Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নে মনোযোগী সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম


আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নে মনোযোগী সরকার

আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়ন গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার। গত সাড়ে ১২ বছরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ধারাবাহিক নানা উদ্যোগের ফলে শিল্প খাতের উন্নয়নে সাফল্য পেয়েছে সরকার। সরকারি-বেসরকারিভাবে গড়ে উঠছে শিল্প। বিদেশি অর্থায়নেও হচ্ছে শিল্প। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পায়নে ঘটেছে নীরব বিপ্লব। আগামী দিনের বৈশ্বিক অর্থনীতির বিষয়টি মাথায় রেখে জাতীয় শিল্পনীতি-২০২১ প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সফলতা অর্জনে সরকারি ও বেসরকারিভাবে সমন্বিত প্রচেষ্টায় শিল্পায়নের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দক্ষ জনবল বৃদ্ধিসহ দেশের সব অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনকে প্রাধান্য দিয়ে শিল্পনীতি করা হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।    

মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, করোনা সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিল্প খাত। করোনাকালীন ও পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে শিল্প খাতের সব সম্ভাবনা কাজে লাগাতে তৎপরতা চালাচ্ছেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এমপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। করোনা সংকটেও তার সময়োপযোগী উদ্যোগে শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। প্রতিনিয়ত সশরীরে বা ভার্চুয়াল মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন। সরকারের লক্ষ্য পূরণে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ চারটি সংস্থা, ছয়টি দপ্তর-অধিদপ্তর এবং একটি বোর্ড কাজ করছে।

শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, গত ১২ বছরে নানা উদ্যোগের ফলে শিল্প খাতে অভূতপূর্ব অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। জাতীয় আয়ে শিল্প খাতের অবদান ইতোমধ্যে ৩৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বৃত্ত থেকে বের হয়ে প্রায় ৮ শতাংশের কাছাকাছি। শিল্প মন্ত্রণালয়ে জাতীয় শিল্পনীতি-২০১০ এবং আধুনিক ও সমন্বিত জাতীয় শিল্পনীতি-২০১৬, শিল্পপ্লট বরাদ্দ নীতিমালা-২০১০, জাতীয় মোটরসাইকেল শিল্প উন্নয়ন নীতি-২০১৭, শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড শিপ রিসাইক্লিং রুলস-২০১১, বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন-২০১৮, হস্ত ও কারুশিল্প নীতিমালা-২০১৫, জাতীয় গুণগতমান (পণ্য) ও সেবা নীতি-২০১৫, ট্রেডমার্কস আইন-২০০৯ সংশোধন, পেটেন্ট ও ডিজাইন আইন সংশোধন, ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) আইন, রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রদান সংক্রান্ত নির্দেশনাবলি ২০১৩, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ আইন-২০১৩, ভোজ্যতেলে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধকরণ বিধিমালা-২০১৫, জাতীয় লবণ নীতি-২০১১ এবং জাতীয় এসএমই নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।

পাশাপাশি দক্ষ সার ব্যবস্থাপনা, ৬৩ বছরের পুরোনো হাজারীবাগের ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর, দেশব্যাপী বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণ, হালকা প্রকৌশল, কেমিক্যাল, প্লাস্টিক, ওষুধ (এপিআই), মুদ্রণ এবং অটোমোবাইল শিল্পের জন্য পৃথক শিল্পনগরী স্থাপনের মাধ্যমে খাতভিত্তিক পরিকল্পিত শিল্পায়নের প্রচেষ্টা এগিয়ে নেয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারসূচিত উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় শিল্প খাতেও গুণগত পরিবর্তন এসেছে।

চামড়াশিল্পের আধুনিকায়ন ও ঢাকা এবং পার্শ্ববর্তী নদীসমূহ দূষণমুক্ত রাখতে ঢাকা থেকে সকল ট্যানারি সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানান্তর করা হয়েছে। পাদুকা উৎপাদনে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বে অষ্টম স্থান দখল করেছে। বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের ১৫১টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। অধিকন্তু, এ শিল্পের বিকাশের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় এপিআই শিল্পপার্ক স্থাপনে কাজ করছে।

রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়ন ও টেকসই উন্নয়নে পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের জন্য নতুন ‘জাতীয় শিল্পনীতি-২০২১’ তৈরি করা হচ্ছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, শিল্প খাতের ক্রমবর্ধমান উন্নতি ও উৎপাদনশীলতা অর্জনে উপর্যুক্ত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির মাধ্যমে অধিকতর জনগোষ্ঠীকে শিল্প খাতের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শিল্পের প্রসারের মাধ্যমে একটি দক্ষ ব্যাকওয়ার্ড ও ফরোওয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠা, গবেষণার মাধ্যমে শিল্প খাতে দেশীয় প্রযুক্তির প্রসার, বেসরকারি খাতের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ক্ষুদ্র, কুটির ও গ্রামীণ শিল্পের বিকাশ, স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার লক্ষ্যে রপ্তানিমুখী ও আমদানি বিকল্প শিল্পের প্রসার এবং দেশের সব অঞ্চলে সুষমভাবে শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠাকে প্রধান্য দিয়ে প্রণীত হচ্ছে জাতীয় শিল্পনীতি।
 
শিল্পমন্ত্রী বলেন, আসন্ন শিল্পনীতি ২০২৫ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে এবং এতে ব্যক্তি খাতের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করা হয়েছে। উন্নয়নের জন্য শিল্প পণ্য উৎপাদন বৈচিত্রায়নে সহায়তা, নতুন, যোগ্য ও সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তা সৃষ্টিকল্পে সহায়ক ভৌত সুবিধাদি প্রাপ্তিতে সহায়তা করা এবং স্টার্টআপ ফাইন্যান্সিং, ক্রেডিট গ্যারান্টি ইত্যাদি প্রদানের মাধ্যমে এসএমই খাতের প্রসারকে ত্বরান্বিত করা হবে। নতুন শিল্পায়ন সৃষ্টিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে জোর দিচ্ছে শিল্প মন্ত্রণালয়।

গত বছর ই-নথিতে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনকে ওয়ান স্টপ সার্ভিস আইন-২০১৮ এর আওতায় আনা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের জুন ‘২০ পর্যন্ত এডিপি’র বাস্তবায়নের হার ৯৯.১৭ শতাংশ। শিল্প মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর-সংস্থাসমূহের মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরের এপিএ স্বাক্ষরিত হয়েছে গত ২৬ জুলাই। সরকারের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, সরকারের উন্নয়ননীতি এবং সার্বিক উন্নয়ন অগ্রাধিকারকে সামনে রেখে এপিএ প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা, সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, নির্বাচনি ইশতেহার বাস্তবায়নেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।