Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

নবী পরিবারের বিশেষ মর্যাদা

মুহাম্মদ মুনিরুল হাছান

আগস্ট ১৮, ২০২১, ০৫:৫৫ পিএম


নবী পরিবারের বিশেষ মর্যাদা
  • ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক সম্পর্ক ও বংশমর্যাদা কিয়ামতের দিন বিচ্ছিন্ন থাকবে, শুধু আমার সম্পর্ক ও পরিবার ছাড়া।’ (মুজামুল কবির লিত-তাবারানি, হাদিস : ২৬৩৪)

‘আহলে বাইত’ পবিত্র কোরআনের পরিভাষা। ‘আহলে বাইত’ হলেন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর বংশধর ও আত্মীয়-স্বজন। ‘আহলে বাইত’ পারিভাষাটি পবিত্র কোরআনে দুবার এসেছে। এক. ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা বলল (ফেরেশতারা) তুমি কি আল্লাহর কোনো কাজে বিস্ময়বোধ করছ, তোমাদের ওপর সর্বদা আল্লাহর রহমত ও তাঁর অনুগ্রহ রয়েছে হে আহলে বাইত। অবশ্যই তিনি মহা প্রশংসিত ও মহামর্যাদাবান।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৭৩)

এ আয়াতে আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর স্ত্রীকে আহলে বাইত বলেছেন। অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবী-পরিবার, আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের থেকে নাপাকি দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পূতঃপবিত্র করতে।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩৩)

নবীজি (সা.)-এর আহলে বাইত দ্বারা কারা উদ্দেশ্য তা নিয়ে আলেমদের মতভিন্নতা রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হলো, যাদের জন্য সাদকা গ্রহণ করা হারাম বা নিষেধ। দ্বিতীয় মত হলো, রাসুল (সা.)-এর সন্তান-সন্তুতি ও পবিত্র স্ত্রীরা। তৃতীয় মত হলো, কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর উম্মত ও অনুসারীরা। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রাসুলে কারিম (সা.) একদিন এমন অবস্থায় প্রত্যুষে বের হলেন যে তাঁর শরীর মোবারক নকশাবিশিষ্ট চাদর দ্বারা আবৃত ছিল। তখন হাসান (রা.) এলে নবীজি তাঁকে নিজের চাদরের মধ্যে শামিল করে নিলেন। এরপর হুসাইন (রা.) এলে তাঁকেও নবীজি (সা.) চাদর মোবারকের জড়িয়ে নিলেন। অতঃপর ফাতেমা (রা.) এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে চাদরের মধ্যে শামিল করে নিলেন। সব শেষে আলী (রা.) এলে তাঁকে চাদরের ভেতরে প্রবেশ করিয়ে নিলেন। অতঃপর কোরআনে কারিমের সুরা আহজাবের ৩৩ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৪২৪)

সুনানে তিরমিজির অপর বর্ণনায় রয়েছে, নবীজি (সা.) ওই আয়াতটি তিলাওয়াত করে বলেন, ‘হে আল্লাহ, এরাই আমার পরিবারভুক্ত। আপনি এদের থেকে অপবিত্রতা দূর করুন এবং এদের পরিপূর্ণভাবে পবিত্র করে দিন। এ কথা বলার পর উম্মুল মুমিনিন উম্মে সালমা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমিও তাদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই। তখন নবীজি (সা.) বললেন, তুমি তোমার মর্যাদায় রয়েছ। কেননা তুমি তো কল্যাণের ওপরেই রয়েছ।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩২০৫)

আহলে বাইতের পরিচয় রাসুল (সা.) নিজেই দিয়েছেন। সুরা আহজাবের ৩৩ নং আয়াত নাজিলের পর নবীজি (সা.) লাগাতার ৩০ দিন ফজরের নামাজের পর আলী (রা.)-এর বাড়ির দরজায় গিয়ে উচ্চ স্বরে বলতেন, ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া আহলাল বাইত’ অর্থাৎ তোমাদের প্রতি সালাম হে আমার পরিবার। (তাফসিরে দুররে মানসুর : ৫/১৯৮)

আহলে বাইতের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে অসংখ্য বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুল (সা.) মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী অবস্থানে গাদিরে খামের কাছে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং লোকদের উপদেশ দিয়ে বলেন, ‘হে লোকরা, আমি মানুষ, অচিরেই আমার কাছে আমার প্রভুর দূত (মৃত্যুর ফেরেশতা) আগমন করবেন। আমি সাড়া দেব। আমি তোমাদের কাছে দুটি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি। প্রথমটি হলো কিতাবুল্লাহ, যাতে রয়েছে হিদায়াত ও আলোর দিশা। তোমরা কিতাবুল্লাহকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তার ওপরে আমল করো। অতঃপর তিনি কিতাবুল্লাহ তথা কোরআনের প্রতি মানুষদের উৎসাহিত করেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমার আহলে বাইত। আমি তোমাদের আমার আহলে বাইত সম্পর্কে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। এ কথা তিনি তিনবার বলেছেন।’ (সহিহ মুসলিম, আয়াত : ২৪০৭)

জাবের (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বিদায় হজে আরাফার দিন তার উটনি কাসওয়ার ওপর বসে ভাষণ দিতে দেখলাম। তাকে বলতে শুনেছি, ‘হে লোকসকল, আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু বিষয় রেখে যাচ্ছি, যদি তোমরা তা শক্ত করে আঁকড়ে ধরো তবে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো কিতাবুল্লাহ, অপরটি হলো আমার পরিবার তথা আহলে বাইত।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৭৮৬)।

দরুদ পাঠ করা ঈমানদারদের জন্য অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি আমল। মুমিনরা যখন দরুদ পাঠ করে তখন নবীজি (সা.)-এর সঙ্গে আহলে বাইত বা নবীজি পরিবারের ওপরও দরুদ পাঠ করে থাকেন। ইমাম শাফেয়ি ও ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.)-এর মতে নবীজি (সা.)-এর ওপর দরুদ পাঠের সময় তাঁর পরিবারের ওপর দরুদ পাঠ করা ওয়াজিব। হানাফি মাজহাবের ইমামদের মতে সুন্নত। (আল মাওসুয়া আল ফিকহিয়্যাহ : ১/১০৬)

ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, প্রত্যেক সম্পর্ক ও বংশমর্যাদা কিয়ামতের দিন বিচ্ছিন্ন থাকবে, শুধু আমার সম্পর্ক ও পরিবার ছাড়া।’ (মুজামুল কবির লিত-তাবারানি, হাদিস : ২৬৩৪)

লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল, চট্টগ্রাম

আমারসংবাদ/জেআই