Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

দুই দেশে আইনি লড়াই

আগস্ট ২৩, ২০২১, ০৬:৩০ পিএম


দুই দেশে আইনি লড়াই
  • ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ঠাঁই হলো জাপানি দুই শিশুর
  • আদেশ প্রতিপালন করতেই দুই শিশুকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে —সিআইডি
  • শিশুদের সবার সামনে হাজির করতে চান না আইনজীবী

মা-বাবার কাছে না, আপাতত পুলিশের তত্ত্বাবধানেই থাকছে ওই দুই শিশু। জাপানি নারী এরিকো ও বাংলাদেশি আমেরিকান শরীফ ইমরান। ২০০৭ সালে জাপানের টোকিওতে প্রথম দেখা দুজনের। পরিচয় থেকে প্রণয়। দীর্ঘদিন দুজনের মাঝে চলে প্রেমের সম্পর্ক। পরে একসাথে ঘর বাধার স্বপ্ন নিয়ে এক বছর পর ২০০৮ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন দুজন। বৈবাহিক জীবনে নানা টানাপড়েনের মাঝেই তিন কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তারা। তবে তাদের সংসার টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি ইমরান স্ত্রী এরিকোর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। সেই সাথে ২১ জানুয়ারি মেয়ে জেসমিন মালিলাকে নিয়ে যেতে স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে। বিপত্তি ঘটে এখানেই। পরে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিজের জিম্মায় নিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে শিশুদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যন করেন। মেয়েদের জিম্মা পেতে টোকিও আদালত ও বাংলাদেশের আদালতে শুরু হয় দুজনের আইনি লড়াই। টোকিওর পারিবারিক আদালতে এরিকোর পক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিলেও  ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে দুই মেয়েকে নিয়ে দেশে চলে আসেন। এরিকোও কম যান না, তিনি বাংলাদেশে এসে দুই কন্যাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে হেবিয়ার্স রিট করেন। পরে গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট দুই শিশু ও বাবা শরীফ ইমরানকে এক মাসের জন্য দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন। একই সাথে দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর মধ্যেই  গত ২২ আগস্ট রাতে দুই শিশুকে হেফাজতে নেয় সিআইডি। বিষয়টি পুনরায় গতকাল সোমবার আদালতের নজরে এনে আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ আদালতে বলেন, ‘মাই লর্ড আপনারা রুল ইস্যু করেছিলেন। আদেশে আপনারা আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে শিশু দু’টিকে হাজির করতে বলেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় সিআইডি বাসায় চলে যায়। সেখান থেকে বাচ্চা দু’টিকে সিআইডি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে বাচ্চাদের জেরা করা হয়েছে। এভাবে চালানোর পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটা সম্পূরক আবেদন নিয়ে আসতে চাচ্ছি, সেটা যদি দুপুর ২টায় শোনেন, তখন আদালত আবেদনের অনুমতি দেন। এ সময় আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘মাই লর্ড আপনাদের দু’টি আদেশ ছিলো, তার মধ্যে একটি হলো বাচ্চা দু’টিকে হাজির করা। আর একটি হলো বাচ্চা দু’টিকে নিয়ে কেউ যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে। আমাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে ফোন দিয়ে বলা হলো— বাচ্চার মাকে সিআইডি অফিসে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ বাচ্চাদের তারা সেখানে রেখেছেন। জোর করে নিয়ে এসেছেন, তারা কিন্তু সেটা বলেননি। পরে আমিও সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩০ মিনিট বাচ্চাদের সঙ্গে তাদের মায়ের কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়। আমি তখন সিআইডিকে বলেছি, তারিখ তো আরও পরে, এখনই বাচ্চাদের নিয়ে এসেছেন কেন? তখন তারা (সিআইডি) বলল, হাইকোর্টের আরেকটি আদেশ আছে দেশত্যাগের বিষয়ে। সেই আদেশটা যেনো শেষ পর্যন্ত প্রতিপালন করতে পারি, সে কারণেই এ পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি বললাম, তাড়াতাড়ি এটা হাইকোর্টকে জানাতে হবে।’ এ সময় শিশির মনির বলেন, ‘এটি স্পর্শকাতর বিষয়। বাচ্চাদের যেনো সবার সামনে উপস্থিত না করা হয়।’ ফাওজিয়া করিম আদালতকে বলেন, ‘আপনারা বাচ্চাদের কথা শোনেন। আপনারা যে আদেশ দেবেন তা আমরা মেনে নেবো। তবে সাপোর্ট সেন্টারে শিশুদের নিয়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। তিনি আবারো বলেন, নিম্ন আদালতের পরিবর্তে শিশুদের হাইকোর্টে নিয়ে আসুক। আদালত উভয়পক্ষের আবদেন শুনে জাপানি দুই শিশুকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে উন্নত পরিবেশে রাখার নির্দেশ দেন। এই সময়ের মধ্যে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত জাপানি মা এবং বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশি বাবা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন।

গতকাল সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তবে আদালত উভয়পক্ষের আইনজীবীদের ৩১ আগস্টের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করতে ভূমিকা রাখতে বলেছেন। আদালতে শিশুদের বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। শিশুদের মায়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।

আমারসংবাদ/জেআই