Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

তৈরি হচ্ছে দক্ষ টেকনিশিয়ান

রফিকুল ইসলাম

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১, ০৬:২৫ পিএম


তৈরি হচ্ছে দক্ষ টেকনিশিয়ান

বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা রোধে তৎপর প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শক দপ্তর। এজন্য দক্ষ টেকনিশিয়ান তৈরি করতে সরাসরি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সার্টিফিকেট প্রদান করছেন দপ্তরটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, শিল্প বা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নির্মাণে অদক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে বিদ্যুতের সামগ্রিক কাজ করানোয় দেশে বৈদু্যুতিক দুর্ঘটনা দিন দিন বাড়ছেই।

ফলে দুর্ঘটনা রোধে সরকারের নেয়া নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নেও অগ্নিদুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। এসব বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা রোধে প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শক দপ্তর থেকে সার্টিফিকেটধারী টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক কার্যক্রম সম্পাদন করলে দুর্ঘটনা ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে আসবে। একই সাথে বিদ্যুৎ ব্যবহারে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের শতভাগ সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।

আধুনিক সভ্যতার জন্য বিদ্যুতের প্রয়োজন অপরিহার্য। তাই শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার। বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের একের পর এক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে একদিকে যেমন দেশে উন্নয়ন হচ্ছে অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। আর সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কঠোর পরিশ্রম করছেন। তারা নিজ নিজ মেধা ও শ্রম দিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে বিদ্যুতের ব্যবহার যেমন বাড়ছে ঠিক তেমনি বাড়ছে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে। প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শক দপ্তরের দাবি, শিল্প বা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নির্মাণে অদক্ষ টেকনিশিয়ানের ব্যবহার, নিম্নমানের বা নকল বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার, পুরোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও শিল্প বা ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সতর্কতার অভাবে বৈদু্যুতিক দুর্ঘটনা দিন দিন বাড়ছেই। এসব বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের পাশাপাশি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।

একই সাথে প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শক দপ্তর থেকে সার্টিফিকেটধারী টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক কার্যক্রম সম্পাদন করলে দুর্ঘটনা ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে আসবে। মূলত বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৈদ্যুতিক ঠিকাদারি লাইসেন্স ও সুপারভাইজারদের হাতে-কলমে বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সার্টিফিকেট প্রদান করছে প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শক দপ্তর।

সিনিয়র বিদ্যুৎ পরিদর্শক ও বিদ্যুৎ লাইসেন্সিং বোর্ডের সচিব মো. আতোয়ার রহমান মোল্লা আমার সংবাদকে বলেন, সরকারের টার্গেট শতভাগ বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা। বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়নে বিপুল দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। সেই দক্ষ জনশক্তি চিহ্নিত করতেই বিদ্যুৎ লাইনে বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আমাদের সার্টিফিকেটধারীদের দিয়ে যদি বিদ্যুতের কাজ করায় তাহলে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং বিদ্যুতে অগ্নিদুর্ঘটনা কম ঘটবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও বিদ্যুৎ লাইসেন্সিং বোর্ডের সদস্য আশুতোষ রায় আমার সংবাদকে বলেন, বিদ্যুৎ নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্তভাবে ব্যবহার করতে সবার আগে প্রয়োজন দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান। কোনো টেকনিশিয়ান যদি যোগ্য না হয় বা ইলেক্ট্রিসিটি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকে তাহলে বিদ্যুৎ ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। অদক্ষ টেকনিশিয়ানের কারণে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এ বিষয়ে আমাদের সবাইকে আরও সতর্ক ও সচেতন হতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা বিদ্যুৎ দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমাতে টেকনিশিয়ানদের সরাসরি পরীক্ষা গ্রহণ ও বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সার্টিফিকেট প্রদান করি। ফলে আমাদের সার্টিফিকেটপ্রাপ্তদের মাধ্যমে বিদ্যুতের কাজ করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকে।

বিদ্যুৎ লাইসেন্সিং বোর্ডের সদস্য লে. কর্নেল মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, একজন বৈদ্যুতিক টেকনিশিয়ান যদি দক্ষ ও যোগ্য না হয়, যদি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না হয়, সেখানে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভবনা অনেক বেশি এবং দুর্ঘটনা ঘটে।  বিদ্যুতের এসব দুর্ঘটনা রোধে যোগ্য ও দক্ষ টেকনিশিয়ান তৈরির দায়িত্বই হচ্ছে বিদ্যুৎ লাইসেন্স বোর্ডের। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা পুঁথিগত বিদ্যাকে পরীক্ষা করি না। একজন বৈদ্যুতিক টেকনিশিয়ান বাস্তবে কাজ জানে কি-না, বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ ও তার ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক ধারণা আছে কিনা— সে বিষয়গুলো সঠিক ও নিখুঁতভাবে যাচাই-বাছাই করে টেকনিশিয়ানদের লাইসেন্স দেয়া হয়।

বিদ্যুৎ লাইসেন্সিং বোর্ডের সদস্য ও গণপূর্তের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আশ্রাফুল হক বলেন, যে দেশ যত বেশি ইলেক্ট্রিসিটি ব্যবহার করবে সেই দেশ তত বেশি উন্নত হবে। তাই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো সরকার ইলেক্ট্রিসিটির ওপর ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইলেক্ট্রিসিটি ব্যবহারে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। সঠিক নিয়ম-নীতি মেনেই ব্যক্তি বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ইলেক্ট্রিসিটি ব্যবহার করতে হবে। নইলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বিদ্যুৎ লাইসেন্সিং বোর্ডের সদস্য এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স কৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাহিদ আল মাসুদ বলেন, বিদ্যুতের একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। আমরা সঠিকভাবে বিদ্যুতের ব্যবহার করতে পাইলেই সরকারের সেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো। এজন্য সবার আগে আমাদের দক্ষ লোকবল দরকার।

কিন্তু আমাদের দেশে দক্ষ লোকবল একেবারেই নেই। যারা আছে তারা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তাই আগে দক্ষ লোকবল তৈরি করতে হবে। যদি আমরা দক্ষ লোকবল তৈরি করতে পারি তাহলে রাজধানী থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিদ্যুৎ দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমে আসবে এবং সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনা রোধ ও দেশের উন্নতির জন্য লাইসেন্স বোর্ডের কার্যক্রমের কোনো বিকল্প নেই।

প্রধান বিদ্যুৎ পরিদর্শক ও বিদ্যুৎ লাইসেন্স বোর্ডের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের মো. আক্কাস আলী বলেন, আমরা ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ার, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার যাচাই-বাছাই করি। মূলত আমাদের টার্গেট যাচাই-বাছাইকৃতরা যেনো সঠিকভাবে বৈদ্যুতিক সেক্টরে কাজ করতে পারে এবং তাদের মাধ্যমে কাজ করলে বিদ্যুতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। তিনি আরও বলেন, বিগত দিন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আমাদের কার্যক্রমের ওপর দেশের মানুষের আস্থা অর্জন হয়েছে এবং চাহিদাও বেড়েছে।