Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

দেশজুড়ে টিকা উৎসব শুরু

মাহমুদুল হাসান

আগস্ট ৬, ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম


দেশজুড়ে টিকা উৎসব শুরু
  • ক্যাম্পেইনে টিকা পাবে ৩২ লাখ মানুষ
  • অগ্রাধিকার দেয়া হবে ৫০-ঊর্ধ্ব নারী ও প্রতিবন্ধীদের
  • ঘোষণা থাকলেও এখনই টিকা মিলবে না ১৮ বছর ও তদূর্ধ্বদের
  • ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনে মিলবে টিকা
  • টিকা থেকে বাদ যাবে না রোহিঙ্গারাও
  • দুর্গম-প্রত্যন্ত অঞ্চলেও মিলবে টিকা

করোনার ভয়াবহতা ক্রমশ বাড়ছে। দেড় বছরের করোনা সংক্রমণে দিশাহারা মানুষ। কঠোর লকডাউন জারি করা হলেও বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে সংক্রমণও কমছে না। হাসপাতালে নেই তিল ধারণের ঠাঁই। আইসিইউ সংকটে মৃত্যু এখন তুচ্ছ হয়ে উঠেছে। স্থবির অর্থনীতি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ সেই গেলো বছর মার্চ থেকে। সামগ্রিকভাবে ক্ষতিতে রয়েছে দেশ। উত্তরণের উপায় হিসেবে এখন  সরকার কোভিড-১৯ টিকায় বিশেষ জোর দিচ্ছে। যদিও এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে টিকায় বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে টিকা আমদানি, বয়সের সীমাবদ্ধতা ও কুসংস্কারকে দায়ী করা হলেও সম্প্রতি দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা-কোভিশিল্ড, ফাইজার, সিনোফার্ম ও মডার্নার টিকার এক যোগে প্রয়োগ চলছে।

ফলে গণটিকা সাধারণ মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছাতে আজ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত দেশে টিকা উৎসব পালনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ডে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সময়ে অন্তত ৩২ লাখের বেশি ডোজ টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ৫০ বছর তদুর্ধ্ব, নারী ও প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার। প্রত্যন্ত অঞ্চল-প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এবং ২৫ বছর, তদুর্ধ্বদের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। একই সাথে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ৫০ বছর তদুর্ধ্বদের টিকার আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে  আগের ঘোষণা থাকলেও ক্যাম্পেইনিংয়ে ১৮ বছরের নাগরিকদের টিকা দেয়া হবে না বলে জানানো হয়েছে।  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের তথ্যমতে, আজ থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত দেশে গণটিকাদান ক্যাম্পেইন চলবে। সারা দেশের চার হাজার ৬০০টি ইউনিয়ন, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডে একযোগে টিকা উৎসব শুরু হবে। কোথাও টিকা কার্যক্রম বাদ পড়লে সেখানে ৮ ও ৯ আগস্ট টিকাদান কার্যক্রম চালু হবে। ৮ থেকে ৯ আগস্ট দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে চলবে টিকাদান। একই সাথে ১০ থেকে ১২ আগস্ট ৫৫ বছর বয়সি এবং তদুর্ধ্ব রোহিঙ্গা নাগরিকদেরও টিকার আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে ৩২ হাজার ৭০৬ জন টিকাদানকারী ও ৪৮ হাজার ৪৫৯ জন স্বেচ্ছাসেবী নিবিড়ভাবে এই টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবেন। আজ শুরু হওয়া টিকা উৎসবে পঞ্চাশোর্ধ্ব জনগোষ্ঠী, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। দিনের শুরুতে দুই ঘণ্টা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাদের টিকা দেয়া হবে। একই সাথে ২৫ বছর ও তদুর্ধ্ব জনগোষ্ঠী, দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায়, গতকাল শুক্রবার বেলা আড়াইটা পর্যন্ত এক কোটি ৯৬ লাখ ৩২ হাজার ৫২৬ জন নিবন্ধন করেছেন। তার মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে নিবন্ধন করেছে এক কোটি ৯৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭২৩ জন। আর পাসপোর্ট ব্যবহার করে নিবন্ধন করেছেন দুই লাখ ৯৬ হাজার ৮০৩ জন। এদের মধ্যে এক কোটি দুই লাখ ৮৯ হাজার ৭৯৭ জন প্রথম ডোজ গ্রহণ করেছেন। তার মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা-কোভিশিল্ড গ্রহণ করেছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৬৩ জন, সিনোফার্ম ৩৩ লাখ ১৭ হাজার ৫৮২ জন, ফাইজার ৫০ হাজার ২৫৫ জন এবং মাডার্না ১১ লাখ এক হাজার ৮৯৭ জন। এদের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন ৪৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৭ জন। সেই হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা-কোভিশিল্ড গ্রহণ করেছে ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার ২৩১ জন, সিনোফার্ম নিয়েছে ৯২ হাজার ২৪৮ জন এবং ফাইজার নিয়েছে সাত হাজার ৩৮ জন। সম্প্রতি মাডার্না টিকা প্রদান শুরু হওয়ায় এখনো কেউ দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলে এক দিনে কত পরিমাণে টিকা দিতে আমরা সক্ষম সেটি দেখতে চাই। প্রাথমিকভাবে ৭ থেকে ১২ আগস্টের মধ্যে ৩২ লাখ মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। এক্ষেত্রে যারা আগে রেজিস্ট্রেশন করেছেন তারা যেখানে কেন্দ্র নির্ধারণ করেছেন সেখানে টিকা নেবে। ক্যাম্পেইনের টিকাদান আলাদাভাবে পরিচালিত হবে। যেকোনো ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম সুনির্দিষ্টভাবে দেয়ার পরিকল্পনা করা সম্ভব হয় না। আমরা আমাদের সক্ষমতা অনুযায়ী পরিকল্পনা তৈরি করেছি। দেশে টিকার ঘাটতি থাকলেও সবাইকে টিকা দিতে সরকার বদ্ধপরিকর।’

তিনি বলেন, ‘কোভেক্সসহ বিভিন্ন টিকা উৎপাদনকারীদের সঙ্গে কথা হয়েছে। দেশেও টিকা উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। নেতিবাচক চিন্তা ও কুসংস্কার পরিহার করে টিকা গ্রহণের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান করছি। গত ১০ দিনে ৩০ লাখ টিকা দেয়া হয়েছে। বড় আকারে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন না করতে পারলে বিরাট জনগোষ্ঠীকে কাভার করা যাবে না। এটা আমাদের কাছে একটি পাইলট প্রজেক্ট। এ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করব। আগামী ১০-১২ আগস্ট ৫০ ঊর্ধ্ব রোহিঙ্গাদেরকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। বর্তমানে যাদের করোনার টিকা দেয়া হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজ টিকা হাতে রেখেই তাদের টিকা দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

আমারসংবাদ/জেআই