Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা

রফিকুল ইসলাম

সেপ্টেম্বর ২, ২০২১, ০৭:২৫ পিএম


মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা

গত ২৪ আগস্ট ছিলো নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস। ধর্ষিতা ইয়াসমিনকে ঘিরে দিবসটির উৎপত্তি। ১৯৯৫ সালের ২৪ আগস্ট কতিপয় পুলিশ সদস্যের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলে মামলায় ফাঁসির রায় হয় ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট এবং কার্যকর হয় ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে। সেই থেকে দিবসটি পালন হয়ে আসছে। কিন্তু থামছে কি? বরং ধর্ষকরা ফ্রাঙ্কেনস্টাইন রূপ নেয়ায় এমন একটি দিনও পাওয়া যাবে না, যা ইয়াসমিন ট্রাজেডির পুনরাবৃত্তি না ঘটছে। ‘হে ধরণী, দ্বিধা হও, আমি তন্মধ্যে প্রবেশ করি!’ এটি রামায়ণের বিখ্যাত উক্তি। এর পশ্চাৎপট একজন নারীর জন্য কতই না যাতনার। রাবণের কাছ থেকে প্রিয়তমা পত্নীকে উদ্ধার করে আনার পর সীতার সাথে সুখের সংসার করে রাম। কিন্তু সেই সুখ স্থায়ী হলো না। কেননা, অযোধ্যায় সীতাকে নিয়ে নানান কুৎসা রটতে শুরু করে। ক্ষিপ্ত প্রজাদের দাবি, যেহেতু সীতা রাবণের হাতে বন্দি ছিলো দীর্ঘদিন; তাই সীতাকে তার সতিত্বের পরীক্ষা দিতে হবে। রামও এখানে সীতাকে কোনো সহায়তা না করে বরং বিনাবাক্যে প্রজাদের দাবিই মেনে নিলেন। তাতে অপমানে ও লজ্জায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় সীতা মাটিকে বলেন তাকে ফিরিয়ে নিতে। পৃথিবী দু’ভাগ হয়ে সীতাকে ফিরিয়ে নিলো। সেই থেকে ‘হে ধরণী, দ্বিধা হও!’ বাংলায় অপমানসংক্রান্ত ও লজ্জার প্রতিশব্দে পরিণত হয়েছে।

সম্প্রতি যৌন নির্যাতনের শিকার এক তরুণী গণমাধ্যমকে তার অসহায়ত্ব ও নিরুপায়ের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের কবিতার উদ্ধৃতি আওড়ে ‘কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে / কভু আশিবিষে দংশেনি যারে।’ ওই যৌন অত্যাচারিতা জানান, ‘এতকাল জেনে আসছি পুরুষের কতই না মধুর পরিচয় রয়েছে— বাবা, ভাই, চাচা, মামা, ফুপা, খালু, বন্ধু, প্রেমিক বা স্বামী। কিন্তু সেই পুরুষ মানুষই কি-না কখনো কখনো হয়ে উঠছে ধর্ষক! যা খুনের চাইতেও নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য অপরাধ। কাউকে খুন করা মানে মানুষটি আর থাকলো না। কিন্তু যাকে ধর্ষণ করা হয় সে কেবল শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও ধর্ষণের অপূরণীয় ক্ষতি জীবনভর বয়ে বেড়ায়।’ ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী দুঃখ, অপমান, লজ্জা, মনোকষ্ট ও অবহেলা থেকে রক্ষা পেতে মাটিকে বারবার মিনতি করছেন দু’ভাগ হয়ে তাকে ফিরিয়ে নিতে। ধর্ষিতার বিস্ময়েরও শেষ নেই, ধর্ষক পুরুষটি মানুষ কি না! আক্ষেপ করে বলেন, সে পুরুষ হয়ে থাকতে পারেনি— ধর্ষক হয়েছে! এ নিয়ে পত্রিকায় ‘ও-কি মানুষ! বিচারের বাণী যৌন নিপীড়িতার’ এবং ‘হাওরে হবু বর যখন ধর্ষক : পিবিআইয়ের ফের তদন্ত’ শীর্ষক দুটি সংবাদ প্রকাশ করায় কিশোরগঞ্জ জজ কোর্টে ১নং ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত ৭৬/২০২১ মোকদ্দমার একমাত্র অভিযুক্ত ধর্ষক মুঠোফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠায়— ‘সাহস থাকলে ফোনটা রিসিভ করো শালা রাজাকারের বাচ্চা।’

মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকা সত্ত্বেও দেশে যৌন ও নারী সহিংসতা থামছে না। প্রত্যেকটা পেশায় এখন নৈতিকতা-মূল্যবোধের যেনো ধস নেমেছে। বিবেকও যেনো উধাও মনুষ্য মনন থেকে! মাসল, ম্যান, মানি— এই তিন ‘ম’য়ের চাপে ক্ষত-বিক্ষত নারী। অথচ তা হওয়ার কথা ছিলো না। একটি সুন্দর জীবনযাপনে এক ‘ম’-এর অভাব হলেই জীবনের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু আজ আমাদের নারীরা এই তিন ‘ম’-এর পৈশাচিকতাতে পিষ্ট। নারী মানে সদ্য জন্ম নেয়া পুঙলিঙ্গের বিপরীত স্ত্রী লিঙ্গের অধিকারী কন্যাশিশু থেকে সাত সন্তানের জননী, কেউ বাদ পড়ছে না এ অনিয়ন্ত্রিত যৌন নির্যাতন থেকে। এটি বিহ্যাভিয়ার ডিজিজ বা আচরণবাহিত রোগ। আদর্শবিচ্যুতি। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, নৈতিক অবক্ষয়ই সামাজিক ব্যাধি। প্রমথ চৌধুরীও বই পড়া প্রবন্ধে বলেছেন— ‘ব্যাধিই সংক্রমণ, স্বাস্থ্য নয়’। এসবের প্রতিরোধের ক্ষেত্রে মোক্ষম প্রতিবিধান হতে পারে যৌন শিক্ষায় নৈতিকতা শিক্ষা-শিখন বিষয়ক বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ভিডিও বক্তব্য শিরোনাম— ‘শিশুকে গুড টাচ এবং ব্যাড টাচ শেখান’। সেই সাথে সন্তানকে পঙ্কিলতা থেকে সুরক্ষিত রাখতে যে লেসনও অত্যাবশ্যকীয়, তা হলো— হেলথ এডুকেশন এবং সেক্স এডুকেশন’।

এ ব্যাপারে যৌন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যৌন ধারণার অভাবে অনেক শিশু ও কিশোর-কিশোরীরাই জানে না সে পারিবারিক যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। তাছাড়া মা-বাবার যৌন অসাবধানতাও সন্তানদের দিকভ্রান্ত করছে। এ ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদের বক্তব্যও প্রণিধানযোগ্য। তার মতে, ‘অপরাধীরা তাদের ধর্মীয়, নৈতিক, পারিবারিক ও জীবনঘনিষ্ঠ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব রয়েছে।’ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদের বক্তব্যটি হতে পারে ‘ফাইনাল টাচ’। কোনো সমাজে যৌন ও নারী সহিংসতার উপস্থিতি নিঃসন্দেহে সেই সমাজের মানব উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত শুধু নয়, অন্যান্য আর্থ-সামাজিক সমস্যার চেয়েও অধিক গুরুতর সমস্যা। সে জন্যই মূল্যবোধ পরিপন্থি কোনো কার্যক্রম সমাজে গৃহীত হয় না। যে কারণে মানবজাতি মহাবিপর্যয়ে শ্রেষ্ঠত্বের অন্বেষণ করে। যৌন নিপীড়ন রোধে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। যৌনতা থাকবে কিন্তু হিংস্রতা ও অবাধ নয়। যৌন সহিংসতা বর্বরতার কুৎসিত রূপ। নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সংবেদনশীলতার সংকীর্ণতা যৌনতায় হিংস্ররূপ পেয়েছে। বিয়েবহির্ভূত যেকোনো যৌন-সংযোগ এবং সমকামিতাও অনৈতিক। নৈতিকতা যৌনতার রক্ষাকবচ।

ধর্ষণ হিংস্রতা এমনই একটা বিকৃত যৌনক্ষুধা ও নৈতিক বিপর্যয় যে— আদর্শ পরিবার, কল্যাণরাষ্ট্র, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রীতিমূলক সমাজব্যবস্থা, মন্দের ওপর কল্যাণ ও দুষ্টের ওপর শিষ্টের বিজয়চিহ্ন নিশ্চিত করতে জীবনাচরণে নৈতিক চরিত্রে বিকাশ সাধনে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ছাড়া শুধু আইন আর শাসন দিয়ে সম্পূর্ণ শোধরানো সম্ভব নয়। মানবজাতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান তিনটি— রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার। এর মধ্যে রাষ্ট্র এগিয়ে এসে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করলেও সংকটের স্থায়ী সমাধানে সমভাবে এগিয়ে আসতে হবে সমাজ ও পরিবারকেও, যা প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ ও পুলিশি বক্তব্যকেই প্রতিষ্ঠিত করে। যেকোনো সমস্যার সমাধানে কেবল বিচার নয়, কঠিন সাজা দেয়াও নয়; সমস্যাটি যাতে সমাজে উৎপত্তি না হয় তার পদক্ষেপ নেয়া অধিক জরুরি। এ ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা অগ্রগণ্য। চিরস্থায়ী এই সামাজিক সংগঠন থেকেই মানবজাতির বিকাশ লাভ হয়েছে। শিশুকে উপযুক্ত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রাথমিক কেন্দ্রবিন্দু হলো সুগঠিত পরিবার, যা সমাজ জীবনের ভিত্তিস্বরূপ।

প্রতিটি শিশু একটি জীবন্ত সত্তা। পারিবারিক পরিবেশে শিশুরা মৌলিক শিক্ষা লাভ করে থাকে। এ ক্ষেত্রে যৌনতা অতি স্পর্শকাতর বিষয়। ধর্মীয় মূল্যবোধ, শিষ্টাচার ও শালীনতাসহ নারীর মর্যাদা ও অধিকার চিত্ত জাগরুকের মোক্ষম ক্ষেত্র কিন্তু পরিবারই। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, জন্মের সময় বহু কোষবিশিষ্ট মাংসপিণ্ডে মস্তিষ্কে পরিচালিত অনেকটা বংশগত গুণাগুণ নিয়ে পৃথিবীতে আসে শিশু। পরবর্তীতে পরিবেশের প্রভাবে প্রভান্বিত হয়ে ভবিষ্যতের কর্মসূচি নির্বাচিত করে। চেতন, অবচেতন ও অচেতন মনে পরিবেশের স্থায়ী প্রভাব তার জীবনে রয়ে যায়। এ মূল পরিবেশকে কেন্দ্র করে পারিপার্শ্বিকতার পটভূতিতে যে শিশু তাল সামলাতে পারে না, সেই শিশু কালক্রমে পঙ্কিলতায় পা বাড়ায়। অপরাধে ঝুঁকে। এ ছাড়াও বিবাহিত নর-নারীর পরাসক্ততা পরিবারে বাচ্চাদের মনস্তাত্ত্বিকভাবে বিকারগ্রস্ত করে তুলে। সর্বোপরি মানুষ প্রকৃতিগতভাবে ষড়রিপুর দ্বারা আক্রান্ত। অর্থাৎ মানবচরিত্রের প্রবৃত্তি ছয়টি— কাম বা যৌনক্ষুধা, রাগ, লোভ, মোহ, মদ বা দম্ভ ও মাৎসর্য বা পরশ্রীকাতরতা। এ প্রবৃত্তিগুলো মানবের জ্ঞান ও বিবেককে বাধাগ্রস্ত করে বলে তা রিপু তথা শত্রু নামে পরিচিত। অন্যদিকে মানবদেহে ১৪টি ইন্দ্রিয় রয়েছে— চোখ, কান, নাক, জিহ্বা, ত্বক বা দেহকোষ, বাক বা কথা, হাত, পা, পায়ু বা মলদ্বার, উপস্থ বা জননেন্দ্রিয় মন, বুদ্ধি বা জ্ঞান, অহংকার, আত্মা বা চিত্ত। দেহের এই ১৪টি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও প্রাণশক্তি, যা দিয়ে বাহ্য বা বাইরের বিষয়ের জ্ঞান অনুভূতি উপলব্ধি হয়।

রিপুদমনই আত্মসংযম। এই প্রবৃত্তি ও ইন্দ্রিয়ের সুনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মানুষকে সভ্য ও উন্নতর জীবন দেয়। প্রকৃত শিক্ষা পশুকে মানুষ হিসেবে দাঁড় করায়। অন্যদিকে এসব প্রবৃত্তি ও ইন্দ্রিয় প্রভাবান্বিতের অপার দৈবযোগে মনুষ্যত্ববোধ লোপ পায়। দিকভ্রান্তিতে যৌনতার যথেচ্ছাচার ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মানুষকে পশুরও অধম করে দেয়। নিমজ্জিত করে অধঃপতনের অতল তলে। মানুষও কিন্তু প্রাণী। তবে মানবীয় গুণাবলি বিদ্যমান থাকায় মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। জন্তু ও মানুষের  মধ্যে স্বভাব ও প্রকৃতিগত পার্থক্য বিদ্যমান। জন্তুর সব স্বভাব মানুষের মধ্যেও বিরাজমান। যেমন— হিংসা, বিদ্বেষ, পাশবিকতা, হিংস্রতা, লোলুপতা ইত্যাদি। তবে প্রীতি, মমত্ব, সুস্বভাব, সচ্চরিত্র, বিবেক, মনুষ্যত্ব, মূল্যবোধ— এসব গুণাবলির জন্য মানুষ জন্তু থেকে পৃথক। মানুষের মধ্যে মানব সমাজের যে উত্তরণ আছে, জন্তুর মধ্যে তা নেই। সেই স্বভাব বৈশিষ্ট্য গড়ে ওঠে বংশগত, পরিবেশগত ও শিক্ষার ওপর। তবে মনোজগতের অধিবাস বন্যের মধ্যে হলে ব্যক্তি কেবল নয়, মানবসমাজও পায় বুনো রূপ। ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্ম অনুযায়ী আদি মানব আদম আ. ও হাওয়া আ.। সৃষ্টিগত মহিমায় নারী-পুরুষ সমাজদেহের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ইসলাম ধর্মমতে, স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা নারী-পুরুষকে একে অপরের পরিপূরক ও মুখাপেঙ্ক্ষী বানিয়েছেন। এই মুখাপেঙ্ক্ষিতা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মনস্তাত্ত্বিক ও যৌনতা— সব দিক দিয়েই। তারা একে অপরের প্রতি সদাচার করতে বাধ্য। সামাজিক অগ্রগতির প্রেক্ষাপটে সামাজিক, পারিবারিক ও অর্থনৈতিকসহ নানা ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা প্রধান হয়ে উঠেছে। ইসলাম নারীকে মা, স্ত্রী, বোন ও কন্যার পরিচয়ে সংরক্ষণ করে দিয়েছে। কিন্তু সমাজের পুরুষেরা বহুলাংশেই সেটি মেনে নিতে পারছে না। তাই সামাজিক জীবনের সুষ্ঠু-সুস্থতা ও উন্নতি একান্তভাবে নির্ভর করে নারী সম্পর্কে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। এই উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি গড়তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রাখতে পারে বলিষ্ঠ ভূমিকা।

মানুষের পরিচয় জানার পর এবং নারী ও পুরুষ সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধির পর সামষ্টিক জীবনের দাবি হলো, একে অপরের সাথে সমান তালে চলবে। সামাজিক জীবনের উন্নতি ও অগ্রগতি একান্তভাবে নির্ভর করে নারী-পুরুষের সুষ্ঠু সম্পর্কের ওপর। উভয়েই সমাজ, সভ্যতা ও সংস্কৃতির নির্মাতা। নারীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে সংসার গঠনে, সুস্থ জাতি ও সুষ্ঠু সমাজ বিনির্মাণে। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে আনাও জরুরি। প্রযুক্তির যুগে গেইম, কার্টুন, ইউটিউব ইত্যাদির অজুহাতে মোবাইলসহ নানা বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এখন বাচ্চাদের হাতে জায়গা করে নিয়েছে। তাই না চাইতেও অভিভাবকরা ছোটদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস যুক্ত হওয়াতে। ইন্টারনেট জগতটা ওয়েব ভিজিটর বাড়াতে চারিদিকে পাল্লা দিয়ে নোঙরামিতে পর্নোসাইটও বেড়ে চলায় এদিক-ওদিক ক্লিক করতেই অজান্তেই নানান অ্যাডাল্ট সাইট ওপেন হয়ে যাচ্ছে, যা খুবই বিব্রতকর ও ভয়ঙ্কর এবং বাচ্চাদের মানসিক ও মূল্যবোধ বিকাশের জন্য বিরাট বাধা।

নতুন ও আগামী প্রজন্ম সুস্থ মস্তিষ্কে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে শিশুকে ‘গুড টাচ ও ব্যাড টাচ’ শেখানোর পাশাপাশি সন্তানকে হেলথ এডুকেশন ও সেক্স এডুকেশন এবং বড়দের ক্ষেত্রে আত্মশুদ্ধি হতে পারে ভেরিমাচ। সেই সব অভিভাবককে ডিভাইসে অ্যাডাল্ট কনটেন্ট বন্ধ করার পদ্ধতিও জানতে হবে। ইউটিউবসহ মূল হ্যান্ডসেটেই প্যারেন্টাল কন্ট্রোল করা যায়। সনাতনি সমাজব্যবস্থা থেকে আধুনিক সমাজে উত্তরণ করলেও আধুনিকতার উপজাত হিসেবে আগত বেশ কিছু মূল্যবোধ দ্বারা তাড়িত হচ্ছি আমরা। আধুনিক ও উত্তর আধুনিক সমাজব্যবস্থার বিভিন্ন উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটে তথা ব্যাপক অর্থে আমাদের সমাজ হালে পার করছে একটি জটিল সময়। সৃষ্টিকর্তা নারীর প্রতি ব্যভিচার, ধর্ষণ, অপবাদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও আধুনিক সমাজব্যবস্থা এখনো নারীদের পাশে দাঁড়াতে পারেনি, যেখানে নারীরা অনেক ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত এবং নির্যাতিত। এই দুর্দিনে মানুষের ভরসা তো নৈতিক উৎকর্ষতা বৃদ্ধি। নিজের আত্মোপলব্ধি, তার আত্মবিশ্লেষণ। যেমনটি বললেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর— ‘মনুষ্যেত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন।’

পাদটীকা: বৈবাহিক জীবনেও যৌনতায় মা-বাবার অসাবধানতা বা অমনোযোগিতাও অবুঝ শিশুদের ভয়ঙ্কর বিপদগামিতায় ঠেলে দেয়। লেখাটি যখন উপসংহার টানছি, তখনি এক অজোপাড়াগাঁয়ে ছয় বছরের বালকশিশু তিন বছরের কন্যাশিশুর ওপর পাপাচরণের সংবাদ মিলে, যা বিব্রতকর ঠেকলেও এটিই পরিণাম বা উদ্ভূত ফল।  

লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট

আমারসংবাদ/জেআই