Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

মাহমুদুল হাসান

আগস্ট ২৪, ২০২১, ০৭:২০ পিএম


বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ
  • ২০১৯ সালের চেয়ে এবার মশার ঘনত্ব বেশি
  • হাসপাতালে ভর্তি রোগীর অধিকাংশই রাজধানীর
  • জুলাই-আগস্টে ডেঙ্গুতে ৩৮ জনের মৃত্যু
  • দ্রুত রোগী বাড়ায় ডেডিকেটেড ছয় হাসপাতাল
  • গতকাল আরও ২৫৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত

করোনা সংক্রমণের মধ্যেই বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গু। গেলো দুই মাসে সরকারি হিসাবে ৮ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। প্রতিদিন প্রায় ৩০০’র বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাদের অধিকাংশই রাজধানীর বাসিন্দা। এদিকে ঢাকা উত্তরের চেয়ে দক্ষিণ সিটিতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। এ বছর এডিস মশার ঘনত্ব ২০১৯ সালের ডেঙ্গু মহামারির চেয়েও বেশি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাজধানীর সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, আমিনবাজার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল (মিরপুর) ও কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালকে ডেঙ্গুর জন্য ডেডিকেটেড করেছে। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুই সিটি কর্পোরেশনকে দুষছে। তারা বলছে, গত মার্চে তাদের ডেঙ্গুর উৎস ধ্বংসের পদক্ষেপ নিতে বলা হলেও তারা সেটি করতে পারেনি। ফলে প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু মহামারি হিসেবে ছড়িয়েছিলো। সরকারি হিসেবে সে বছর লক্ষাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার মধ্যে ১৭৫ জনের মৃত্যু হয়। তবে বেসরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও কয়েকগুণ বেশি বলে তখন জানানো হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড মহামারির মধ্যে করোনা ও ডেঙ্গু নিয়ে যেসব রোগী হাসপাতালে আসছেন, তাদের অনেকেরই স্বাস্থ্য জটিলতা বেশি। আগামী দিনে এ ধরনের রোগী বাড়লে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে; তবে ২০১৯ সালের মতো মহামারি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, গতকাল নতুন করে আরও ২৫৮ ডেঙ্গু রোগী রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে তাদের অধিকাংশই রাজধানীর বাসিন্দা। এর মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ২১২ এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪৬ জন। বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৮ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৭ জনে। ঢাকার ৪১টি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯৮৮ এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮৯ জন। চলতি মাসের গত ২৪ দিনে ৫ হাজার ৯১৭ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ২৬ জনের। গত মাসে ২ হাজার ২৮৬ জন ভর্তি হলেও মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত হাসপাতালে সর্বমোট রোগী ভর্তি হয়েছেন ৮ হাজার ৫৭৫ জন। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৭ হাজার ৪৫৮ জন। ডেঙ্গুতে এ সময়ে মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ১৭৯ জনের মৃত্যু ও লক্ষাধিক আক্রান্ত হওয়ার পর গত বছর সতর্ক অবস্থানে ছিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। তারপরও ২০২০ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিল এক হাজার ৪০৫ জন, যাদের মধ্যে ৬ জন মারা যান। গত বছর সংক্রমণের মাত্রা কম থাকলেও এ বছর পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রতি করা এক জরিপে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণের পাঁচটি করে ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ঢাকা উত্তরের ৫ ওয়ার্ড হলো : মগবাজার (নিউ ইস্কাটনে মশার ঘনত্ব শতকরা ৫৬.৭ ভাগ), বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা (নিকুঞ্জে ৪৮.৪ ভাগ), কল্যাণপুর (দারুস সালামে ৪৬.৭ ভাগ), মিরপুর-১০ (কাজীপাড়ায় ৪৩.৩ ভাগ), মহাখালী ও নিকেতন (৪০ ভাগ)। ঢাকা দক্ষিণের ৫ ওয়ার্ড হলো : বাসাবো (গোড়ান ৭৩.৩ ভাগ), এলিফ্যান্ট রোড (সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা ৬৬.৭ ভাগ), আর কে মিশন রোড (টিকাটুলীতে ৫০ ভাগ), বনশ্রী (৪০ ভাগ), মিন্টো রোডে (বেইলি রোডে ৪০ ভাগ) এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, আমিন বাজার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল (মিরপুর) ও কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালকে ডেঙ্গুর জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে।

জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান বলেন, আমরা সিটি কর্পোরেশনকে এরই মধ্যে বার্তা দিয়েছি। এমনকি কোন কোন এলাকায় এডিস মশার ঘনত্ব বেশি, সেটাও উল্লেখ করে দেখিয়ে দিয়েছি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ডেঙ্গু নিধনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত মার্চে সিটি কর্পোরেশনগুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাতে মশার উৎপত্তিস্থলগুলো ধ্বংস করে দিতে বলা হয়েছিল। তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি। ডেঙ্গু হলে নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগ সেবা দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। তবে ডেঙ্গু যেন না হয়, সে জন্য সিটি কর্পোরেশনকে কাজ করতে হবে।

আমারসংবাদ/জেআই