Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪,

রক্তাক্ত ভারতের আদালত

সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১, ০৬:১০ পিএম


রক্তাক্ত ভারতের আদালত
  • বিচারকের সামনে অস্ত্রের লড়াইয়ে আসামিসহ ঝরলো তিনজনের প্রাণ
  • বাংলাদেশসহ চিন্তার ভাঁজ পড়ছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে  
  • এ ঘটনায় ভারতে এখন নতুন রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি হতে পারে  

বিচারকের সামনে ভারতের আদালতে দুই গ্রুপের যুদ্ধ। চললো গুলি। রক্তে ভিজলো বিচার কার্যালয়ের কক্ষ। এ যেনো সিনেমা! আইনজীবী সেজে বিপক্ষের লোকেরা অস্ত্র নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে বিচারাধীন ব্যক্তিকে গুলির পর গুলি। রক্তাক্ত হয়ে মুহূর্তেই মেঝেতে পড়ে গ্যাংস্টার জিতেন্দ্র গোগীর মৃত্যু।  

তাৎক্ষণিক পুলিশের গুলিতে মারা গেলো হামলাকারী দুই দুষ্কৃতকারীও। লাশ পড়লো তিনজনের। আহত হয়েছেন আরো বেশ কয়েকজন। এটি গতকাল দিল্লির রোহিনি আদালতের ঘটনা। আদালতের ভেতরে কীভাবে আইনজীবী সেজে ঢুকে পড়লো অস্ত্রধারীরা তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন। অভিযোগের তীর এখন পুলিশের দিকে। এ নিয়ে বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। চিন্তার ভাঁজ পড়ছে।

এ ঘটনায় নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, বিচারকের সামনে ভারতের আদালতে রক্ত ঝরার ঘটনা ঐতিহ্যের জন্য বড় আঘাত। এটি ভারতের মতো দেশে খুবই বিরল। দেশের নিরাপত্তার ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়েছে। প্রকাশ পেয়েছে নিরাপত্তা জোরদারের দুর্বলতা। গণতন্ত্রের ওপরও আঘাত। কারণ ভারতীয় উপমহাদেশের গণতন্ত্র অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে।

এ ঘটনার কারণে ভারতের ভেতর এখন নতুন রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি হতে পারে। এটি এখন ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, দুর্বৃত্তরা এসব ঘটনা দেখে উৎসাহী হয়। এ জাতীয় ঘটনা যদি ভারতে পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে তখন অবশ্যই বাংলাদেশসহ আশপাশের সবগুলো দেশ নিরাপত্তা হুমকিতে পড়তে পারে। বাংলাদেশের আদালত প্রাঙ্গণকে আরো বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে কুখ্যাত দুষ্কৃতকারী গোগীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। গত এপ্রিলে তাকে গ্রেপ্তার করে দিল্লি পুলিশের বিশেষ বিভাগ। সে রকম এক মামলায় গতকাল আদালতে আনা হয়েছিল গোগীকে। তখনই বিরোধী গোষ্ঠীর দুষ্কৃতকারীরা তার ওপর গুলি চালিয়েছে। দুষ্কৃতকারীরা আইনজীবীর পোশাক পরেই আদালত চত্বরে ঢুকেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। গোগীর ওপর হামলার ঘটনায় ‘টিল্লু’ দলের দুষ্কৃতকারীরা জড়িত বলে সন্দেহ পুলিশের। দুষ্কৃতকারীদের গুলি চালনার মধ্যেই পাল্টা গুলি চালিয়েছে পুলিশও।

সেই গুলিতে দুষ্কৃতকারী দলের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। দিল্লির ওই দুই গ্যাংয়ের মধ্যে বিবাদ দীর্ঘদিনের। গত কয়েক বছরের তাদের মধ্যে লড়াইয়ের জেরে ২৫ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ২০১০ সালে বাবার মৃত্যুর পর অপরাধ জগতে প্রবেশ করে জিতেন্দ্র গোগী।

২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে প্রবীণ নামে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করে গোগী। সে বছরই অক্টোবরে দিল্লির শ্রদ্ধানন্দ কলেজের নির্বাচনে গোগী ও তার সহযোগীরা সন্দীপ এবং রবিন্দর নামে দুই যুবককে হত্যা করে। তখন তাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এরপর টাকা রোজগারের জন্য নতুন গ্যাং তৈরি করে সে।

সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবারের ওই ঘটনায় আদালত চত্বরের মধ্যে ৩৫ থেকে ৪০ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়েছে। সেখানে কর্মরত এক মহিলা আইনজীবীও আহত হয়েছেন।

রোহিনির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার প্রণব তয়াল বলেছেন, ‘আইনজীবীর পোশাক পরে আততায়ীরা আদালতের মধ্যেই গোগীর ওপর গুলি চালায়। তারপর পুলিশও পাল্টা গুলি চালিয়েছে।’

দিল্লির পুলিশ কমিশনার রাকেশ আস্থানা বলেছেন, ‘রোহিনি আলাদতে গ্যাংস্টার জিতেন্দ্র গোগীর ওপর গুলি চালায় দুই দুষ্কৃতকারী। পুলিশের পাল্টা গুলিতে দুই আততায়ীরও মৃত্যু হয়েছে।’

এদিকে এ ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মাদ আলী শিকদার আমার সংবাদ বলেছেন, ‘ভারতে যা ঘটেছে এটি অত্যন্ত ভয়াবহ ঘটনা। বিচারকের সামনে আদালত রক্তাক্ত হলো। তিনজন খুন হলো। এটি ভারতের আদালতে ঐতিহ্যের জন্য বড় আঘাত। গণতন্ত্রের ওপরও আঘাত। কারণ ভারতীয় উপমহাদেশের গণতন্ত্র অভিভাবকের ভূমিকা পালন করে ভারত। যে ঘটনা ঘটেছে তার মানে এটি রাষ্ট্রের ওপর আঘাত। দেশের অস্তিত্বের ওপরও আঘাত বলা যায়। এটি এখন ভারতসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কারণ, দুর্বৃত্তরা এসব ঘটনা দেখে উৎসাহী হতে পারে। কারণ অতীতে আমরা এমন অনেক ঘটনাই দেখেছি। সেটি আগে অন্য কোথাও ঘটেছে তার সঙ্গে সঙ্গে আরও কয়েকটি ঘটনার জন্ম হয়েছে। যেমন আমরা ফিল্মে দেখি কিংবা নাটকে কোনো ঘটনা ঘটলে উৎসাহ নিয়ে আরো ঘটনার জন্ম হয়।’  

মোহাম্মাদ আলী শিকদার আরো বলেন, ‘তাই বলবো, যেখানে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে অস্ত্রের রক্ত ঝরার ঘটনা ঘটলো এটি এখন দেশের রাজনীতির ইস্যুও হতে পারে। এ জাতীয় ঘটনা যদি অন্য দেশে ঘটতো তাহলে হয়তো বলা যেতো সেখানে গণতন্ত্রের অভাব রয়েছে। ভারতের মতো দেশে এমন ঘটনা ঘটায় এখন দায় অস্বীকারও করা যাচ্ছে না। ভারতের মতো গণতন্ত্রের নেতৃত্ব দেয়া দেশে এমন হওয়ায় এখন আমাদের বাংলাদেশের আদালত প্রাঙ্গণকে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে। আরো বেশি নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। কারণ, দুর্বৃত্তরা এসব কিছু দেখে অনুসরণ করতে পারে। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। আদালত প্রাঙ্গণকেন্দ্রিক রাষ্ট্র এবং সরকারকে আরো বেশি নজর দিতে হবে। যাতে ভারতের মতো কোনো অঘটন না ঘটে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন আমার সংবাদকে বলেছেন, ‘ভারতের আদালতে বিচারকের সামনে যে সন্ত্রাসী কার্যক্রম সংঘটিত হলো, আদালত প্রাঙ্গণ রক্তাক্ত হলো— এটি ভারতের মতো দেশে খুবই বিরল। দেশের নিরাপত্তার ধারাবাহিকতা নষ্ট করেছে। প্রকাশ পেয়েছে নিরাপত্তার দুর্বলতা। এটি খুব তাৎক্ষণিক ঘটনা হলেও আরো বেশি সতর্কতার বিষয় ছিলো। এ ঘটনার কারণে ভারতের ভেতর এখন নতুন রাজনৈতিক ইস্যু তৈরি হতে পারে। রাজনীতির অংশ হতে পারে। তবে এ ঘটনার সাথে কারা জড়িত তা অবশ্যই ভারত সরকার নিশ্চিত করবে। তবে এ জাতীয় ঘটনার ফলে পার্শ্ববর্তী দেশে প্রভাব পড়তে পারে বলে আমি মনে করছি না।
 
তবে এ জাতীয় ঘটনা যদি ভারতে পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকে তখন অবশ্যই বাংলাদেশসহ আশপাশের সবগুলো দেশে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে। তাই বলবো, আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। যদিও আমাদের দেশে সবসময় আদালতপ্রাঙ্গণের দিকে সরকারের সুনজর থাকে। নিরাপত্তা জোরদার থাকে। তবুও এখন বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। যেহেতু আশঙ্কার সূত্র রয়েছে। তা করতে হবে আমাদের দেশের প্রয়োজনেই।’