Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

জলাতঙ্করোধে সচেতনতা ও টিকায় জোর দিচ্ছে সরকার

মাহমুদুল হাসান

সেপ্টেম্বর ২১, ২০২১, ০৬:২০ পিএম


জলাতঙ্করোধে সচেতনতা ও টিকায় জোর দিচ্ছে সরকার
  • সরকারি তৎপরতায় ৬৮ শতাংশ কমেছে মৃত্যুহার
  • এসডিজিতে ২০৩০ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক নির্মূলের ঘোষণা
  • ইউরোপ-আমেরিকা মুক্ত আফ্রিকা-এশিয়ায় প্রকট
  • বছরে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হয়
  • বাংলাদেশের লক্ষ্য ২০২২ সালের মধ্যে জলাতঙ্কমুক্ত

জলাতঙ্ক ভয়ঙ্কর মরণব্যাধি। এ রোগে মৃত্যুর হার শতভাগ। জলাতঙ্ক মূলত কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এছাড়াও বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানরের কামড় বা আঁচড়ের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। বিশ্বে প্রতি ঘণ্টায় ছয়জনের প্রাণহানি ঘটে। সংখ্যাটা বছরে ৫৫ হাজারের বেশি। বাংলাদেশেও এ রোগের প্রকোপ নেহায়েত কম নয়। তবে গত ১০ বছরে রোগাক্রান্ত ও মৃত্যুহার কমেছে।

 স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রতিবছর প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষ কুকুর, বিড়াল এবং শিয়ালের কামড় বা আঁচড়ের শিকার হয়। যাদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু। এছাড়া প্রায় ২৫ হাজার গবাদিপশু এ রোগের শিকার হয়। ২০১০ সালের আগে প্রতিবছর দেশে দুই হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটতো। ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা এখন প্রায় জলাতঙ্কমুক্ত এবং সকল কুকুর বাধ্যতামূলকভাবে টিকাপ্রাপ্ত। দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যাপক হারে কুকুরকে টিকাদানের মাধ্যমে জলাতঙ্ক প্রায় নিয়ন্ত্রণে এনেছে। জলাতঙ্ক মূলত এখন আফ্রিকা ও এশিয়া, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়ার সমস্যা। বিশ্বের প্রায় ৯০ ভাগ জলাতঙ্কে মৃত্যু এখন দুটি মহাদেশে।

শুধু ভারতেই প্রায় ১৫-২০ হাজার লোক প্রতি বছর জলাতঙ্ক রোগের শিকার। পাকিস্তান, আফগানিস্তানেও এর প্রভাব বেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর জলাতঙ্কের টিকা আবিষ্কার করেছিলেন। ফলে রোগটি শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বকে জলাতঙ্কমুক্ত করার ঘোষণা রয়েছে। এজন্য একটি বৈশ্বিক কর্মকৌশল প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশও এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই। ২০১০ সালে স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ২০২২ সালের মধ্যে জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূলের জন্য কাজ করছে।

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বর্তমানে চলমান এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি কুকুরের কামড়ের আধুনিক ব্যবস্থাপনা চালু রেখে ব্যাপক হারে টিকাদান কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের সব কুকুরকে তিন রাউন্ড টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করা গেলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন দ্রুত সম্ভব হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বাংলাদেশেও ২০১০ সালের আগে প্রতি বছর প্রায় ২০০০ মানুষ জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতেন। ১০ বছর পর ২০১৯ সালে জলাতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে ২০০ জনের। রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে ২০০৯ সালে ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৮ সালে সেই হাসপাতালে ৬৮ শতাংশ মৃত্যু কমে ৪৯ জনে নেমেছে। গবাদিপশুর মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান অজানা হলেও একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এ রোগে মারা যেতো।

২০২২ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জলাতঙ্কমুক্ত করার লক্ষ্যে ২০১০ সাল থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্মূল কর্মসূচি বাস্তবায়ন চলছে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের সকল জেলায় মোট ৬৭টি জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।

এছাড়া অপরিকল্পিতভাবে কুকুর নিধন রোধের লক্ষ্যে পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়রগণের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। এছাড়া সরকার ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং বিভিন্ন এনজিওর সম্মিলিত উদ্যোগে বাংলাদেশ থেকে জলাতঙ্ক নির্মূলের লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

গত কয়েক বছরের গৃহীত কার্যক্রমের ধারাবাহিকতার ফলে বাংলাদেশে জলাতঙ্কের সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সারা দেশে ৬৭টি জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সারা দেশে ৬৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকার চাহিদা দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালে বিনামূল্যে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার রোগী বেশি টিকা পেয়েছে যা ২০১৮ সালে বৃদ্ধি পেয়ে দুই লাখ ৫৩ হাজার ৪০৯-এ উন্নীত হয়েছে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে সিডিসি কর্তৃক সারা দেশে প্রায় তিন লাখ ভায়াল ভ্যাকসিন দেশের বিভিন্ন জেলা সদর হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে প্রদান করা হয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীর আধুনিক ব্যবস্থাপনা এবং জলাতঙ্ক প্রতিরোধী টিকা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে। সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে প্রতিদিন পাঁচশ থেকে ছয়শ রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।

ঢাকার মহাখালীতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় জাতীয় জলাতঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল কেন্দ্র ‘সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল’। এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীকে সেবা প্রদান করা হয়। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে ২০১১ সাল থেকে সারা দেশে ব্যাপক হারে কুকুর টিকাদান কার্যক্রম চালু হয়েছে। এসব কার্যক্রমের পাশাপাশি জলাতঙ্ক রোগ সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম ও দিবস উদযাপনের মাধ্যমে অবহিতকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।