আগস্ট ১১, ২০২১, ০৬:৫৫ পিএম
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। সংক্রমণ রোধে জরুরি লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। পরিস্থিতি নিম্নমুখী না হওয়ায় কয়েক দফা বাড়ানো হয় বিধিনিষেধ। সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো থমকে যায় বিচার বিভাগও। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে ভার্চুয়াল আদালত চালু করা হয়। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাভাবিক আদালত খুলে দেয়ার দাবিতে সারা দেশে আইনজীবীরা বিক্ষোভ, মানববন্ধন করেন। তাই আইনজীবীদের গণদাবি মাথায় নিয়ে ও বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে দীর্ঘদিন পর গতকাল বুধবার থেকে শারীরিক উপস্থিতিতে নিম্ন আদালতের বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয় সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ফলে স্বস্তি ফিরেছে মামলার চাপে আটকেপড়া বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের।
দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধ শেষে বিচারিক কার্যক্রমে ফিরছে দেশের সব আদালত। গত ৮ আগস্ট থেকে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ভার্চুয়ালি বিচারকাজ শুরুর পর গতকাল থেকে হাইকোর্টের সবগুলো (৫৩টি) বেঞ্চে ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ভার্চুয়ালি অথবা শারীরিক উপস্থিতিতে দেশের সব অধঃস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য গ্রহণসহ অনতিবিলম্বে স্বাভাবিক বিচারকাজ পরিচালনার সিদ্ধান্ত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এদিকে দীর্ঘদিন পর নিয়মিত আদালত চালু হওয়ায় ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের চাপ বেড়েছে। চাপ বেড়েছে বিচারক, পেশকার, সেরেস্তাদাদেরও। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আদালতে আসছেন আইনজীবীরা। কিন্তু বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে তেমন করোনার বিধিনিষেধ মানার প্রক্রিয়া লক্ষ করা যায়নি। চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সামনে হকারদের আনাগোনা দেখা গেছে। আদালতে আগতরা জটলা পাকিয়ে আছে ভ্রাম্যমাণ চা-দোকানের সামনেও। তবে বেশ কড়াকড়ি লক্ষ করা গেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে। আইনজীবীদের মাস্ক ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে দেখা গেছে। আরোপ করা হয়েছে বাড়তি কড়াকড়িও। এদিকে বিচারপ্রার্থীদের উপস্থিতি কম থাকলেও আইনজীবীরা বসছেন নিজ নিজ চেম্বারে। হাইকোর্ট বিভাগের সকল বেঞ্চ ভার্চুয়ালি খুলে দেয়ায় আইনজীবীদের কেউ কেউ আবার বাসায় থেকে যুক্ত হচ্ছেন বিচারকাজে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জামিউল হক ফয়সাল আমার সংবাদকে বলেন, ‘অনেকদিন ধরেই আমরা আদালত খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। সময় নিলেও যেহেতু সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে স্বাভাবিক আদালত খুলে দিয়েছে তাই সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ বর্তমান অবস্থায়ও মোটামুটি সুরক্ষা নিয়ে যাতে আদালতের কার্যক্রম চালু রাখা যায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। পেশাগত কাজে যে আইনজীবীরা আদালতে যান তাদের করোনা ভ্যাকসিন দেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে বলেও মত দেন এ আইনজীবী।
এদিকে পুরান ঢাকার নিম্ন আদালত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভার্চুয়াল আদালতের চেয়ে স্বাভাবিক আদালতে আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের চাপ বেড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই উপস্থিত হচ্ছেন। তবে স্বাভাবিক আদালতের প্রথম দিন হওয়ায় হাজিরা ও সাক্ষীর বিষয় দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে আইনজীবী খালেদ হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ভার্চুয়াল আদালত চলার পর আজ স্বাভাবিক আদালতের প্রথম দিন। আজ স্বাভাবিক আদালত হওয়ায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের চাপ বেড়েছে।’
বিচারপ্রার্থী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আদালত বন্ধ থাকায় আমি চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। আদালত স্বাভাবিক হওয়ায় মামলার খবর নিতে আদালতে এসেছি। মামলার বিষয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা হয়েছে। পরবর্তী দিনে হাজিরা দিতে আসবো।’
জানা গেছে, গত মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদেশক্রমে বুধবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের সকল অধঃস্তন দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালত এবং ট্রাইব্যুনালে স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হবে। দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলায় বিচারক প্রযোজ্য ক্ষেত্রে শারীরিক উপস্থিতিতে বা ২০২০ সালের আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার আইন এবং এই আদালতের (হাইকোর্ট) জারি করা বিজ্ঞপ্তি অনুসরণ করে ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে সব ধরনের বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তবে বিচারক প্রয়োজনীয় সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে শারীরিক উপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন পূর্বক সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত এবং সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে জেলা ও দায়রা জজ বা মহানগর দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সংশ্লিষ্ট জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। আর ওই আদেশ পালনে কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা চাওয়া যাবে। এছাড়া এই আদেশ অনতিবিলম্বে কার্যকর হবে উল্লেখ করে গত ৬ আগস্টের বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা বাতিলের কথা বলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের এই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমারসংবাদ/জেআই