Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বাঙালির অস্থিমজ্জায় মিশে আছেন বঙ্গবন্ধু

রফিকুল ইসলাম

আগস্ট ১৪, ২০২১, ০৬:৩০ পিএম


বাঙালির অস্থিমজ্জায় মিশে আছেন বঙ্গবন্ধু
  • গুলি আর কামানের শব্দে ঘুম ভেঙেছিল -জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
  • বিশ্বাসঘাতকতার পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা -আব্দুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ 
  • হাজার বছরের স্বপ্ন হত্যা করা হয়েছিল -আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমৃত্যু আন্দোলন-সংগ্রাম করে গেছেন তিনি। পাকিস্তানের নির্যাতন-নিপীড়ন ও জেল-জুলুমের মুখেও নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকে। সরকার বা দলীয় নেতাদের অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজ, লুটপাট ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ছিলেন আপসহীন। যে বাঙালির মুক্তির জন্য মৃত্যু অবধি কাজ করেছেন। সেই বাঙালির কিছু বিশ্বাসঘাতকের হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয়েছেন তিনি। তাকে হত্যা করলেও তার আদর্শকে হত্যা করতে পারেনি খুনিরা। নিজ কর্মগুণে শত কোটি বছর বাঙালির অস্থিমজ্জায় মিশে থাকবেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর ৪৬তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট ও সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে দৈনিক আমার সংবাদের সাথে কথা বলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা। তারা মনে করেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার ঘটনা বিশ্বাসঘাতকতার পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা। তাকে হত্যার মূল লক্ষ্য ছিলো স্বাধীনতার মূল্যবোধকে মুছে ফেলা।

গুলি আর কামানের শব্দে ঘুম ভেঙেছিল —জাহাঙ্গীর কবির নানক

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারের হত্যা হওয়ার স্মৃতিচারণ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন। বঙ্গবন্ধুর আগমনকে কেন্দ্র করে আগের রাতে আমরা রাত ১টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করি। অনুষ্ঠানের সকল কার্যক্রম সম্পাদন করে বাসায় এসে ঘুমিয়ে পড়ি খুব সকালে উঠতে হবে বলে। কিন্তু ১৫ আগস্ট সকালে আমার ঘুম ভাঙে গুলি আর কামানের শব্দ। মুহূর্তেই জানতে পারি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারের হত্যা করা হয়েছে। সেদিন আমরা ছাত্রলীগের কর্মীরা ঢাকার রাস্তায় ও অলিগলিতে ঘুরেছি, নেতাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরেছি বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু দায়িত্বশীল কেউ প্রতিরোধ করলো না। সেদিন বুঝতে পারিনি, কে কাক আর কে কোকিল, কে হত্যার সাথে জড়িত— কে হত্যার সাথে জড়িত নয়। সেটি বোঝা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য বেপার ছিলো।’ তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সপরিবারের হত্যার প্রতিবাদে সর্বপ্রথম ২১ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করি। ছাত্রলীগের একটা বিরাট অংশ তিলে তিলে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিরোধ ও প্রতিশোধ গড়ে তুলতে থাকি।  ছাত্রলীগের সাবেক  নেতা অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো— সেটি কি উর্বর কোনো মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত ছিলো! বিষয়টি ছিলো এমন— কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মদপান করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে গিয়েছিল! বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়টি তেমন নয়। বিষয়টি ছিলো সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্রের শেকড় ছিলো অনেক গভীরে। অথচ সেদিন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও দলের দায়িত্বশীল নেতারা কেউ বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করলেন না। কেন বঙ্গবন্ধুকে পরিপূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হলো না। যারা দায়িত্বে ছিলেন— তারা কী করলেন বঙ্গবন্ধুর জন্য। তারা কিছুই করেননি। উল্টো বাঙালি জাতিকে এক রক্তাক্ত ইতিহাস উপহার দিলেন। খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বঙ্গভবন দখল করলো। সেদিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পরিচিত যারা— তারা এই হত্যার বিরুদ্ধে একটু প্রতিবাদও করলেন না। হয় সেদিন ওই নেতারা হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিলেন, নয়তো কাপুরুষতা ছিলো, তাদের খুনিদের প্রতি দুর্বলতা ছিলো, অথবা হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলো।’ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক আরও বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর জাতির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আমরা একটি রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেছিলাম। আমরা ক্ষমতার অট্টালিকায় গা ভাসিয়ে দেইনি। কিন্তু আমাদের দলের মাঝে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এই বিশৃঙ্খলা কেন্দ্রে থেকে জেলা উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যায়। একদিকে পাকিস্তানি পরাজিত শক্তি, অন্যদিকে রাজাকার আলবদর আলশামসের ষড়যন্ত্র। আবার দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কখনো ভৌগোলিক স্বাধীনতা চাননি, তিনি সবসময় অর্থনৈতিক স্বাধীনা চেয়েছেন, অর্থনৈতিক শোষণ থেকে স্বাধীনতা চেয়েছেন, বাঙালি জাতিকে স্বাধীন রাষ্ট্র দিতে চেয়েছিলেন। নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশে যখন অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে— ঠিক সেই মুহূর্তে ষড়যন্ত্র শুরু হলো। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করলো। বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশে আমরা এতিমের মতো রাজনীতি করেছি। অনিশ্চয়তার পথে রাজনীতি করেছি। নানামুখী ষড়যন্ত্রের মুখে রাজনীতি করেছি। বঙ্গবন্ধুহীন নেতৃত্বশূন্য হলো আওয়ামী লীগ। নেতৃত্ব কে দেবেন। ঠিক সেই মুহূর্তে দেশে ফিরে দলের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি ফিরে এসেছিল বলেই আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সকল নেতাকর্মীর আশ্রয়স্থল সৃষ্টি হয়েছিল। আমরা নতুন করে স্বপ্ন দেখলাম পিতা হত্যার আন্দোলন সৃষ্টি করার। প্রতিবাদ প্রতিরোধের জাগরণ সৃষ্টি করার।’ 

বিশ্বাসঘাতকতার পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা —আব্দুর রহমান

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের হত্যার ঘটনা বিশ্বাসঘাতকতার পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা উল্লেখ্য করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান বলেছেন, আগস্ট বাঙালির কষ্টের মাস। এই মাসে জাতির সত্তা, মুক্তযুদ্ধের জনক ও বাঙালির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আমরা হারিয়েছি। হারিয়েছি তার পরিবারের সদস্যদের। এটি একটি হূদয়বিদারক রক্তাক্ত বিশ্বাসঘাতকতার পূর্বপরিকল্পিত নীলনকশা। তাকে হত্যা করার মূল লক্ষ্য ছিলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে দেয়া, স্বাধীনতার মূল্যবোধকে মুছে ফেলা। স্বাধীন বাংলাদেশকে পাকিস্তানের ভাবধারায় ফিরি নেয়ার জন্যই পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস সেদিন বিকৃত করেছে এবং বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাসের একটি নিষিদ্ধ নাম করার চেষ্টা করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ’৭৫ পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ ২১ বছর যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো— তারা পাকিস্তানের ধারায় দেশ পরিচালনা করেছে। তারা বাঙালির চেতনাবোধকে বারবার আঘাত করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর নানামুখী ষড়যন্ত্র ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি দেশে ফেরার পর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, ভাত ও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। কার্যকর করেছেন  যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায়। ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর খুনিদের। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ঐক্যবদ্ধ করে বাংলাদেশকে অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।’ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুর রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার আগে-পরে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ ২১ আগস্ট। সেদিন তাদের প্রাইম টার্গেট ছিলো বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। সেই ষড়যন্ত্র থেমে নেই। এখনো হচ্ছে। তারা চায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক পন্থায় পেছন দরজা দিয়ে ক্ষমতায় আসতে। এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, সচেতন থাকবে।’

হাজার বছরের স্বপ্ন হত্যা করা হয়েছিল —আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে পুরো বাঙালি জাতির হাজার বছরের স্বপ্ন হত্যা করা হয়েছিল উল্লেখ্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, ‘হত্যাকারীরা শুধু জাতির পিতাকে হত্যা করেনি, তারা সেদিন পুরো বাঙালি জাতির হাজার বছরের স্বপ্ন, আশা ও সকল আকাঙ্ক্ষাকে হত্যা করেছিল। সদ্য স্বাধীন দেশকে পাকিস্তানে পরিণত করতে চেয়েছিল। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু এই ষড়যন্ত্রের সাথে যারা জড়িত ছিলো, যারা খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, পুনর্বাসন করেছে। তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে হবে। তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হবে বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের নতুন করে শপথ নিতে হবে। নতুন প্রত্যয়ে বলীয়ান হয়ে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দিতে পারলেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে। ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আরও বলেন, ‘অনেক পদলেহী, সুযোগসন্ধানী আছেন। যাদের মধ্যে জাতির পিতার আদর্শ নেই। মোশতাক জাতির পিতার পাশে থেকেই জাতির পিতাকে হত্যা করেছিল। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ থাকুন। এদের ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি থেকেও সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। যেকোনো অপশক্তির বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াবো।’

আমারসংবাদ/জেআই