Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সফল তৎপরতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সফল তৎপরতা
  • হ্রাস পেয়েছে নৌ-দুর্ঘটনা
  • নিবন্ধনে আগ্রহী ফিটনেসবিহীন নৌযান মালিকরা   

ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সড়ক ও রেলপথের মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে নৌ খাত। অব্যবস্থাপনায় বন্ধ নৌপথ চালু ও নতুন পথ চালু হওয়ায় সারাদেশে নৌ-নেটওয়ার্ক গড়ে উঠতে শুরু করেছে। নতুন এবং বন্ধ থাকা নৌ-রুট চালুসহ বন্দরগুলো করা হয়েছে আধুনিকায়ন।

এরমধ্য দিয়ে এক সময়ের অর্থনৈতিক খাতের অন্যতম নিয়ামক আবারো চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বর্তমান সরকারের গত ১২ বছরে খাতটি শক্তিশালী করতে দক্ষ জনবল গঠনেও নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। নির্মাণাধীন রয়েছে কয়েকটি বন্দর। সরকারের সমন্বিত পরিকল্পনায় নৌপথে সাফল্য এসেছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নির্দেশনায় এগিয়ে চলা নৌ খাতে নতুন গতি এসেছে প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিটি প্রকল্পে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছেন তিনি। প্রতিমন্ত্রীর নিরলস প্রচেষ্টায় দ্রুত বিকশিত হচ্ছে নৌ সেক্টর।

তারই ধারাবাহিকতায় বাস্তবমুখী পদক্ষেপের ফলে দুর্বারগতিতে এগিয়ে চলছে এই খাত। অন্যান্য পরিবহনের তুলনায় সাশ্রয়ী ও পরিবেশ-বান্ধব নৌপথকে দুর্ঘটনামুক্ত করতে প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সার্বিক নির্দেশনায় নৌপরিবহন অধিদপ্তরের কার্যকর ভূমিকায় কমে এসেছে দুর্ঘটনা। ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে নৌ-দুর্ঘটনা।

নৌপথের ডিজাইনসহ অধিদপ্তরের গৃহীত অন্যসব পদক্ষেপের ফলেও দুর্ঘটনা কমে আসছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান চলতি বছরের নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহে বলেছিলেন, প্রতি বছর যখনই কোনো ছুটি আসে তখন দেখতাম একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটতো। সেগুলো একদম চলে গেছে বলবো না, তবে হ্রাস পেয়েছে বলেও জানান তিনি।

নৌ-দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা তথা নৌ-নিরাপত্তা নিশ্চিতের লক্ষ্যে নিবন্ধনবিহীন ও ফিটনেসবিহীন নৌযানের বিরুদ্ধে বর্তমানে কী কার্যক্রম চলছে অধিদপ্তরের— এমন প্রশ্নে পরিচালক মোহাম্মদ বদরুল হাসান লিটন আমার সংবাদকে বলেন, আমাদের সার্ভেয়াররা সার্ভে কাজে যুক্ত রয়েছেন। নিবন্ধন ও সার্ভে করার জন্য নানা রকম উদ্যোগ গ্রহণ করছেন তারা। পাশাপাশি নৌপরিবহন অধিদপ্তর থেকে সেবা নেয়ার প্রক্রিয়া যত সহজ করা যায়, অর্থাৎ আবেদনগুলো অনলাইনে, ডিজিটালাইজড করা, আবেদনকারীরা যেন কোনো রকম ভোগান্তির শিকার না হন, কম সময়ে যেন নিবন্ধন করতে পারেন— সে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে নৌপরিবহন অধিদপ্তর।

পাশাপাশি ফিশিং বোট নিবন্ধনের জন্যও কয়েকটি ক্যাম্পের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। উপকূলীয় বেশ কিছু এলাকায়ও ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ করে মহেশখালী, কুতুবদিয়াসহ বাঁশখালী এলাকায়ও বেশ কয়েকটি ক্যাম্প করা হয়েছে। আগামী মাসে পটুয়াখালী উপকূলীয় এলাকায়ও কিছু ক্যাম্প করা হবে।

এছাড়া নিবন্ধনবিহীন নৌযানকে আইনের আওতায় আনার জন্য ইন্সপেক্টরদের প্রতিনিয়ত নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। যারা অনিবন্ধিত নৌযান পরিচালনা করছেন, তাদের বিরুদ্ধেও মামলা করার নির্দেশনা রয়েছে মহাপরিচালকের। সে জন্য ইন্সপেক্টরদের দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন টার্গেট; সে মোতাবেক ভ্রাম্যমাণ আদালতে তারা মামলাও করছেন এবং ফিটনেসবিহীন যেসব নৌযান আছে, সেগুলোও নিবন্ধন করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

এরই মধ্যে সার্ভের পরিমাণ বেড়ে গেছে। আর নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ম্যাজিস্ট্রেট যারা আছেন, তারাও প্রতিনিয়ত অনিবন্ধিত নৌযানের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন। তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে। এর ফলে আইনকে ফাঁকি দিয়ে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই নৌযান মালিকদের। বরং এখন দেখা যাচ্ছে, নিবন্ধনেই আগ্রহী হচ্ছেন তারা। এছাড়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এসব বিষয়ে খুবই তৎপর। তিনি বিভিন্ন জায়গায় সরেজমিন ঘুরে দেখছেন কোথা নিবন্ধন ও ফিটনেসবিহীন নৌযানের সংখ্যা বেশি। আর সেখানেই তিনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিচ্ছেন।

সম্প্রতি নৌ-নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে নিবন্ধনবিহীন নৌযানকে আইনের আওতায় আনতে গৃহীত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চাঁদপুর শহরের লঞ্চঘাট সংলগ্ন মেঘনা নদীতে বালুবাহীসহ ৪১টি অনিবন্ধিত নৌযানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। যে অভিযানের শুরু হয় গত ৩ জুন রাজধানীর পূর্বাচলের কাঞ্চন ব্রিজ এলাকা থেকে।

এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ বদরুল হাসান লিটন। তারই ধারাবাহিকতায় চাঁদপুরের অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ (আইএসও) ১৯৭৬-এর বিভিন্ন ধারা ও সংশ্লিষ্ট বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ৪১টি নৌযানের কাছ থেকে জরিমানা বাবদ ১৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। আদায় করা অর্থ চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া হয়। ভবিষ্যতে অবৈধ ও আইন অমান্য করে কোনো ধরনের নৌযান না চালানোর জন্য মালিক, মাস্টার ও ড্রাইভারদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ অভিযানের ধারাবাহিকতার বিষয়ে জানতে চাইলে আমার সংবাদকে তিনি বলেন, অভিযান নিয়মিতই হচ্ছে। চাঁদপুরের পর আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি ডেমরা, ফতুল্লায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ আরও অনেক জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেছি। যদিও করোনার কারণে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ছিল। সামনে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ আরও অনেক জায়গায় আমাদের অভিযানগুলো চলবে। খুলনা, মোংলাসহ বিভিন্ন এলাকায়ও পর্যায়ক্রমে চলবে।

তিনি বলেন, এসব কার্যক্রম আমাদের চলমান আছে। নৌপরিবহন অধিদপ্তরে বেশ কজন ম্যাজিস্ট্রেট জয়েন করেছেন। তারাও শিগগিরই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করবেন।

জনবলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংকট আছে। তবে নতুন নিয়োগবিধি করা হচ্ছে। নিয়োগবিধির মাধ্যমে জনবল সমস্যা সমাধানের পর আমরা আরও ভালোভাবে পদক্ষেপ নিতে পারবো এবং দেশব্যাপী আরও ভালোভাবে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে পারবো।