Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

অচলাবস্থায় রেলওয়ে হাসপাতাল

নুর মোহাম্মদ মিঠু

সেপ্টেম্বর ১০, ২০২১, ০৬:৪০ পিএম


অচলাবস্থায় রেলওয়ে হাসপাতাল

সমন্বয়হীনতার কারণে গত ছয় বছর আগে হওয়া চুক্তির কিছুই আদৌ বাস্তবায়ন করতে পারেনি রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এতে প্রতিনিয়তই চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রেলকর্মীরা।

জানা গেছে, রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত ১৪ হাসপাতাল ও ১৮ ডিসপেনসারি কাম হাসপাতালের মধ্যে ৮টি ডিসপেনসারি ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি ১০টিতে কোনো ফার্মাসিস্ট নেই। মাত্র ২৫ শতাংশ ডাক্তার, নার্স ও স্টাফ দিয়ে চলছে রেলওয়ে হাসপাতালগুলো। শতাধিক সার্জনের স্থলে রয়েছেন মাত্র ১৩ জন। ৩০ মহিলা ডাক্তারের স্থলে রয়েছেন মাত্র দুজন। তিনটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সবগুলোই নষ্ট।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম রেলওয়ের আট হাসপাতালের মধ্যে দুটি বেশ বড়। এর মধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৮৬ সালে। রেল মন্ত্রণালয়ের অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম-দুর্নীতি, বাজেটস্বল্পতা ও রক্ষণাবেক্ষণে দায়িত্বহীনতার ছাপ হাসপাতালটির সর্বত্র দৃশ্যমান।

৭৫ শয্যার মধ্যে বর্তমানে ৪১ শয্যায় রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। সম্পদের অপ্রতুলতায় বাকি শয্যাগুলোও রয়েছে নামমাত্র। আটটি কেবিন ও সার্জিক্যাল ওয়ার্ড থাকলেও তাতে নেই অনেক সুযোগ-সুবিধা। রক্ত, মূত্র ও এক্স-রের মতো কিছু প্রাথমিক পরীক্ষা ছাড়া অন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার সুযোগ কোনো নেই। নেই আধুনিক সার্জারি, আইসিইউ বা এইচডিইউর সুবিধা।

অথচ হাসপাতালটি আধুনিকায়নের দাবি দীর্ঘদিনের। সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করে রেলওয়ে কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও উন্নত চিকিৎসাসেবা দেয়ার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে কমলাপুরের রেলওয়ে হাসপাতালটিকে জেনারেল হাসপাতালে রূপান্তর করে। অথচ নামকরণেই যেন শেষ এর কার্যক্রম। দৃশ্যত আর কোনো অগ্রগতি হয়নি আদৌ।

এ দিকে সিআরবি এলাকায় বেসরকারি হাসপাতালের অনুমোদন নিয়ে যতটা সরব চট্টগ্রাম রেলওয়ে, ততোটাই নীরব নিজ হাসপাতালকে কার্যকর করার ক্ষেত্রে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিকল্পিতভাবে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে অচলাবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে।

তবে জনবল সংকটের দোহাই দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে হাসপাতালটিতে দেখা যাবে শুনশান, নিস্তব্ধতা। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি হাসপাতাল। যেখানে রোগীদের নেই কোনো পদচারণা। ব্যস্ততা নেই চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্টদেরও। হাসপাতালের ভেতরের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায় সেখানে চিকিৎসার কোনো লেশমাত্র নেই। ৯৫ শয্যার বিশাল জায়গাজুড়ে থাকা এ হাসপাতাল মহামারিকালেও রোগীশূন্য থাকার দৃশ্য দেখা গেছে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসকের ১৬ পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত মাত্র তিনজন। নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ১০ নার্স পদে কর্মরত মাত্র দুজন। রোগী নেই বহির্বিভাগেও।

 স্থানীয়রা বলেন, এ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা দেয়া হতো, ডাক্তার-নার্স এবং ওষুধও ছিল। কিন্তু এখন তার কিছুই নেই। দেশের নামকরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে স্থাপন করেছে বড় বড় হাসপাতাল। অথচ সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালের।

তারা বলছেন, পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এ হাসপাতালকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলওয়ে স্টাফদের জন্য যে স্বাস্থ্যসেবাটি ছিল, সেটা হয়তো তারা আর দিতে চাইছে না। হাসপাতালের এমন বেহাল দশার কথা কয়েক দফা ওপর মহলে জানানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়েতেও ৬টি হাসপাতাল ও ৬টি ডিসপেনসারি কাম হাসপাতাল রয়েছে। এসব হাসপাতালে ৩৪ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র ৭ জন। মাত্র ১৫ থেকে ২০ সহকারী সার্জন, নার্স ও ফার্মাসিস্ট নিয়ে হাসপাতালগুলো চলছে। সৈয়দপুরে ৯০ শয্যাবিশিষ্ট রেলওয়ে হাসপাতালটি সবচেয়ে বড়। এ হাসপাতালে ৭ জন ডাক্তারের স্থলে রয়েছেন মাত্র দুজন।

এছাড়া রাজশাহীতে ২০ শয্যা, লালমনিরহাটে ৩০ শয্যা, পার্বতীপুরে ১৬ শয্যা, পাবনার পাকশীতে ৮০ শয্যা ও সান্তাহারে ৮০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল রয়েছে। ৮০ শয্যার পাকশী রেলওয়ে হাসপাতালে ১৩ চিকিৎসকের স্থলে আছেন মাত্র ৩ জন।

আর সান্তাহারে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র দুজন। হাসপাতালগুলোয় রেলওয়ে স্টাফদের চিকিৎসাসেবা গ্রহণের কথা থাকলেও সেবা না পাওয়ায় যান না রোগীরা। তারা বাধ্য হয়ে যাচ্ছেন বাইরের হাসপাতাল বা প্রাইভেট ক্লিনিকে।এছাড়া এ অঞ্চলের ৬টি ডিসপেনসারি কাম হাসপাতালও বন্ধের উপক্রম হয়েছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ না করে কেটে দেয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এরপর সচিব মো. সেলিম রেজার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।