Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং আজকের বাংলাদেশ

রায়হান আহমেদ তপাদার

আগস্ট ২৮, ২০২১, ০৬:৩০ পিএম


শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং আজকের বাংলাদেশ

করোনার বৈশ্বিক মহামারির কারণে সারা বিশ্ব আজ লণ্ডভণ্ড এবং অর্থনৈতিকভাবে পর্যুদস্ত। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিলে দেখা যায়, ১০ বছর আগের বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশের মধ্যে বিরাট ব্যবধান। সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটেছে। ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে সর্বস্তরের মানুষের। দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে হয়েছে প্রভূত উন্নয়ন। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে যে উন্নয়নের ধারা সূচিত হয়েছে এ দেশে, নতুন মেয়াদে সেই ধারা হয়েছে আরও বেগবান। বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশ পরিচিত হয়েছে উন্নয়নের এক বিস্ময় হিসেবে। মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ সবার মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ আজ বিশ্বের রোল মডেল। বাংলাদেশের আজকের এ উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন স্বয়ং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর পাকিস্তানের ২৪ বছরের শোষণ আর মুক্তিযুদ্ধকালীন তাদের পোড়া মাটি নীতির ফলে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোর ওপর দাঁড়িয়ে জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তিনি বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে উঠে এসেছিল তার জীবদ্দশাতেই। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের অগ্রগতি থেমে যায়। ৭৫-পরবর্তী সরকারগুলোর জনবিচ্ছিন্নতা, লুটপাট ও দর্শনবিহীন রাষ্ট্র পরিচালনা বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ পরিচিতি পেয়েছিল ঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর ভিক্ষুক-দরিদ্র-হাড্ডিসার মানুষের দেশ হিসেবে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও উন্নয়নবান্ধব শাসননীতির ফলে সেই বাংলাদেশই আজ ‘মোস্ট ইমার্জিং ইকোনমি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব ও সুদক্ষ পরিচালনায় বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে অবস্থান করছে।

শুধু তা-ই নয়, মানুষের সব ধরনের মৌলিক চাহিদাগুলো আজ পূরণের পথে। তাছাড়াও জাতীয় উৎপাদন, মাথাপিছু আয়, খাদ্য উৎপাদন, কৃষি উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবকাঠামো তৈরি— প্রতিটি ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য উন্নতি লাভ করেছে। এক হিসেবে দেখা যায়, করোনার বৈশ্বিক থাবায় ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাথমিক হিসেবে বাংলাদেশের এক হাজার ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়েছে। আমরা দেখতে পাই, এই মহামারির মধ্যেও জননেত্রী শেখ হাসিনার যুগোপযোগী অর্থনৈতিক কলাকৌশল ও দক্ষ হাতের ছোঁয়ায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি স্তব্ধ না হয়ে সামনের দিকেই অগ্রসরমান। ২০২০ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪১তম অর্থনীতির দেশ। বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত বিকাশমান পাঁচ দেশের একটি বাংলাদেশ। ২০৩৫ সালে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম অর্থনীতির দেশ। একটা সময় ছিলো আমাদের এই বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম স্বল্পোন্নত, দরিদ্র ও পরনির্ভরশীল দেশ। অন্যের সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া মোটেই চলতে পারতো না। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, জাতীয় বাজেট, বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের জন্য প্যারিসের কনসোর্টিয়াম বৈঠকের সাহায্য আর প্রতিশ্রুতির দিকে চেয়ে থাকতে হতো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জারের মতে, বাংলাদেশ ছিলো একটি তলাবিহীন ঝুড়ি। অনেকের ধারণা ছিলো, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ হয়তো আর কোনোদিন নিজের পায়ে ভর করে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। আস্তে আস্তে একদিন অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের আজ সেই দুর্বিষহ অবস্থা নেই।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দৃশ্যপট আজ পালটে গেছে। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে একটি দ্রুত বিকাশমান ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। হাঁটি হাঁটি পা পা করে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের ক্ষেত্রে অনেক পথ এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা আজ আগের মতো তাদের সাহায্য ও প্রতিশ্রুতির ফর্দ নিয়ে প্যারিস কনসোর্টিয়াম বৈঠকে যায় না। বরং দাতা দেশগুলো আজ বাংলাদেশের উন্নয়নের কলাকৌশল ও তা প্রয়োগের কাহিনি শোনার জন্য এ দেশে ছুটে আসছে। বাংলাদেশ আজ তার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ও জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নের জন্য ৭০ শতাংশ অর্থই অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে সংগ্রহ করতে পারছে। আজ কোনো ধরনের বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াই বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থেই তৈরি করতে পারে। বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর রাজনৈতিক নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সাল থেকে বিরতিহীন তার জাদুকরী হাতে বাংলাদেশের উন্নয়নের হাল ধরে আছেন। অতীতের সব বাধাবিঘ্ন ও প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে তার সফল ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ দুর্বার গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনার দূরদর্শী যুগান্তকারী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিভিন্ন সূচকে ভারত ও পাকিস্তানকেও ছাড়িয়ে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম তেজি ঘোড়া হিসেবে টগবগ করে বিরামহীন তার গন্তব্যে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণে নিয়োজিত জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কাউন্সিলের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালের ১৭ জুন ১৮৩ সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে সংস্থাটির ৪২তম মিটিংয়ে ২০২২-২৪ সালের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সদস্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ।

তাছাড়াও বাংলাদেশ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের (ইকোসক) ৩টি অঙ্গ সংস্থা সিএনডি, ইউনিসেফ ও ইউএন উইমেনেরও সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। এ তিনটি সংস্থাতেই বাংলাদেশ ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করবে। সুতরাং আমরা দেখতে পাই, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বহির্বিশ্বে বিভিন্ন মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত রয়েছে। আমরা আশা করি তার দূরদর্শী নেতৃত্ব ও সফল আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতার ফলে বাংলাদেশ আগামীতে আরও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য হলো ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়া। বিশ্বের কোনো কোনো দেশ আজ বাংলাদেশের উন্নয়নের কৌশল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। হয়তো আগামীতে তারা শেখ হাসিনার উন্নয়ন কৌশলকে তাদের দেশেও প্রয়োগ করতে পারে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও কূটনীতির ক্ষেত্রেও তিনি বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার প্রমাণ আমরা পেয়েছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও আমাদের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন অনুষ্ঠানে। তার আন্তর্জাতিক সুখ্যাতি ও সফল কূটনৈতিক তৎপরতার ফলেই করোনা মহামারির মধ্যেও অনেক রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ওই অনুষ্ঠানগুলোয় উপস্থিত হয়েছেন এবং অনেকেই ভিডিও বার্তা পাঠিয়ে বাংলাদেশ ও এ দেশের মানুষকে সম্মানিত করেছেন। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় সফলভাবে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তিন শীর্ষ অনুপ্রেরণাদারী নেতাদের মধ্যে অন্যতম একজন নির্বাচিত হয়েছেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থায় নেতৃত্ব দিচ্ছে। ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিলের (ইকোসক) ৮টি অঙ্গ সংস্থার নির্বাচনে ৫৪ ভোটের মধ্যে ৫৩ ভোট পেয়ে বাংলাদেশ ওই সংস্থার ইউএনডিপি, ইউএনএফপিএ ও ইউএনওপিএসের নির্বাহী বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। বাংলাদেশ এই বোর্ডে ২০২১-২৩ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবে। চলতি বছরের ১৭-১৯ মে অনুষ্ঠিত এক ভার্চুয়াল বৈঠকে বাংলাদেশ আইওসি রিজিওনাল কমিটি ফর দ্য সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ান ওশানের (আইওসিইন্ডিও) চেয়ারপারসন নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ১৯ সদস্যবিশিষ্ট এ সংস্থার মে ২০২১ থেকে মে ২০২৩ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবে। উন্নয়নশীল ৮ মুসলিমপ্রধান দেশের সমন্বয়ে গঠিত ডি-৮-এর বর্তমান সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। আগামী দুই বছর তিনি এ পদে বহাল থাকবেন। তাছাড়া আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সম্মেলনে সহসভাপতির দায়িত্বও পালন করবে বাংলাদেশ। আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী পিপিপি’র ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থান ৩০তম। প্রাইসওয়াটারহাউসকুপারস-এর প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে ২৩তম স্থান দখল করবে। এইচবিএসসির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, ২০২০-এ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ভারতসহ এশিয়ার দেশগুলো থেকে এগিয়ে থাকবে। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে। পাবনার রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলেছে। এছাড়াও ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমানার বিরোধ মীমাংসার ফলে বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশির ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমাদের। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন অর্জনের জন্য ‘বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ নামে শতবর্ষের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো সম্পৃক্ত করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে। একসময় প্রবল ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের চাপে পিষ্ট হতে থাকা বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ মজবুত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫ দেশের একটি এখন বাংলাদেশ। তবে এখানেই থেমে থাকলে হবে না; এ উন্নয়নের অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রাখতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা খুবই জরুরি। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা আজ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও প্রশংসিত। সামগ্রিক বিচারে এ কথা নিঃসংকোচে বলা যায়— বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে দোর্দণ্ড প্রতাপে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে।

লেখক : গবেষক ও কলামিস্ট

আমারসংবাদ/জেআই