Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

ভাঙলো ‘লকডাউন’ বাড়লো শঙ্কা

রফিকুল ইসলাম

আগস্ট ১০, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম


ভাঙলো ‘লকডাউন’ বাড়লো শঙ্কা
  • স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, শপিংমল ও হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলা
  • চলছে সব ধরনের গণপরিবহন
  • গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে— দাবি বিশ্লেষকদের

বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট, শপিংমল ও হোটেল-রেস্তোরাঁ আজ থেকে খোলা। চলছে বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ সব ধরনের গণপরিবহন। দীর্ঘদিন ধরে চলা সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের ‘লকডাউন’ আজ বুধবার থেকে শর্তসাপেক্ষে শিথিল করা হয়েছে। দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, অসহায় ও শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। যদিও আগের বিধিনিষেধের ধারাবাহিকতায় পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদনকেন্দ্র বন্ধ থাকবে। এর আগে বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার।  সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ ৫ আগস্ট রাত ১২টায় শেষ হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না থাকায় কঠোর লকডাউনে কিছুটা শিথিলতা এনে বিধিনিষেধের মেয়াদ গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত বর্ধিত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এ বিষয়ে গত রোববার আদেশ জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। যদিও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো মুহূর্তে আবারো কঠোর বিধিনিষেধ দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।

তথ্যমতে, গত বছর মার্চে বাংলাদেশে আঘাত হানে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুরু থেকেই কখনো লকডাউন, সর্বাত্মক লকডাউন, শাটডাউন, কঠোর বিধিনিষেধ ও অতি কঠোর বিধিনিষেধ দিয়েছে সরকার। সর্বশেষ গতকাল পর্যন্ত ছিলো সরকারের দেয়া কঠোর বিধিনিষেধ। তবে মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে আজ থেকে সবকিছুই স্বাভাবিক হয়েছে। সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা চালু। এছাড়া শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে খোলা রাখা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁয় অর্ধেক আসন খালি রেখে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। তবে সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। গণপরিবহন, বিভিন্ন দপ্তর, মার্কেট ও বাজারসহ যেকোনো প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে অবহেলা পরিলক্ষিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব বহন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদিও করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৬৪ জনের। এ নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১৬১ জনে। এ সময়ে নতুন শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ১৬৪ জন। মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩২২ জন। করোনায় প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা অব্যাহত থাকলেও আজ থেকে সবকিছুই চলছে। মূলত দীর্ঘদিন সরকারের কঠোর বিধিনিষেধ ‘লকডাউন’ থাকায় লক্ষ-কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশের অর্থনীতি। কর্ম হারিয়ে বেকার হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। এর কবলে পড়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনাযাত্রা, শিক্ষাব্যবস্থা ও অর্থনীতিসহ সবকিছু তছনছ হয়ে গেছে। প্রতিদিন ক্ষতির অংক বেড়েই চলেছে। তাই কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার। যদিও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো মুহূর্তে আবারো কঠোর বিধিনিষেধ দেয়া হতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রতিদিন সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছেই। এমন অবস্থায় কঠোর বিধিনিষেধ ‘লকডাউন’ শিথিল করায় করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তাই করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের পাশাপাশি নিজ নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে গণজমায়েত। সাধারণ মানুষের মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মানাতে আরও কঠোর হতে হবে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। নইলে করোনার পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

আইইডিসিআরের প্রধান উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, শিথিল লকডাউনে গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। এগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। নইলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে।

আমারসংবাদ/জেআই