Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

‘স্তব্ধ’ আত্মপ্রচারের রাজনীতি

রফিকুল ইসলাম

আগস্ট ৬, ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম


‘স্তব্ধ’ আত্মপ্রচারের রাজনীতি
  • ভুঁইফোঁড়দের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থান
  • আগস্টের পর এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু
  • ভুঁইফোঁড় সংগঠনের কার্যক্রমে আরও সতর্ক হতে হবে —লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান , প্রেসিডিয়াম সদস্য, আ.লীগ
  • আ.লীগের আদর্শ নিয়ে কেউ আত্মপ্রচার করতে পারে না —বিএম মোজাম্মেল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ

‘স্তব্ধ’ আওয়ামী লীগের ভুঁইফোঁড় সংগঠনের আত্মপ্রচারের রাজনীতি! শোকের মাস আগস্ট ঘিরে রাজধানীর কোথাও নেই সংগঠনগুলোর ব্যানার, ফেস্টুন ও বড় বিলবোর্ড। দল ও সহযোগী সংগঠনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে কেউ কেউ ব্যানার-ফেস্টুন টাঙালেও ব্যবহার করেনি নিজের ছবি। আওয়ামী লীগ বলছে, এটি আগস্ট ঘিরে আত্মপ্রচারে না থাকা ভুঁইফোঁড় সংগঠনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের সুফল। দলকে বিতর্কমুক্ত করতে আগস্টের পর এসব সংগঠনের কার্যক্রম ও গতিবিধির লাগাম টেনে ধরা হবে।

আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শোকের মাস আগস্ট ঘিরে এ বছর ব্যানার, ফেস্টুন বা বিলবোর্ড তেমন চোখে পড়ার মতো নেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ দিয়ে আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে কিছু কিছু ব্যানার-ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে। কেউ কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগেও ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়েছেন নিজ নিজ এলাকায়। তবে এবারের ব্যানারে কেউ ব্যক্তিগত ছবি ব্যবহার করেননি। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডির ৩/এ দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এবার নেই ভুঁইফোঁড় সংগঠনগুলোর ব্যানার-ফেস্টুন। অথচ এর আগে আগস্ট এলেই এসব সংগঠনের আত্মপ্রচার ছিল চোখে পড়ার মতো। কারও কারও ছবির বিশালত্বে হারিয়ে যেতেন জাতির পিতা ও ১৫ আগস্টের শহীদরা। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলিতে নিজ নিজ ছবি লাগিয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়, সরকারি-বেসরকারি আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, পাড়া-মহল্লার দেয়াল ও পিলারে বিনম্র শ্রদ্ধাসংবলিত পোস্টার-ব্যানার আর লেখনী থাকতো। ভুঁইফোঁড়, উঠতি, পাতি, মহানগরী, থানা ও ওয়ার্ড নেতাদের এ আত্মপ্রচারে শোক ঢেকে যেতো পোস্টারে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘লীগ’ শব্দ ও জাতির পিতার নাম লাগিয়ে গড়ে ওঠা শতাধিক সংগঠনের নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। কেউ কেউ নিজের ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাকটিভ করে বাঁচার চেষ্টা করছেন। মূলত অতিসম্প্রতি ‘চাকরিজীবী লীগ’ খুলে আওয়ামী লীগের উপকমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর র্যাবের হাতে আটক হন হেলেনা জাহাঙ্গীর। এ সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, ওয়াকিটকি ও বিদেশি চাকু উদ্ধার করে র?্যাব। এরপর থেকে আলোচনায় উঠে আসে ভুঁইফোঁড় সংগঠনগুলো। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব ‘লীগ’ ও ‘রাজনৈতিক দোকানদারদের’ বিরুদ্ধে কথা বলতে শুরু করে আওয়ামী লীগ। দলকে বিতর্কিত ও বিব্রতকর অবস্থার মুখে ফেলে দেয়া এসব অবৈধ সংগঠনের কাউকেই ন্যূনতম ছাড় দেবেন না দলের নীতিনির্ধারকরা। দলের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেয়া শুরু হয় ভুঁইফোঁড় সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকদের বিষয়টিও। দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি- যারাই নামের আগে ‘লীগ’, ‘মুক্তিযোদ্ধা’, ‘বঙ্গবন্ধু’ ও তার পরিবারের সদস্যদের নাম ব্যবহার করে নতুন নতুন সংগঠন তৈরি করছে- সবাই অপরাজনীতিবিদ, সুযোগ-সন্ধানী, সুবিধাবাদী, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, ধান্ধাবাজ, প্রতারক, হাইব্রিড, নীতি-আদর্শহীন ও ভুঁইফোঁড়। পরিচ্ছন্ন ও আদর্শিক রাজনীতি ধরে রাখতে এদের কাউকেই ছাড় দেয়া যাবে না। চলতি আগস্টের পর এসব সংগঠন এবং দলের নাম ভাঙিয়ে যারা অপকর্ম ও অপরাজনীতি করে বিপুল অর্থবিত্ত বানিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আওয়ামী লীগ।

তথ্যমতে, ভুঁইফোঁড় সংগঠনের নেতারা রাতারাতি বিত্তশালী হয়ে গেছেন। ‘লীগ’ শব্দ ব্যবহার করে তারা কার্ড ও প্যাড ছাপিয়ে সরকারি-বেসরকারি দপ্তর এবং বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও ধান্ধাবাজি করতেন। ক্ষমতার অপব্যবহার ও আদর্শহীন রাজনীতির মধ্য দিয়ে দুর্নীতি, চাঁদাবাজিসহ নানামুখী অপকর্মে যুক্ত হচ্ছেন তারা। আর এসব সংগঠন ও নেতা তৈরির সুযোগ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কিছু নেতা, বর্তমান ও সাবেক এমপি-মন্ত্রী। তাদের ‘রাজনৈতিক বেকারত্ব’ কাটাতে দলীয় প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণে বা বিরোধী পক্ষকে কটাক্ষ করতে ‘শব্দবোমা’ ফাটাতেই এসব সংগঠনকে প্রথমে পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তাদের কেউ কেউ মিডিয়ার ‘খোরাক’ দিতে চটকদার কথার পাশাপাশি দল ও সরকারের বিরুদ্ধেও কথা বলতেন। তাই শুরু থেকেই এসব তথাকথিত সংগঠনের নেতাদের ক্ষমতা এবং টাকার দাপটে কোণঠাসা আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পরীক্ষিতরা। যদিও বর্তমান পরিস্থিতিতে গাঢাকা দিয়েছেন তারা।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, রাজনৈতিক সুবিধা নেয়া গঠনতন্ত্রের বাইরে অনুমোদনবিহীন শতাধিক ভুঁইফোঁড় সংগঠন গজিয়ে উঠেছে। যাদের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড দল ও সরকারের অর্জনকে বিতর্কিত করছে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে আছেন। তিনি গড়ে ওঠা এসব বিতর্কিত ও অবৈধ সংগঠনকে কোনোভাবেই ছাড় দেবেন না। এ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের নির্দেশনাও দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ একটি আদর্শিক রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ১৫ আগস্ট উপলক্ষে ব্যানার-ফেস্টুনে নিজের ছবি ব্যবহার রাজনৈতিক আদর্শহীন। আওয়ামী লীগের আদর্শ নিয়ে কেউ আত্মপ্রচার করতে পারে না।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান আমার সংবাদকে বলেন, ‘ভুঁইফোঁড় সংগঠনগুলো দলীয় অনুমোদনবিহীন। এসবের বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান নিয়েছি। এদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরও বলেন, এসব সংগঠনের বিষয়ে আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে, সাবধান হতে হবে।

আমারসংবাদ/জেআই