Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ক্ষমতার লাগাম টানবে আ.লীগ

রফিকুল ইসলাম

সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১, ০৬:১৫ পিএম


ক্ষমতার লাগাম টানবে আ.লীগ
  • নৌকার মনোনয়ন এখন পর্যন্ত উন্মুক্তের সিদ্ধান্ত রয়েছে —আবদুর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য, আ.লীগ
  • উন্মুক্ত সিদ্ধান্ত থাকবে না, প্রয়োজন হলে দেখা যাবে —আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
  • মনোনয়নপত্র আগের নিয়মে বিক্রি হবে —এস এম কামাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক, আওয়ামী লীগ  

সমাপ্ত হওয়া গত পৌরসভার মতোই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপত্র বিক্রি উন্মুক্ত রাখবে আওয়ামী লীগ।নৌকাপ্রত্যাশীরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত না হওয়া বা পদবি অনুযায়ী তালিকায় নাম না থাকলেও তুলতে পারবেন দলটির মনোনয়নপত্র।

সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের সুপারিশ লাগবে। মূলত আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দ্বন্দ্ব, ব্যক্তিবলয়ের রাজনীতি এবং সাংসদ ও জেলা-উপজেলার প্রভাবশালী নেতাদের ক্ষমতার রাজত্বের লাগাম টানতেই এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, গত পৌরসভা নির্বাচনে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম কিছু কিছু ত্যাগী নেতাকর্মীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহের ক্ষেত্রে তাদের পথরুদ্ধ করা হয়েছে।

সেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাইয়ের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের সুপারিশে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। ওটা ছিলো আমাদের নেত্রীর সিদ্ধান্ত। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমন (উন্মুক্তের) সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হলে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হবে। সে জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

এ দিকে দীর্ঘ এক বছর পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বসবে আওয়ামী লীগ। ওই বৈঠকে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের মনোনয়নপত্রের বিষয় নিয়েও খোলামেলা আলোচনা হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র উন্মুক্ত হবে কি না— সেটি নির্ভর করছে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।  

সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর শেষ হবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। করোনা ভাইরাসে মৃত্যু ও সংক্রমণ এখন নিম্নমুখী— এ সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। স্থগিত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট চলতি মাসেই। এরপর ধাপে ধাপে সারা দেশের মেয়াদোত্তীর্ণ প্রায় সাড়ে চার হাজার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন দ্রুত শেষ করবে কমিশন।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের মাঠের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দলটির দলীয় প্রতীকের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে নৌকাপ্রত্যাশীরা। তারা নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড টানানোর পাশাপাশি প্রতিদিন সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং এবং গণসংযোগ করছে। নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে স্থানীয় এমপি ও দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। কেউ কেউ কেন্দ্রীয় নেতাদের অফিস ও বাসাবাড়িতে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

ভোটার ও দলীয় নেতাদের মাঝে খরচ করছেন কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা। সবার টার্গেট নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত করা। মূলত বিগত দিনের জাতীয় বা স্থানীয় সরকারের নির্বাচন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নৌকার মনোনয়ন পেলেই ভোটের মাঠে বিজয় নিশ্চিত। এ কারণেই দলীয় মনোনয়নকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রার্থীরা। ফলে স্থানীয় সরকার নির্বাচন এলেই দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়ে তৃণমূল আওয়ামী লীগ।

বিশেষ করে তৃণমূলের পাঠানো রেজুলেশনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম দিতে টাকার বাণিজ্য, কাউন্সিলরদের ভোট বিক্রির অভিযোগ, এমপিদের ইন্ধনে অজনপ্রিয় প্রার্থীর নাম পাঠানো ও জেলা-উপজেলা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা ব্যক্তিস্বার্থের জন্য স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানাভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করেন দলটির স্থানীয় নেতারা। তৃণমূলের দায়িত্বশীল নেতা এবং এমপিদের এমন আচরণে বারবারই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন মনোনয়নবঞ্চিতরা। মাঠের এমন চিত্র বিগত দিনে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে তুলে ধরেছেন বঞ্চিতরা।

তাদের অভিযোগ, নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করতে একক আধিপত্য দেখান স্থানীয় সাংসদ ও সাংসদপন্থিরা। তারা নিজ নিজ সিন্ডিকেট ধরে রাখতে সুকৌশলে পিছিয়ে রাখেন তৃণমূলের নিবেদিতপ্রাণ পরীক্ষিত নেতাদের।

আ.লীগ সূত্রে জানা যায়, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়নে এমপি ও স্থানীয় নেতাদের প্রভাবমুক্ত রাখতে নীতিগত কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। এজন্য আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ উন্মুক্ত রাখবে। দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা হিসেবে নৌকার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা সবার অধিকার। দল কাকে মনোনয়ন দেবে আর কাকে মনোনয়ন দেবে না, সে সিদ্ধান্ত দলের মনোনয়ন বোর্ড নিবে। এখানে এমপি ও এমপিপন্থিরা নিজেদের স্বার্থে ত্যাগী এবং যোগ্যদের নাম বাদ দিবে, নিজের অনুসারীদের নাম কেন্দ্রে পাঠাবে তা আর চলবে না। এজন্য মনোনয়নপত্র উন্মুক্ত করা হযেছে।

এর আগে গত পৌরসভা নির্বাচনে তৃণমূলের মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগের ভিত্তিতে দলীয় মনোনয়ন ফরম উন্মুক্ত করে আওয়ামী লীগ। সে সময় তৃণমূলের পাঠানো তালিকার বাইরে থাকা আগ্রহীরা আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের সুপারিশে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও একইভাবে মনোনয়ন নিতে পারবেন। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপত্র আগের নিয়মে বিক্রি হবে। যে নিয়মে গত পৌরসভা নির্বাচনে মনোনয়ন বিক্রি হয়েছে। সেই নিয়ম এখনো পরিবর্তন হয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের সাথে হাই কমান্ড আলাপ-আলোচনা করে যে সিদ্ধান্তই নেবে, সেভাবে মনোনয়ন বিক্রি হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন আরও বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে যারা দলের প্রার্থী হতে চায়, তাদের সবার নাম কেন্দ্রে পাঠানো উচিত। মনোনয়ন বোর্ড যাকে যোগ্য মনে করবে তাকে মনোনয়ন দেয়া হবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, গত পৌরসভার মতোই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্থানীয় নেতাদের পক্ষপাতিত্ব ঠেকানো এবং দলের দুঃসময়ের ত্যাগী, পরিশ্রমী এবং যোগ্যদের মনোনয়ন নিশ্চিত করতেই আওয়ামী লীগের উন্মুক্ত থাকবে মনোনয়নপত্র। এখন পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত রয়েছে।