Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

পরিধির সঙ্গে বাড়েনি জোগান

মাহমুদুল হাসান

সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


পরিধির সঙ্গে বাড়েনি জোগান
  • সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধনের পর এখনো টিকার অপেক্ষায় দুই কোটির বেশি নাগরিক
  • প্রথম ডোজ গ্রহীতাদের দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিতের পর অবশিষ্ট থাকবে মাত্র ১৯ লাখ ডোজ
  • কোভ্যাক্স ক্রয় ও উপহারসহ মোট টিকা এসেছে প্রায় সাড়ে চার কোটি ডোজ
  • প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন দুই কোটি ১৩ লাখেরও বেশি মানুষ
  • অগ্রাধিকার তালিকায় থাকলেও নিশ্চিত হচ্ছে না ১৮ বছর তদূর্ধ্ব শিক্ষার্থীদের টিকা

মাধ্যমিক  ও উচ্চ মাধ্যমিকে সশরীরে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। সংক্রমণ হার সন্তোষজনক অবস্থায় নেমে আসায় সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার। কিন্তু প্রতিবন্ধকতা শিক্ষার্থীদের টিকাদানে ধীরগতি। যদিও প্রধানমন্ত্রী গেলো জুন মাসে দ্রুত সময়ের মধ্যে ১৮ বছর তদূর্ধ্ব শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানে অগ্রাধিকারের তাগিদ দিয়েছিলেন।

সেই লক্ষ্যে গেলো ১৯ আগস্ট থেকে ১৮ বছর তদূর্ধ্ব যেসব শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুরক্ষা অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়েছে। ৫৫ বছরের বয়স্ক ও সম্মুখসারীর কোভিড-১৯ যোদ্ধাদের টিকাদানের আওতায় আনার মধ্য দিয়ে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি সুরক্ষা ওয়েবসাইটের কার্যক্রম শুরু হয়।

এরপর পর্যায়ক্রমে টিকা গ্রহণের বয়স কমিয়ে আনা হয়। এখন ২৫ বছর তদূর্ধ্ব সাধারণ নাগরিক ও ১৮ বছর তদূর্ধ্ব শিক্ষার্থীরা নিবন্ধনের সুযোগ পাচ্ছেন। সম্প্রতি সরকারের ভাবনায় রয়েছে ১২ বছর তদূর্ধ্ব শিক্ষার্থীদের টিকাদানের। টিকাদান কর্মসূচির প্রতিনিয়ত পরিধি বাড়লেও টিকার মজুত তুলনামূলকভাবে বাড়েনি।

রয়েছে টিকার বড় সংকট। সরকারি তথ্যমতে, চার কোটি ১৬ লাখের বেশি মানুষ টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। দেশে উপহার, কোভ্যাক্সের উপহার ও ক্রয়সহ দুই ডোজের টিকা এসেছে প্রায় সাড়ে চার কোটির কিছু কম। তার মধ্যে প্রায় দুই কোটি ১৩ লাখের বেশি মানুষ প্রথম ডোজ টিকা গ্রহণ করেছেন। প্রথম ডোজ গ্রহীতারা দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণ করলে মাত্র ১৯ লাখের কিছু বেশি টিকা অবশিষ্ট থাকবে।

অন্যদিকে, টিকার নিবন্ধন করে এখনো টিকাদানের বাইরে রয়েছেন প্রায় দুই কোটিরও বেশি মানুষ। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী সবসময় বলছেন, টিকার কোনো ঘাটতি হবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যেই দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা হবে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে আশ্বাস দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিকার সংকট তৈরি হবে না। আমরা ২১ কোটি ডোজ টিকার ব্যবস্থা করেছি। আশা করছি আগামী বছরের প্রথমদিকে এসব টিকা আমরা হাতে পাবো।

টিকাদান কর্মসূচির অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা ১৮ বছর তদূর্ধ্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। কথা হয়েছে গাজীপুর, শরীয়তপুর, রাজবাড়ী, পাবনা, রাজশাহী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও বরিশালের বিভিন্ন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত আরও অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তাদের     অধিকাংশের এখনো টিকাদানের এসএমএস আসেনি। অন্যদিকে যাদের এসএমএম এসেছে সেটাও চলতি সপ্তাহে।

অভিযোগের সুরে এসব শিক্ষার্থী বলেন, তাহলে কিসের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের টিকা দেয়া হচ্ছে? এক মাস আগে নিবন্ধন করেও টিকার এসএমএস আসছে না!

ঢাকা কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী আমিমুল ইহসান বলেন, গত ১৯ আগস্ট ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব শিক্ষার্থীদের টিকায় অগ্রাধিকার দেয়া হলে আমিও রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে টিকাদানকেন্দ্র নির্বাচন করি। গত প্রায় এক মাসেও টিকা প্রাপ্তির এসএমএস পাইনি!

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, তাহলে এটাই কি টিকাদানে অগ্রাধিকারের নমুনা? তবে বাস্ততবা স্বীকার করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সেন্টারের (এমআইএস) পরিচালক এবং এইচআইএস অ্যান্ড ই-হেলথের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, টিকার রেজিস্ট্রেশন অনেক বেশি। ধরুন কোনো কোনো কেন্দ্রে প্রতিদিন তিনশ থেকে পাঁচশ ডোজ টিকাদানের প্রতিদিন ক্যাপাসিটি থাকে। এখন সেই কেন্দ্রে যদি ৪০ হাজার থেকে এক লাখজন টিকার নিবন্ধন করেন তাহলে তো টিকাদানের সিরিয়ালটা লম্বা হয়ে যায়। এ জন্যই আসতে একটু সময় লেগে যায়। টিকার আরও চালান এলে এই সমস্যাটা কেটে যাবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশে চার কোটি ১৬ লাখ ১৬ হাজার ৬৬৭ নাগরিক টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন। এদের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন চার কোটি ১০ লাখ ৫২ হাজার ৩৬০ জন। আর পাসপোর্টের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার ৩০৭ জন।

এদিকে সর্বশেষ গত ১১ সেপ্টেম্বর ৫৪ লাখ এক হাজার ৩৫০ ডোজ টিকার চালান এসেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের শুভেচ্ছা উপহার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্সের উপহার ও ক্রয়সহ দেশে চার কোটি ৪৫ লাখ ২৬ হাজার ৬০৭ ডোজ টিকা এসেছে। এখন পর্যন্ত প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজসহ সর্বমোট তিন কোটি ৫৪ লাখ ৫৫ হাজার ৯০৫ ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে।

তার মধ্যে দুই কোটি ১৩ লাখ ২৪ হাজার ১৮ জন টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। এক কোটি ৪১ লাখ ৩১ হাজার ৮৮৭ জন পেয়েছেন দ্বিতীয় ডোজ। মজুত আছে মাত্র ৯০ লাখ ৭০ হাজার ৭০২ ডোজ। তার মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ বাকি ৭১ লাখ ৯২ হাজার ১৩১ জনের। এছাড়া নিবন্ধন করেও কোনো টিকা পাননি আরও দুই কোটি দুই লাখ ৯২ হাজার ৬৪৯ জন।

এদিকে গতকাল জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ১২ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সি ছাত্র-ছাত্রীদের করোনা ভাইরাসের টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এর আগে গত ১৯ আগস্ট থেকে ১৮ বছর তদূর্ধ্ব শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যে সুরক্ষা অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে নিবন্ধন শুরু হয়।

 গত মঙ্গলবার ১৮ তদূর্ধ্ব যেসব শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তাদের জন্য আলাদা ওয়েবসাইট তৈরির কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এত কিছুর পরও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, পরিধির সঙ্গে কি বাড়ছে টিকার মজুত।

 এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি টিকা নেয়ার জন্য সুরক্ষা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনে নিবন্ধন শুরু হয়। শুরুতে ৫৫ বছরের বেশি বয়সিরা টিকা পান, ধীরে ধীরে কমিয়ে জুলাই মাসে তা ২৫ বছরের বেশি বয়সিদের টিকা নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়।