Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

তৃণমূল যুবলীগে আসবে ত্যাগী ও মেধাবীরা

আসাদুজ্জামান আজম

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম


তৃণমূল যুবলীগে আসবে ত্যাগী ও মেধাবীরা

করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসায় সংগঠনকে শক্তিশালী করার মিশনে নেমেছে যুবলীগ। তৃণমূল যুবলীগকে ঢেলে সাজাতে সাংগঠনিক সফর শুরু করেছেন দায়িত্বশীল নেতারা। নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় কোন্দলে জর্জরিত শাখাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছেন তারা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জেলার বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে আরও অন্তত ২০টি জেলায় বর্ধিত সভা করার পরিকল্পনা করেছে সংগঠনটির হাইকমান্ড।

সূত্র মতে, ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর সপ্তম জাতীয় কংগ্রেসে যুবলীগের নেতৃত্বে আসেন বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। নেতৃত্বে আসার পরপরই পিতার আবেগ আর ভালোবাসায় জড়ানো সংগঠন যুবলীগকে বিতর্কমুক্ত করে জনগণের কল্যাণমুখী সংগঠনে পরিণত করতে মরিয়া হয়ে উঠেন শেখ ফজলে শামস্ পরশ। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে বিতর্কের কালিমা মুছে প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শে ফিরেছে যুবলীগ। অন্যের স্বার্থ ছিনিয়ে নেয়া থেকে বেরিয়ে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছে যুবলীগ। সাধারণ মানুষের সেবা করাকেই এখন যুবলীগের আদর্শ হিসেবে দেখছে সংগঠনটি।

 যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব আসার পরই বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। দায়িত্ব গ্রহণের পর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন মূল উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গত দেড় বছরে মানবিক রাজনীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন পরশ-নিখিল। বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটে সারা দেশে যুবলীগের মানবিক কর্মকাণ্ড সবার নজর কেড়েছে। অতীতের সব বিতর্ক পেছনে ফেলে জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে শেখ মনির কাঙ্ক্ষিত যুবলীগ প্রতিষ্ঠা লাভের আলোর ঝলকানি এখন সংগঠনটিজুড়ে।

দেরিতে হলেও করোনা সংক্রমণ কমে আসায় এবার সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ দিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। সারা দেশে যুবলীগকে ঢেলে সাজাতে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এরই আলোকে বিভিন্ন সাংগঠনিক বিভাগের জেলাসমূহে বর্ধিত সভা শুরু হয়েছে।

জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে সংগঠনকে শক্তিশালী ও গতিশীল করার কাজ আমরা শুরু করেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক কোনো বিপথগামী এবং অনুপ্রবেশকারী যুবক যুবলীগে ঠাঁই পাবে না। যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট হবে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অতন্দ্র প্রহরী।

যুবলীগের দপ্তর সেল সূত্র মতে, ইতোমধ্যে বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বদিউল আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে গত ১০ সেপ্টেম্বর পটুয়াখালী জেলা ও ১১ সেপ্টেম্বর বরগুনা জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর পিরোজপুর জেলা এবং ২৪ সেপ্টেম্বর ঝালকাঠি জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।

বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মাজহারুল ইসলাম বলেন, গত দেড় বছর করোনাকালীন সময়ে যুবলীগ মানবিক কার্যক্রম চালিয়েছে। এখন করোনা পরিস্থিতি কমে আসায় সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমাদের চেয়ারম্যান-সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা মোতাবেক জেলা-উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়নকে ঢেলে সাজানো হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান সোহাগের নেতৃত্বে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি, ১৬ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি ও ১৭ সেপ্টেম্বর বান্দরবান জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।

চট্টগ্রাম উত্তর সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নাঈম ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মশিউর রহমান চপলের নেতৃত্বে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর, ২২ সেপ্টেম্বর নোয়াখালী ও ২৩ সেপ্টেম্বর ফেনী জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।

খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল ও সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাড. ড. শামীম আল সাইফুল সোহাগের নেতৃত্বে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ, ১৬ সেপ্টেম্বর মাগুরা জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুব্রত পাল বলেন, কোভিড সংক্রমণ কমে আসায় চেয়ারম্যান-সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে আমরা সাংগঠনিক সফর শুরু করেছি। ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হবে। ইতোমধ্যে দুটো জেলায় তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে, পর্যায়ক্রমে বাকিগুলো হবে।

রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নাটোর, ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী জেলা ও রাজশাহী মহানগর যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।

এ বিষয়ে যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিন বলেন, আমরা জেলা পর্যায়ের বর্ধিত সভা শুরু করেছি। এরপর বিভাগীয় বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুঃসময়ের ত্যাগী, পরীক্ষিত, ২০০৮ সালের আগে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন, বঞ্চিত, তরুণ প্রজন্মের নেতাদের প্রাধান্য দেয়া হবে। কোনো মাদক ব্যবসায়ী ও ভূমিদস্যুর জায়গা হবে না।

ঢাকা উত্তর সাংগঠনিক বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. রফিকুল আলম জোয়ার্দার সৈকত ও সাধারণ সম্পাদক মো. জহির উদ্দিন খসরুর নেতৃত্বে গত ১১ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলা ও ময়মনসিংহ মহানগর যুবলীগের এবং গতকাল ১২ সেপ্টেম্বর নেত্রকোণা জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ২২ সেপ্টেম্বর টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে গাজীপুর জেলার বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গত ৬ মে ঢাকা দক্ষিণ সাংগঠনিক বিভাগের ফরিদপুর জেলায় ২১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সোহেল পারভেজের নেতৃত্বে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, ২২ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় জেলা যুবলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সারা দেশের মতো ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ মহানগর যুবলীগকেও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগের অন্তর্গত যেসব ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষিত হয়েছিল, ওইসব ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য আগ্রহীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে করোনা সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় পর দলীয় সাংগঠনিক কাজে ফিরেছে যুবলীগের অন্যতম এ শাখা দুটি।