Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

খালেদা জিয়ার নির্দেশে দ্বাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতি

সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


খালেদা জিয়ার নির্দেশে দ্বাদশ নির্বাচনের প্রস্তুতি
  • নির্বাচনের দুবছর আগেই দল ও জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে দেয়া হয়েছে নির্দেশনা
  • দলে ৩০০ আসনভিত্তিক তিন স্তরের প্রার্থী তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু
  • লন্ডন নির্দেশনায় জোটের সঙ্গে প্রার্থী চূড়ান্তে আলাদা আলাদা বৈঠক হচ্ছে
  • স্থানীয় সরকারে দলীয় প্রতীকে আর নির্বাচন নয়। স্বতন্ত্র হলেও বাধা নেই
  • তারেক রহমানের নাম দ্বাদশ নির্বাচনে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করবে বিএনপি
  • নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের দেয়া হয়েছে বার্তা

এবার দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েই অংশ নেবে বিএনপি। আর তা হচ্ছে রাষ্ট্রক্ষমতায় জিয়াউর রহমানের অতীতের কৌশল অনুসরণ ও খালেদা জিয়ার নির্দেশে। গত সপ্তাহে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে লন্ডনে অবস্থানরত দলীয় প্রধান তারেক রহমান এ বার্তা দিয়েছেন। নির্বাচনের দুবছর আগেই দল ও জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তাগিদ দেয়া হয়েছে।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র এমন তথ্যই জানিয়েছে। যদিও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলটি ‘নো খালেদা নো ইলেকশন’; ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন নয়’— এমন ঘোষণা দিলেও দিনশেষে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে নির্বাচনে যায় বিএনপি। ফলে হয় ভরাডুবি।

৩০০ আসনেরবিএনপির ভাষ্য, দলীয় সরকার এবং এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর নির্বাচনে যাবে না তারা। বিপরীতে মাত্র সাতটি আসন লাভ করে। নির্বাচনে অস্বচ্ছতার প্রশ্ন তুলেও চুপ ছিলো তারা। দেখায়নি তেমন কঠিন কোনো প্রতিক্রিয়া। এরপর স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার ঘোষণা দেয়া হয়। বিএনপির ভাষ্য, দলীয় সরকার এবং এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর নির্বাচনে যাবে না তারা।

সম্প্রতি স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কুমিল্লা-৭ ও স্থানীয় সরকারের ২৩ প্রতিষ্ঠানের ভোটের তারিখ ৭ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে দলটি। তবে কেউ যদি স্বতন্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করেন, তাতে বাধাও দেয়া হবে না।

সেক্ষেত্রে কাউকে দল থেকে শোকজ বা বহিষ্কারও করা হবে না জানা গেছে। এর মাধ্যমে সরকারকে বিএনপি একটি বার্তা দিতে চাইবে তারা জাতীয় নির্বাচনে যাবে না— যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেয়া না হয়। গেল সপ্তাহে ঠাকুরগাঁওয় সফরে গিয়ে বিএনপি মহাসচিবও এমন বার্তা দিয়েছেন।

তবে দলটির হাইকমান্ড সূত্রমতে, বিএনপি এবার ভেতরে ভেতরে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য পূর্বপরিকল্পনা রাখবে। আর তা নির্বাচনের আগ মুহূর্তে নয়। কমপক্ষে দুবছর আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। মাঠে থাকতে প্রস্তুতি নিতে বলা হবে নেতাকর্মীদের। এর মধ্যেই রাজনৈতিক চাপ, সমঝোতা, কূটনৈতিক তৎপরতা সবই চলবে।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৃণমূলের প্রস্তাব, অভিমত, দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বিবেচনা করে এরই মধ্যে ৩০০ আসনভিত্তিক তিন স্তরের প্রার্থী তালিকাও তৈরি করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। তালিকায় মামলাসহ নানা কারণে প্রথম স্তরের প্রার্থী বাদ পড়লে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের প্রার্থী প্রস্তুত রাখা হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতেও প্রার্থী তালিকা রয়েছে। জোটের সঙ্গেও সমন্বয় চলছে। লন্ডন নির্দেশনায় জোটের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করা হচ্ছে। ঐক্যবদ্ধ ও মাঠে থাকতে মতামত নেয়া হচ্ছে।

এবার বিএনপি সব কাজই আগে থেকে ঘুছিয়ে রাখবে। গতবার খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি নির্বাচনে গেলেও জয়ী হলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন— তা নির্দিষ্ট করতে পারেনি। এবার সেগুলো আগে থেকেই জানানো হবে। দলের বিশ্বস্ত সূত্রের ভাষ্য, তারেক রহমানের নাম দ্বাদশ নির্বাচনে স্পষ্টভাবে বলা হবে। সে আলোকেই রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা হাইকমান্ডকে দেয়া হয়েছে।

এদিকে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইশতেহার তৈরির কাজও শুরু করেছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে কয়েকজন তরুণ নেতাকে নিয়ে এ কাজ শুরু হয়েছে। সঙ্গে মাঠ ঘুছিয়ে আনতে নিজ নিজ জেলা সফর করতে ঢাকায় অবস্থানরত নেতাদেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগে দলীয় প্রধানের মুক্তি ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি কোনোটাই সহজে মানবে না সরকার। তাই নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের বার্তা পাঠানো হচ্ছে। ভোটের মাঠে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে বিএনপির যেসব জেলা ও উপজেলা কমিটি এখনো হয়নি, সেসব কমিটি ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার বলেন, নির্বাচন আসছে, তাই বসে থাকার সুযোগ নেই। সম্ভাব্য প্রার্থীকে নিজের মাঠ গুছিয়ে রাখতে হবে; আবার না করলেও তাকে প্রতারণার নির্বাচন রুখে দাঁড়ানোর সক্ষমতা তৈরি রাখতে হবে।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সব লোক জেলে যাক, তারপরও সরকারের পতন ঠেকিয়ে রাখার কোনো সুযোগ  নেই। দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, আমরা আন্দোলন করছি, আমাদের আন্দোলন করার অভিজ্ঞতা আছে। আন্দোলনে শিরোপা অর্জনেরও খালেদা জিয়ার সুনাম আছে। আর প্রকৃত আন্দোলন কখনো বৃথা যায় না। কোনো আন্দোলন দীর্ঘস্থায়ী, কোনো আন্দোলন হয় স্বল্পক্ষণের জন্য। বিএনপি আন্দোলন করতে পারে— যা ২০১৩ সালে দেখিয়েছে, ২০১৫ সালেও দেখিয়েছে। সামনে এমন আন্দোলন আরও দেখা যাবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের দাবি একটাই— এ সরকার পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন দিয়ে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক। আমরা সব দলের সাথে কথা বলেছি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারের পতন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি আমরা।