Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছেই

মাহমুদুল হাসান

আগস্ট ২৭, ২০২১, ০৭:১৫ পিএম


দেশজুড়ে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছেই
  • প্রায় দুই দশক ধরে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ
  • ২৭ দিনে ২৮ জনের মৃত্যু
  • ১০ বছরের নিচে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত
  • আক্রান্ত ও মৃত্যুর বেশির ভাগই রাজধানীর

কোভিড-১৯ সংক্রমণ ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। অন্যদিকে বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিন আড়াইশ থেকে তিনশ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চলতি মাসে মৃত্যুও বেড়েছে। সরকারি তথ্যমতে, দুই মাসে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে ২৮ জন গত ২৭ দিনে মারা গেছেন। ১২ জন গত জুলাইয়ে মারা গেছেন। দুই দশকের বেশি সময় ধরে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চলছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০০০ সাল থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর বছরভিত্তিক তথ্য রাখছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০০ সালে ডেঙ্গুতে মারা  গেছেন ৯৩ জন। এর পরের দুবছর যথাক্রমে ৪৪ ও ৫৮ জন মারা যান। ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত টানা চার বছর ডেঙ্গুতে কোনো প্রাণহানি হয়নি। ২০১৯ সালে ডেঙ্গজ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এর আগের সব বছরের রেকর্ড ছাড়ায়।

বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়। তবে সরকারি হিসাবে এ সংখ্যা ১৭৯। করোনার মধ্যে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় রাজধানীতে নয়া আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ৫টি ওয়ার্ডে অতীতের চেয়ে বেশি এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে। প্রতিনিয়ত আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সমান্তরালভাবে বাড়ছে। এ বছর ডেঙ্গুতে শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ঢাকা শিশু হাসপাতাল ডেঙ্গু ও সাধারণ রোগীতে ঠাসা। কোথাও তিল ধারণের যায়গা নেই।

তথ্য বলছে, হাসপাতালে ভর্তি শিশুদের ৫০ শতাংশের বেশি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার। ঢাকা শিশু হাসপাতালের তথ্য বলছে, ডেঙ্গু ও সাধারণ রোগীর ভিড়ে হাসপাতালটির ৬৭৪ বেডই পূর্ণ। অনেকে বেড না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন অন্য হাসপাতালে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা জানিয়েছেন, শুধু রোগীর চিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়। এজন্য প্রথমে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনকে দুষছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তারা বলছে, গত মার্চে এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংসের জন্য দুই সিটি কর্পোরেশনকে জানানো হলেও কাজটি তারা করেনি। ফলে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। তবে ২০১৯ সালের মতো মহামারি হিসেবে ছড়াবে না বলেও জানিয়েছে তারা। সে সাথে ডেঙ্গু মোকাবিলায় ৫ হাসপাতালকে ডেডিকেটেড করা হয়েছে বলেও প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে চলতি মাসে ২৮ জন ছাড়া গত জুলাইয়ে মারা গেছেন ১২ জন। গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৮৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন ১৬৯ জন আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ১৫ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট এক হাজার ৩২ ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন জানিয়ে বলা হয়, তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের সরকারি ও বেসরকারি ৪১ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯০৫ জন আর অন্যান্য বিভাগে ভর্তি আছেন ১২৭ জন। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আর এ মাসে এখন পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছেন ছয় হাজার ৬৪৬ জন। চলতি বছরে মোট ৯ হাজার ৩০৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে আট হাজার ২৩০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রতি করা এক জরিপে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের পাঁচটি করে ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়ার কথা বলা হয়েছে। ঢাকা উত্তরের ৫টি ওয়ার্ড হলো : মগবাজার (নিউ ইস্কাটনে মশার ঘনত্ব শতকরা ৫৬.৭ ভাগ), বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা (নিকুঞ্জে ৪৮.৪ ভাগ), কল্যাণপুর (দারুস সালামে ৪৬.৭ ভাগ), মিরপুর-১০ (কাজীপাড়ায় ৪৩.৩ ভাগ), মহাখালী ও নিকেতনে (৪০ ভাগ)। ঢাকা দক্ষিণের ৫টি ওয়ার্ড হলো : বাসাবো (গোড়ান ৭৩.৩ ভাগ), এলিফ্যান্ট রোড (সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা ৬৬.৭ ভাগ), আর কে মিশন রোড (টিকাটুলীতে ৫০ ভাগ), বনশ্রী (৪০ ভাগ), মিন্টো রোড (বেইলি রোডে ৪০ ভাগ) এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ডেঙ্গু নিধনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে গত মার্চে সিটি কর্পোরেশনগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাতে মশার উৎপত্তিস্থলগুলো ধ্বংস করে দিতে বলা হয়েছিল। তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি। ডেঙ্গু হলে নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য বিভাগ সেবা দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। তবে ডেঙ্গু যেন না হয়, সে জন্য সিটি কর্পোরেশনকে কাজ করতে হবে।

আমারসংবাদ/জেআই