Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪,

নির্দেশনা অমান্যে কঠোর ব্যবস্থা

রফিকুল ইসলাম

সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১, ০৬:৫০ পিএম


নির্দেশনা অমান্যে কঠোর ব্যবস্থা
  • বঙ্গবন্ধুকন্যার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়ন হবে: আব্দুর রহমান (প্রেসিডিয়াম সদস্য, আওয়ামী লীগ)
  • নেত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য আ.লীগ ঐক্যবদ্ধ:  আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগ)
  • দলকে বিতর্কমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার: বিএম মোজাম্মেল হক (সাংগঠনিক সম্পাদক, আ.লীগ)
  • প্রভাবশালীদের ক্ষমতার লাগাম টানা হবে: অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন (সাংগঠনিক সম্পাদক, আ.লীগ)

তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত দলকে সুসংগঠিত করতে এবং স্বচ্ছ ইমেজ ফিরিয়ে আনতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশের কোথাও এমপি-মন্ত্রী বা দলের দায়িত্বশীল নেতার মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হলেই সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি করতে বলেছেন তিনি। দলীয় প্রধানের এমন বার্তাকে বেশ গুরুত্বের সাথেই দেখছেন আওয়ামী লীগের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে নেত্রীর নির্দেশনাগুলোয় গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তৃণমূলকে ঢেলে সাজানো, কোন্দল নিরসন, এমপিদের ক্ষমতার রাজত্ব কমানো ও প্রভাবশালীদের ক্ষমতার লাগাম টানা হবে। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ যদি বিদ্রোহ করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তৃণমূলে নতুন করে সদস্য সংগ্রহ করা হবে এবং বিতর্কিত ও ভিন্নপন্থিদের দল থেকে ছেঁটে ফেলা হবে। সরকার ও আওয়ামী লীগবিরোধী গুজব, অপপ্রচার, মিথ্যাচার কঠোর হাতে দমন করা হবে। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পদপ্রত্যাশীদের যোগ্যতা ও মেধাকে মূল্যায়ন করতে হবে। মূলত বঙ্গবন্ধুকন্যার দেয়া প্রতিটি নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন আওয়ামী লীগের বিভাগীয় ও কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতারা।

জানতে চাইলে আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম আমার সংবাদকে বলেন, যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য নেতাকর্মীরা সব সময় ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগ সব সময় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই দেশের জনগণের আস্থা অর্জন করেছে বারবার।

কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের নেত্রীর পরামর্শ হলো ঐক্যবদ্ধ তৃণমূল আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করা। তৃণমূল আওয়ামী লীগকে বিতর্কমুক্ত রাখা। নেত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য আওয়ামী লীগ যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে প্রস্তুত আছে। দীর্ঘ এক বছর পর গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা। অনুষ্ঠিত ওই সভায় তৃণমূলে নেতাকর্মীদের ওপর স্থানীয় সাংসদ ও সাংসদপন্থিদের ‘খবরদারি’ করতে নিষেধ করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দলটির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে তিনি বলেন, নানা সমীকরণে এমপি মনোনয়ন দেয়া হয়। আর এমপি হয়েই তারা দলকে ইচ্ছামতো পরিচালনায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। এটা চলবে না। দল চলবে নিজস্ব গতিতে।

এছাড়া দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট কোন্দল, দায়িত্বশীল নেতাদের বলয়ভিত্তিক রাজনীতি, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীদেরদূরে ঠেলে দেয়া দিয়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে এমপিরা দলের শীর্ষ পদ দখল করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এ অবস্থায় এমপিদের এমন কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতে কেন্দ্রীয় নেতাদের স্পষ্ট বার্তা দেন তিনি।

এছাড়া দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য তৃণমূলকে আরও শক্তিশালী করতে নির্দেশনা দেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। মেয়াদ-উত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতাদের দিয়ে কমিটি গঠনের নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। এছাড়া জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের মাঠে আর বিদ্রোহী প্রার্থী চান না আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, যারা অতীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছে বা দলের প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছে, তাদের দল থেকে একেবারে বহিষ্কার না করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদ্রোহী ও তাদের মদতদাতাদের আগামীতে মনোনয়ন দেয়া হবে না এবং দলের শীর্ষ পদে দায়িত্বও দেয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন আমার সংবাদকে বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে নেত্রীর নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে— বিশেষ করে তৃণমূলকে কীভাবে ঢেলে সাজাতে হবে, কীভাবে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে, কীভাবে কোন্দল নিরসন করতে হবে, কীভাবে এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালীদের ক্ষমতার লাগাম টানতে হবে। কেউ যদি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ যদি ‘বিদ্রোহ’ করে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তৃণমূলে নতুন করে সদস্য সংগ্রহ করা হবে এবং বিতর্কিত ও ভিন্নপন্থিদের দল থেকে ছেঁটে ফেলা হবে। সরকার ও আওয়ামী লীগবিরোধী গুজব, অপপ্রচার, মিথ্যাচার কঠোর হাতে দমন করা হবে। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পদ প্রত্যাশীদের যোগ্যতা ও মেধাকে মূল্যায়ন করতে হবে। মূলত নেত্রীর প্রতিটি সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করাই এখন প্রধান টার্গেট।

নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের সম্মেলনের চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, আমার বিভাগের মেয়াদ-উত্তীর্ণ ইউনিটগুলোর সম্মেলন শেষের দিকে। সম্মেলন শেষ হওয়া ইউনিটগুলোতে মেধাবী ও ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বাকিগুলোর সম্মেলনও শেষ করা হবে।

বিতর্কের সাথে যুক্তদের ছাড় নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, দলকে বিতর্কমুক্ত ও প্রভাবশালীদের দখলমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার। বঙ্গবন্ধুকন্যাও এ বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। দলীয় এমপি-মন্ত্রী, জেলা-উপজেলার প্রভাবশালী নেতারাসহ যারাই বিতর্ক করবে, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। এটাই নেত্রীর পরিষ্কার নির্দেশনা।

আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, দলের ভেতরের সৃষ্ট বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে আমাদের নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) খোলামেলা কথা বলেছেন এবং তা সমাধানের জন্য দায়িত্বশীল নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। নেত্রীর নির্দেশনা পেয়েই আমরা কাজ শুরু করেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যার দেয়া প্রতিটি নির্দেশনাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। তিনি আরও বলেন, নিজেদের ক্ষমতার প্রভাব ধরে রাখতে যারা দলের মধ্যে উপদল বা বিভেদ তৈরি করছেন, তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না। তাদের সাংগঠনিক শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।
 
দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে অংশ নেয়া ৩৬ বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ। গত শনিবার রাতে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জানা যায়, দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ইউপি নির্বাচনে যারা চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাদের ব্যাপারে দলের অবস্থান কঠোর।

সভায় বিদ্রোহী যে ৩৬ প্রার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে, তারা তিন দিনের মধ্যে বিবৃতি দিয়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার না করলে তাদের স্থায়ীভাবে দল থেকে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে। যারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছেন, সেসব নেতাকর্মীকেও সতর্ক করে তিন দিনের সময় দেয়া হয়েছে। তারা তিন দিনের মধ্যে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান না নিলে দলীয়ভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।