Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

আগ্রাসী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করোনা

মাহমুদুল হাসান

সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১, ০৬:২৫ পিএম


 আগ্রাসী ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে করোনা
  • চব্বিশ ঘণ্টায় হাসপাতালে ২৪৮ ডেঙ্গু রোগী
  • গত ১০ দিনে ডেঙ্গুজ্বরে আটজনের মৃত্যু
  • ২০১৯ সালের চেয়ে এবার মশার ঘনত্ব বেশি
  • আক্রান্ত-মৃতের সিংহভাগ রাজধানীবাসী
  • করোনায় তিন মাসে সবচেয়ে কম মৃত্যু

উচ্চ সংক্রমণের চূড়া থেকে নেমেছে করোনা। আগের মতো নেই শনাক্ত-মৃত্যু। ৩০ শতাংশের বেশি শনাক্তের হার এখন ৮ শতাংশের নিচে। রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যু নেই আর। তবুও নগরজীবনে স্বস্তি নেই। করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও বেড়েছে ডেঙ্গুঝুঁকি। প্রতিদিন ৩০০’র কাছাকাছি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। মৃত্যুও থেমে নেই।

ডেঙ্গু জ্বরাক্রান্ত হয়ে প্রায় দিনই মৃত্যু হচ্ছে। যার অধিকাংশই রাজধানীর বাসিন্দা। সরকারি হিসাবে সেপ্টেম্বরের গত ১০ দিনে আটজনের মৃত্যু হয়েছে। জুলাই, আগস্ট ও গেল ১০ দিনে ৫৪ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এখনও কমেনি ঝুঁকি।

 ২০১৯ সালের ডেঙ্গু মহামারির চেয়েও এ বছর রাজধানীতে এডিস মশার ঘনত্ব বেশি। ২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে ১৭৯ জনের মৃত্যু ও লক্ষাধিক আক্রান্ত হওয়ার পর গত বছর সতর্ক অবস্থানে ছিল ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। তারপরও ২০২০ সালে সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল এক হাজার ৪০৫ জন, যাদের মধ্যে ৬ জন মারা যান। গত বছর সংক্রমণের মাত্রা কম থাকলেও এ বছর পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক জরিপে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের পাঁচটি করে ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে। নগরীতে রোগীর চাপ সামলাতে ছয়টি সরকারি হাসপাতালকে ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হিসেবে ঘোষণাও করা হয়েছে।

অন্যদিকে করোনায় গত তিন মাসে সবচেয়ে কম মৃত্যু ঘটেছে গতকাল শুক্রবার। সরকারি হিসাবে গতকাল মাত্র ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু জুলাইয়ে করোনায় মৃত্যু দিনে আড়াইশরও বেশি ছাড়িয়েছিল।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় তৎপরতা থাকলেও ডেঙ্গু মোকাবিলায় উদাসীনতা রয়েছে। এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। রোগীর চিকিৎসাও নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো ডেঙ্গুতে মৃত্যু আরও বাড়তে পারে। রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনকে দুষছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

তারা বলছে, গত মার্চে এডিস মশার উৎস ধ্বংসের জন্য দুই সিটি কর্পোরেশনকে জানানো হলেও কাজটি তারা করেনি। ফলে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। সরকারি হিসাবে জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫৪ জনের মৃত্যু হলেও ২০১৯ সালের মতো মহামারি হিসেবে ছড়াবে না বলে অভয় দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, গতকাল ও পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় ২৪৮ নতুন ডেঙ্গু রোগী রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতাগুলোয় ভর্তি হয়েছেন। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী ঢাকার। সরকারি তথ্যমতে, গতকাল ঢাকায় ভর্তি হয়েছেন নতুন আরও ২১৪ জন এবং বাইরের ৩৪ জন।

এক হাজার ২২১ রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জানিয়ে অধিদপ্তর জানায়, তাদের মধ্যে ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি ৪১ হাসপাতালে ভর্তি আছেন এক হাজার ৪১ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৮০ জন। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দুই হাজার ৮৯৯ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। গত ১০ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮ জন।

 চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৩ হাজার ২৫৫ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১১ হাজার ৯৮০ জন। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে অধিদপ্তর।

এদিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, রাজধানীসহ সারা দেশে গতকাল আরও ২৭ হাজার ২৩০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার মধ্যে গতকাল পরীক্ষা করা হয়েছে ২৬ হাজার ৮৭৮টি। দেশে এখন পর্যন্ত মোট ৯২ লাখ দুই হাজার ৭৯০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ৬৮ লাখ পাঁচ হাজার ৮৪৭টি আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ২৩ লাখ ৯৬ হাজার ৯৪৩টি।

গতকাল দুই হাজার ৩২৫ জনের নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ২৭ হাজার ২১৫ জনে। তার মধ্যে শুক্রবার সুস্থ হওয়া তিন হাজার ৮৫৬ জনসহ এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৭২ হাজার ৬৭ জনে।

এছাড়াও গতকাল ৩৮ জনের মৃত্যুতে করোনায় দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৬ হাজার ৮৩২ জনে ঠেকেছে। এক দিনে শনাক্তের হার আট দশমিক ৬৫ শতাংশ আর এখন পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ আর মৃত্যুর হার এক দশমিক ৭৬ শতাংশ। গতকাল মারা যাওয়া ৩৮ জনের মধ্যে পুরুষ ২০ আর নারী ১৮ জন। এদের নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত মোট পুরুষ মারা গেলেন ১৭ হাজার ৩১৪ আর নারী ৯ হাজার ৫১৮ জন।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্প্রতি করা এক জরিপে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের পাঁচটি করে ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ঢাকা উত্তরের ৫টি ওয়ার্ড হলো : মগবাজার (নিউ ইস্কাটনে মশার ঘনত্ব শতকরা ৫৬.৭ ভাগ), বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা (নিকুঞ্জে ৪৮.৪ ভাগ), কল্যাণপুর (দারুস সালামে ৪৬.৭ ভাগ), মিরপুর-১০ (কাজীপাড়ায় ৪৩.৩ ভাগ), মহাখালী ও নিকেতনে ৪০ ভাগ। ঢাকা দক্ষিণের ৫ ওয়ার্ড হলো : বাসাবো (গোড়ান ৭৩.৩ ভাগ), এলিফ্যান্ট রোড (সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকা ৬৬.৭ ভাগ), আর কে মিশন রোড (টিকাটুলীতে ৫০ ভাগ), বনশ্রীতে ৪০ ভাগ, মিন্টো রোডে (বেইলি রোডে ৪০ ভাগ) এডিস মশার ঘনত্ব পাওয়া গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের (এমআইএস) পরিচালক মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল, রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, আমিন বাজার ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, লালকুঠি হাসপাতাল মিরপুর ও কামরাঙ্গীরচর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালকে ডেঙ্গুর জন্য ডেডিকেটেড করা হয়েছে।