Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ইউপিতে বিতর্কিতদের নৌকা নয়

রফিকুল ইসলাম

সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১, ০৭:৫৫ পিএম


ইউপিতে বিতর্কিতদের নৌকা নয়

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘সৃষ্টিলগ্ন থেকে আওয়ামী লীগ একটি নির্বাচনমুখী রাজনৈতিক দল। জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন এলেই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হয়।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে যোগ্য, ত্যাগী, পরীক্ষিত ও জনপ্রিয় নেতাদের নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত করা, দলীয় কোন্দল নিরসন ও এমপিদের প্রভাবমুক্ত রেখে দলকে সুসংগঠিত করা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যার নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য দলের প্রতিটি দায়িত্বশীল নেতাই কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি তার নিজ বাসায় ‘দৈনিক আমার সংবাদ’-এর সাথে একান্ত আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রশ্ন : ইউপি নির্বাচনে নৌকার মনোনয়নে প্রার্থীদের কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে?
বিএম মোজাম্মেল হক : আওয়ামী লীগ সব থেকে প্রাচীন এবং সব থেকে বেশি আধুনিক রাজনৈতিক দল। এ দলের নেতাকর্মীর সংখ্যাও অনেক বেশি। জাতীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন এলেই প্রার্থী হতে এ দলের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সবসময় যোগ্য, ত্যাগী, পরীক্ষিত ও জনপ্রিয় নেতাদের নৌকার মনোনয়ন দেয় এবং নৌকার মনোনীত প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে। যা দেশের অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর মাঝে নেই। আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনপ্রিয় ও পরিচ্ছন্ন নেতাদের মনোনয়ন দেয়া হবে। সাংগঠনিক রিপোর্টে যার অবস্থান ভালো থাকবে, তাকে নৌকার মনোনয়ন দেয়া হবে। কিন্তু বিতর্কিত, দুর্নীতিবাজ, চাঁদাবাজ, হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী ও স্বাধীনতাবিরোধীদের কোনোভাবেই মনোনয়ন দেয়া হবে না।

প্রশ্ন : ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনেক এমপি নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেন, তাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান কী?
বিএম মোজাম্মেল হক : এমপিরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। তারা সবসময় দেশ ও দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করেন। মানুষের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের অনেক এমপি জনসেবা রেখে আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তারা নিজ নিজ প্রভাববলয়কে শক্তিশালী করার জন্য ক্ষমতার অপব্যবহার করেন এবং নিজ পরিবার ও স্বজনদের নৌকার মনোনয়ন নিয়ে দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। ওই সব এমপি আওয়ামী লীগের আদর্শ ও নীতিতে বিশ্বাস করেন না। এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের অবস্থান পরিষ্কার। কেউ নৌকাবিরোধী কাজ করলেই আগামীতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকতে ও জনপ্রতিনিধি হতে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে প্রতিযোগিতা ও  প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে। কিন্তু যখন প্রতিযোগিতার নামে প্রতিহিংসা তৈরি হয়, তখন সমস্যা সৃষ্টি হয়। দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি হয়। আর এর নৈপথ্যে অনেক এমপি সরাসরি যুক্ত থাকেন। আশা করি, এমপিরা তাদের এমন কার্যক্রম থেকে বেরিয়ে আসবেন। এমপিদের মনে রাখতে হবে, তাদের কার্যক্রম যেনো আওয়ামী লীগের জন্য বিষফোঁড়া হয়ে না ওঠে।  

প্রশ্ন : বিএনপিবিহীন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য কতটুকু চ্যালেঞ্জ হবে?
বিএম মোজাম্মেল হক : বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না— এটা কিন্তু ঠিক নয়। তারা দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও তাদের দলীয় নেতাকর্মীরা বসে নেই। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা রাজনৈতিক কৌশল। তিনি আরও বলেন, বিএনপি একটি জনবিচ্ছিন্ন রাজনৈতিক দল। যে দল নির্বাচনে ব্যর্থ, রাজনীতির মাঠে ব্যর্থ, আন্দোলন-সংগ্রামে ব্যর্থ। বারবার ব্যর্থ হয়ে বিএনপি সরকারবিরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী, জনগণবিরোধী ও দেশের উন্নয়নবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নামে আগুন-সন্ত্রাস ও মানুষ পুড়িয়েছে। মেজর জিয়া যেমন— জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত হয়ে অবৈধভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছিলেন এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, নির্যাতন, নিপীড়ন করেছেন। সদ্য স্বাধীন দেশের গণতন্ত্রকে হত্যার মধ্যদিয়ে জিয়া মানুষের ভাত ও ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন। তার দেখানো পথেই তারেক রহমান লুটপাট ও খুনের রাজনীতি করেছে। আজ সেও ফেরারি আসামি। বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের এমন কর্মকাণ্ডের কারণে তারা আজ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন।    

প্রশ্ন : আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে আপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন শেষ হবে কি-না?
বিএম মোজাম্মেল হক : খুলনা বিভাগে আওয়ামী লীগের মোট ৯১টি সাংগঠনিক উপজেলা রয়েছে। এর মধ্যে ৬৪টি উপজেলার সম্মেলন শেষ। বাকি ২৭টি উপজেলা ও চারটি জেলার সম্মেলনের জন্য সব প্রস্তুতি শেষের দিকে। স্থানীয় নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। আশা করি চলতি বছর সবগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন শেষ হয়ে যাবে এবং বিতর্কমুক্ত নেতৃত্ব উঠে আসবে।

প্রশ্ন : তৃণমূল আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, সৃষ্ট দ্বন্দ্ব নিরসনে দৃষ্টি দিচ্ছেন কি-না?
বিএম মোজাম্মেল হক : তৃণমূলে সৃষ্ট কোন্দল নিরসনের মধ্য দিয়ে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করা হবে। এ জন্য আমাদের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। নেত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি।