Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

নয়া মুখে নয়া ক্ষমতা

সেপ্টেম্বর ২০, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


নয়া মুখে নয়া ক্ষমতা
  • রাজনৈতিক পুরোনো মুখের বিদায়ের কারণ বেড়েছে
  • আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে রাজনীতিতে নয়া মুখের আভাস
  • দুই দলের ভেতরে-বাইরে নারী মুখই বেশি আলোচনায়
  • কাউন্সিলে নারীতে চমক দেখাবে আওয়ামী লীগ
  • নেতৃত্বে দুই পুত্রবধূকেও মাঠে চাচ্ছে বিএনপি
  • নয়া মুখে ক্ষমতার স্বাদ পেতে চায় দেশের মানুষও

রাজ আসনে দু-একটি মুখ! গত কয়েক দশক ধরে। আদর্শের রাজনীতিতেও বিকল্প নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান ও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অবসানের পর লম্বা একটা সময় পার হয়েছে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ায়। এখন দুই নেত্রীরই বয়স হয়েছে। শেখ হাসিনা স্বেচ্ছায় দলে একাধিকবার নতুন নেতৃত্বের কথা বলেছেন। ছুটি চেয়েছেন।

অন্যদিকে বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থতায় স্বাভাবিকতা হারিয়েছেন। নেতৃত্ব নিয়ে রাজমাঠে আসার সম্ভাবনা অনেকটাই নেই। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে নতুন মুখ নিয়ে রাজনীতিপাড়ায় আলোচনা শুরু হয়েছে। অগ্রাধিকার পেতে পারেন নারী।

রাজনীতিতে চোখ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চাহিদা হচ্ছে নারীমুখ। নেতৃত্বের আসনটিকে সব সময় দুই-একটি দেশকে অগ্রাধিকার দিতে হয়। প্রধান দুই দলে দুই পুরুষের কথা আলোচনায় থাকলেও শেষ মুহূর্তে নারী মুখেই ফের দেশের নেতৃত্ব চলমান থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তা হতে পারে আগামী দ্বাদশ নির্বাচনেও। যেহেতু দীর্ঘ এই সময়ে দুই নেত্রীর বয়স বেড়েছে। চলমান ক্ষমাতাসীন দলেও সম্ভাবনাময় দুই নারী মুখ রয়েছে। যাদের কথা প্রায় সময়ই রাজনীতির মাঠে আসে।

আবার বিএনপির ঘরেও রয়েছে আলোচিত দুই নারী মুখ। তারাও সময় সময় নেতৃত্বের আসন নিয়ে আলোচনায় আসেন। তাই ভৌগোলিক পর্যালোচনায় ইঙ্গিত মেলে যে, আগামী নির্বাচনে হয়তো দেশের মানুষ নয়ামুখে নয়া ক্ষমতার স্বাদ পেতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে দু’দলেরই নির্ভরযোগ্য কেউ এখনই মুখ খুলছেন না। কিন্তু দলের ভেতরে-বাইরে নারী মুখের আলোচনা কেউ অস্বীকারও করছেন না।

প্রধান দুই দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে ক্ষমতার চেয়ার নেয়ার জন্য দুই দলেই জোর প্রচেষ্টা চলছে। নির্বাচন প্রস্তুতির বার্তা দেয়া হয়েছে। প্রার্থী চূড়ান্ত করা হচ্ছে। মাঠে থাকতে এখন থেকেই আঁকা হচ্ছে ছক। দীর্ঘ সময়ে নেতৃত্বের আসনে দেখে আসা মুখ আগামী নির্বাচনে নাও থাকতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা বলছেন তৃণমূল নেতারাও।

রাজধানীর মতিঝিল এলাকার ৮০-ঊর্ধ্ব আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস সবুর বলেন, ‘তবে এবার মনে হচ্ছে আগামী নির্বাচনে নেত্রী আর থাকবেন না। পরিবার থেকে কেউ আসতে পারে। সজিব ওয়াজেদ জয় রয়েছেন, কন্যা রয়েছেন, নেত্রীর বোনকে নিয়েও অনেকবার আলোচনা শুনেছি। তবে মনে হচ্ছে নারীদের থেকেই কেউ হবেন। একই আলোচনা বিএনপির ঘরেও।’

রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় জিয়াউর রহমানের সাথে থেকে বিএনপির আদর্শে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত স্থানীয় বাসিন্দা আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘দল থেকে এবার প্রায় একটা ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনের পর বিএনপি ক্ষমতায় এলেও প্রধানমন্ত্রী হবেন না। তারেক রহমানই হবেন সরকারপ্রধান। এটি প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েই নির্বাচনি ঘোষণা দেয়া হবে দলের পক্ষ থেকে। তবে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক অংশগুলোও দেখতে হবে। আমাদের বিপক্ষে দলে যদি নারী নেতৃত্বের ইঙ্গিত দেয়া হয় তাহলে বিএনপিকেও শেষ বেলায় সেই রাস্তায় পা দিতে হবে। দুই পুত্রবধূর কাউকে চিন্তা করতে হবে সরকারপ্রধানের জন্য। আন্তর্জাতিক চাহিদা বিএনপি সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকে, এমন কিছু হলে বিএনপিকে মানতেই হবে।

ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ এক নেতার ভাষ্য, পর্দার আড়ালে আমাদের দলীয় বৈঠকগুলোতে দলকে আগামীতেও ক্ষমতায় রাখতে চূড়ান্ত নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। তবে দলীয়প্রধান কে হবেন তা একমাত্র আমাদের নেত্রীই জানেন। যেহেতু দীর্ঘ সময় আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশ-বিদেশে সার্বক্ষণিক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হতে দেখা যাচ্ছে তারই কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। সব গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামেও পাশে দেখা যাচ্ছে তাকে। এ থেকে হয়তো আমরা একটা রাজনৈতিক ইঙ্গিত পেতে পারি, একটা ভাষ্য জানতে পারি, কিন্তু বেলা শেষের ফয়সালা নয়। অন্যদিকে বিএনপির ঘরে এ নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিকল্প হিসেবে তার পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমানকে ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হলেও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না।

দলের এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত তিনিই দলের প্রধান হিসেবে থাকবেন। চেয়ার কার কাছে থাকবে তাও তিনি দেখবেন। সংগঠনে তার শূন্যতা অনুভূত হলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে তারেক রহমান নেতৃত্ব দেবেন। লন্ডন থেকেও দলের নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব। আমরা এখন সেটিই দেখতে পাচ্ছি। সরাসরি তার সঙ্গে কথা বলতে পারছি। আর যদি তারেক রহমান মনে করেন যে, জোবায়দা রহমানকে নেতৃত্বে আনা দরকার, সেটা তিনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।’ আমরা দলীয় সিদ্ধান্তে অনুগত থাকবো।

এ নিয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘আগামী কাউন্সিলে নারী মুখ বাড়াতে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা আছে। আমরা সেই নির্দেশনায় কাজ করছি।

অন্যদিকে আগামী কাউন্সিলে নারী নেতৃত্বের চমক থাকার ইঙ্গিত দিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক আমার সংবাদকে বলেন, ‘অতীতের চেয়ে আওয়ামী লীগের আগামী কাউন্সিলে নারী নেতৃত্ব একটু বেশি উঠে আসবে বলে আশাবাদী। নারী নেতৃত্ব বাড়াতে আমাদের চেষ্টাও অব্যাহত আছে। কাউন্সিলে নারীর বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।’

জোবায়দা রহমানের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে সরাসরি জানতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান আমার সংবাদকে বলেন, ‘জোবায়দা রহমান দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। কাউন্সিলে আসা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’ নারী নেতৃত্বের চিন্তার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলেও জানান।