Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

হুমকির মুখে টেক্সটাইল মিল

এম এ আহাদ শাহীন

আগস্ট ১৫, ২০২১, ০৬:১০ পিএম


হুমকির মুখে টেক্সটাইল মিল
  • বিশেষায়িত টেক্সটাইল মিলের এখন রুগ্নদশা —সৈয়দ শামিম রেজা, সভাপতি, বিএসটিএমপিআইএ
  • ইয়ার্নের মূল্যবৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত বিশেষায়িত টেক্সটাইল মিলগুলোর অস্তিত্ব —মোহাম্মদ হাতেম, সহসভাপতি, বিকেএমইএ

রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পের উভেন পোশাকের এক-তৃতীয়াংশ কাঁচামালের জোগানদাতা দেশের স্পেশালাইজড টেক্সটাইল মিলগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হুমকির মধ্যে পড়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে সরকারি সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)। তারল্য সংকট ও ব্যয় বৃদ্ধির কারণে বিশেষায়িত টেক্সটাইল মিলগুলো সুতা থেকে কাপড় বা উভেন ফেব্রিক প্রস্তুত করতে পারছে না জানিয়ে এ খাতের সক্ষমতা বাড়াতে সরকারকে বিশেষ সহায়তা দিতে সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের অন্যতম অংশ উভেন পোশাকের কাঁচামাল বা ফেব্রিক জোগান দেয়া ছাড়াও সরাসরি ফেব্রিক রপ্তানিও করে থাকে স্পেশালাইজড টেক্সটাইল খাত। গত অর্থবছর এ খাতে রপ্তানির পরিমাণ ছিলো ১৩১ মিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিলো ১১৬ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ২০২১ অর্থবছরে উভেন গার্মেন্ট রপ্তানি করে আয় হয়েছে ১৪ হাজার ৪৯৬ মিলিয়ন ডলার, যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৩৭ শতাংশ। রপ্তানিকৃত বস্ত্রের এক-তৃতীয়াংশ বা চার হাজার ৮৩২ মিলিয়ন ডলারের কাঁচামাল দেশের বিশেষায়িত টেক্সটাইল খাত থেকে আসে। বাকিটা দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়েছে। ‘প্রধান প্রধান পণ্যসমূহের রপ্তানি হ্রাসের কারণ এবং বাধা দূর করার জন্য সুপারিশ বাস্তবায়ন’ শিরোনামে সমপ্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দেয়া প্রতিবেদনে স্পেশালাইজড টেক্সটাইল খাতে বিশেষ সহায়তা দেয়ার সুপারিশের পাশাপাশি প্লাস্টিক, ফার্নিচার, জীবন্ত ও হিমায়িত মৎস্য, শাক-সবজি ও ফলমূল রপ্তানি বাড়াতে নগদ প্রণোদনা বাড়ানোর বিভিন্ন নীতি-সহায়তা দেয়ার সুপারিশ করেছে ইপিবি। এছাড়া, সরকারের ৪০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ পেয়েছে তৈরি পোশাক খাত। সে তুলনায় বিশেষায়িত টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল এক্সেসরিজ শিল্পের বড় অংশই কোনো প্রকার প্রণোদনা সহায়তা পায়নি।

এ ব্যাপারে, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড টেক্সটাইল মিলস অ্যান্ড পাওয়ার লুম ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ শামিম রেজা বলেন, অধিকাংশ বিশেষায়িত টেক্সটাইল মিলের এখন রুগ্নদশা। ঋণ খেলাপির কারণে এ খাতের একটি বড় অংশ সরকারের প্রণোদনা সহায়তাও পাচ্ছে না। এর ফলে যে তারল্য সংকট সৃষ্টি হয়েছে, তাতে করে অনেক কারখানাকে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়েছে। তার ওপর সামপ্রতিক সময়ে দেশের বাজারে ইয়ার্ন বা সুতার অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধিও দুর্দশার বোঝা বাড়িয়ে তুলেছে, যোগ করেন তিনি। এছাড়া, গার্মেন্ট কারখানাগুলো বন্ড সুবিধায় আমদানি করা ফেব্রিক স্থানীয় বাজারে বিক্রি করায় দেশের বিশেষায়িত টেক্সটাইল মিলগুলো তাদের উৎপাদিত ফেব্রিক দেশের বাজারে বিক্রি করতে পারছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি। গার্মেন্ট কারখানাগুলোর এই অসাধু চর্চা বন্ধে তারা বারবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ করেছেন বলেও জানান শামিম রেজা।

এ ব্যাপারে নিট পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আমরা ভারত থেকে কেজিপ্রতি ৩.২২ ডলারে ইয়ার্ন আমদানি করি। কিন্তু স্থানীয় স্পিনিং মিলগুলো আমাদের কাছে সাড়ে চার ডলারের কম দামে ইয়ার্ন বিক্রিই করতে চায় না। এত বেশি মূল্যে কেনা সুতা দিয়ে ফেব্রিক প্রস্তুত করে বিশেষায়িত টেক্সটাইল কারখানাগুলো উচ্চমূল্যে বিক্রি করতেও পারে না জানিয়ে হাতেম বলেন, চীন থেকে আরও কম দামে ফেব্রিক আমদানি করা যায়। তাই ইয়ার্নের মূল্যবৃদ্ধি শুধু নিটওয়্যার রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত করছে না বরং বিশেষায়িত টেক্সটাইল মিলগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলেছে। ইপিবিও বলেছে, বন্ড সুবিধার আওতায় কাপড় আমদানির কারণেও স্পেশালাইজড টেক্সটাইল সেক্টরের পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। তাছাড়া তারল্য সংকট ও মেশিনারিজের দাম বৃদ্ধি এবং ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে ফ্যাক্টরি স্থাপনের বাধ্যবাধকতাসহ বিভিন্ন কারণে এ সেক্টরটি প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হুমকির মুখে পড়েছে। দেশের তৈরি পোশাকশিল্পে নিরবচ্ছিন্ন কাঁচামাল সরবরাহ অব্যাহত রাখার স্বার্থে এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে এ খাতের সক্ষমতা বাড়াতে সরকারকে বিশেষ সহায়তা দেয়ার সুপারিশ করেছে ইপিবি।

আমারসংবাদ/জেআই