয়া মানুষদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণ উপহার নিশ্চিতকরণ। এ ছাড়াও চলমান লকডাউনে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের সফল বাস্তবায়নও। ইতোমধ্যেই লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থান আর কঠোরতার কারণে অসহায় হয়ে পড়া মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, সিটি এলাকাসহ উপজেলা পর্যায়ে টিকা প্রদান কার্যক্রম এবং সরকার ঘোষিত গণটিকা দান কার্যক্রমের প্রস্তুতিসহ করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সফল তৎপরতায় আক্রান্ত কিংবা সংক্রমণের হার কমে এসেছে অনেকটাই। বর্তমানে সংক্রমণের হার ৫০ থেকে ৩০ শতাংশেও নেমে এসেছে বলে আমার সংবাদকে জানিয়েছেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক আহমেদ ও সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন।   

জেলা প্রশাসনের সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের ৪০টি মোবাইল টিম ছাড়াও পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের দুটি, সেনাবাহিনীর ১০টি টিম কাজ করছে। কুমিল্লার প্রত্যেকটি উপজেলা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রায় ৫৯ লাখ মানুষের বসবাস। মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় শতভাগ মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাও কঠিন। তবুও আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মাস্ক পরিধান ছাড়াও সরকার ঘোষিত অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করতেও কাজ করে যাচ্ছি। অবাধ্যদের আইনের আওতায় আনার মাধ্যমে অন্যদেরও সচেতন করার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, কুমিল্লায় করোনা সংক্রমণের হার কয়েকদিন আগেও খুব বেশি ছিলো। এখন সংক্রমণ হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের নিচে রয়েছে। এ ছাড়া চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে অসহায়-দরিদ্র, খেটেখাওয়া মানুষদের মাঝেও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছে জেলা প্রশাসন। লকডাউনের কারণে সিএনজিচালক-অটোচালক, বেদে সম্প্রদায়, মুচি সম্প্রদায়সহ নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। জুলাই মাসেও সাড়ে পাঁচ হাজার খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট আমরা দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করেছি। এছাড়া ৩৩৩-এর মাধ্যমেও প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছি আমরা এবং এরই ধারাবাহিকতায় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের গত সোমবার পর্যন্ত ৩৮৪ জনকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। একই সময়ে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি ১৮টি উপজেলা প্রশাসনও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ৩২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১৫৪টি মামলা দায়ের করে এবং ১৫৪ জনকে দণ্ড দেয়ার মাধ্যমে এক লাখ ১৪ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা যায়, গত এক মাসে (জুলাই) ৭৯০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি ৩৫ হাজার ৭৪৪ জন অসহায়-দরিদ্র মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা করা হয়।  এছাড়াও একই সময়ে ৪৬ লাখ ২১ হাজার ৬০ টাকা জরিমানাও আদায় করে জেলা প্রশাসন।

চলমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সার্বিক কার্যক্রমই পরিচালিত হচ্ছে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ কামরুল হাসানের নির্দেশনায়। জানতে চাইলে আমার সংবাদকে তিনি বলেন, ‘কুমিল্লা জেলায় করোনা পরিস্থিতি সার্বিকভাবে উন্নতির দিকেই রয়েছে। যদিও এখানে টেস্ট বেশি হচ্ছে তাই রোগীর সংখ্যাও বেশি। তবে বর্তমানে সংক্রমণের হার আগের চেয়েও অনেকটাই কমে এসেছে।’ সংক্রমণের হার কমে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যথারীতি সরকার ঘোষিত নির্দেশনা মেনে সফল লকডাউন বাস্তবায়ন, লকডাউনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জনসাধারণের অবাধ চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ এবং মাস্ক পরিধানে উদ্বুদ্ধ করায় সংক্রমণ হার কমে আসছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার ঘোষিত গণটিকা দান কার্যক্রমের আগে দু-তিন দিনের মধ্যেই সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৫০ হাজার টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে টিকা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত হাজার মানুষ টিকা নিচ্ছে। উপজেলাগুলোতেও এখন মানুষ টিকা নিতে যাচ্ছে। প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার মানুষ টিকা নিতে যাচ্ছে উপজেলাগুলোতে। এছাড়া আগামীকাল ৭ আগস্ট শনিবার থেকে গণটিকা দান কর্মসূচিও চালু হতে যাচ্ছে। সরকারের গণটিকা দেয়ার এ কার্যক্রমকে বাস্তবায়ন করতেও প্রস্তুত রয়েছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) ফারুক আহমেদও আমার সংবাদকে জানিয়েছেন, করোনা সংক্রমণের হার আগের চেয়ে অনেকটাই কমে এসেছে। তিনি বলেন, গতকালের রিপোর্ট অনুযায়ী সংক্রমণের হার এখন ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে। লকডাউন বাস্তবায়নে জেলা পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত বিভিন্ন বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিটিসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত চেকপোস্ট ও টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সফল লকডাউন বাস্তবায়নের মাধ্যমে সার্বিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে জেলা পুলিশ।

জেলার সিভিল সার্জন ডা. মীর মোবারক হোসাইন আমার সংবাদকে বলছেন, ‘গত কয়েকদিন আগেও কুমিল্লায় করোনা সংক্রমণের হার ছিলো ৪৮ থেকে ৫০ শতাংশেরও কছাকাছি। বর্তমানে তা অনেকটাই কমে এসেছে। সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত সংক্রমণের হার ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পার্শ্ববর্তী জেলার রোগীর বিষয়ে তিনি বলেন, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ একাধিক জেলার রোগীরাও কুমিল্লায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।’ এর মধ্যে সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার ছয় থেকে সাতজন রোগী কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

আমারসংবাদ/জেআই