Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

নীরবেই বাড়ছে ডেঙ্গু

মাহমুদুল হাসান

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১, ০৬:০৫ পিএম


নীরবেই বাড়ছে ডেঙ্গু

করোনার প্রকোপে চাপা পড়েছে ডেঙ্গু। কিন্তু ডেঙ্গু বসে থাকেনি। দুর্দশা বাড়িয়েছে রাজধানীজুড়ে। চলতি বছরের ৯ মাসে দুই দশকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হয়েছে। ২০১৯ সালে এক লাখের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়।

গেলো বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমলেও চলতি বছরের ৯ মাসে প্রায় ১৬ হাজার রোগী ভর্তি হয়েছে। জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ কম থাকলেও জুলাইয়ের শুরু থেকে প্রতিদিন গড়ে আড়াই শতাধিক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। যার অধিকাংশ রাজধানীর বাসিন্দা।

গত জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৫৯ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বেসরকারি হিসাবে সংখ্যাটা আরও কয়েকগুণ বেশি। সবচেয়ে বেশি ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে আগস্টে। ঢাকায় মৃত্যুবরণকৃত ৫৪ জনের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে মিটফোর্ড হাসপাতালে। চলতি বছরের শুরু থেকে সেখানে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনায় শিশুদের শনাক্ত-মৃত্যু কম হলেও ডেঙ্গুতে মৃত্যুহার কমেনি। ঢাকা শিশু হাসপাতাল ডেঙ্গু রোগীতে পূর্ণ। এ পর্যন্ত সেখানে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজধানীর হাসপাতালে করোনা রোগী কমে এলেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। গত ৯ মাসে রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে ১২ হাজার ৯৬৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এসব হাসপাতালেই মারা গেছে ৫৪ জন। বাকি পাঁচজন রাজধানীর বাইরে মারা গেছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, রাজধানীতে ডেঙ্গুর উৎস ধ্বংসে দুই সিটি কর্পোরেশনের গাফিলতি ও অবহেলার পরিণতিতে প্রতি বছর ডেঙ্গু মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। শুধু চিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু মোকাবিলা সম্ভব নয়। এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে জোর দিতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্যমতে, গতকাল নতুন করে ২৪১ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ১৮৪ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৭ জন। এ নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ১০৭ জনে। তার মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ৯০০ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ২০৭ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন্স অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ কামরুল কিবরিয়া জানান, চলতি বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৭০১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে আগস্টে সর্বোচ্চ সাত হাজার ৬৯৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। সেপ্টেম্বরের গত ১৯ দিনে পাঁচ হাজার ৩৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। জুলাইয়ে দুই হাজার ২৮৬ জন, জুনে ২৭২ জন, মে মাসে ৪৩ জন, এপ্রিলে তিনজন, মার্চে ১৩ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন এবং জানুয়ারিতে ৩২ জন রোগী ভর্তি হয়।

তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ১৪ হাজার ৫৩৫ জন রোগী। ডেঙ্গুতে এ সময়ে ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখনো দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে এক হাজার ১০৭ জন। তার মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে ৯০০ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ২০৭ জন।

এদিকে মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত জুলাই, আগস্ট ও চলতি মাসের ১৯ দিনে ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। তার মধ্যে আগস্টে সর্বোচ্চ ৩৪ জন, চলতি মাসে ১৩ জন এবং জুলাইয়ে বাকি ১২ জনের মৃত্যু হয়। শুধু রাজধানীতেই ১২ হাজার ৯৬৬ জন ডেঙ্গু  রোগী ভর্তি হয়েছে।

মারা গেছে ৫৪ জন। তার মধ্যে ৩১ জন বেসরকারি হাসপাতালে ও ২৩ জন সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে মারা গেছে।সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হয়েছে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে।

সেখানে এই মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৯ জন, স্কয়ার হাসপাতালে আটজন, ইবনে সিনা হাসপাতালে সাতজন, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে পাঁচজন, ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনজন, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুইজন করে চারজন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সেন্ট্রাল হাসপাতাল, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন করে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর শুধু ঢাকা শিশু হাসপাতালে ৬৩৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। তার মধ্যে ৫৮১ জন সুস্থ হলেও এখনো চিকিৎসা নিচ্ছে ৪৯ শিশু আর মৃত্যু হয়েছে আরও ৯ জনের।